Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ডুয়ার্সে উন্মত্ত শ্রমিকদের হাতে চা বাগান মালিক খুন

রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রে জঙ্গি আন্দোলনের ধারা অব্যাহত! শনিবার বিকেলে বাগানের মধ্যেই খুন হয়ে গেলেন চা বাগানের মালিক। অভিযোগের তির ওই বাগানেরই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। বকেয়া মজুরি আদায় করতে এসে ডুয়ার্সের সোনালি চা বাগানের শ্রমিকদের একাংশ এই ঘটনা ঘটায় বলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

কিশোর সাহা
বাগরাকোট শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ২২:০৫
Share: Save:

রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রে জঙ্গি আন্দোলনের ধারা অব্যাহত!

শনিবার বিকেলে বাগানের মধ্যেই খুন হয়ে গেলেন চা বাগানের মালিক। অভিযোগের তির ওই বাগানেরই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। বকেয়া মজুরি আদায় করতে এসে ডুয়ার্সের সোনালি চা বাগানের শ্রমিকদের একাংশ এই ঘটনা ঘটায় বলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। শ্রমিকদের হাতে নিহত মধ্য চল্লিশের রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালা কলকাতার আলিপুরের বাসিন্দা।

৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের বাগরাকোট মোড় থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার ভিতরের এই বাগানটি রুগ্ণ বলেই পরিচিত। এক সময়ের পরিত্যক্ত বাগানটি কয়েক বছর আগে পরিচালনার ভার নিয়েছিলেন রাজেশবাবু। ডুয়ার্সের অধিকাংশ বাগানে শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি দেওয়া হলেও এই বাগানটিতে মাসিক মজুরি দেওয়া হত। ২১৭ হেক্টরের বাগানটিতে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩৭০, অস্থায়ী শ্রমিকও রয়েছেন প্রায় ২০০ জন।

বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৫০ জন শ্রমিকের দু’মাসের মজুরি বকেয়া ছিল। ১৫ দিন অন্তর যে মজুরি দেওয়ার কথা, তা দিতে মাসখানেক সময় লেগে যাচ্ছিল কর্তৃপক্ষের। বকেয়া ছিল রেশনও। এ ছাড়াও পিএফ, গ্র্যাচুইটিও বাকি রয়েছে বলে দাবি। বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে দিন কয়েক আগে থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন শ্রমিকেরা। সমস্যা সমাধানের জন্য বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালা নিজেই কলকাতা থেকে এসে শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। হিসেব-নিকেশের কাজে সপ্তাহখানেক ধরে বাগানেই ছিলেন তিনি।

এ দিন এক মাসের মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার কথা ছিল বলে জানা গিয়েছে। যদিও, এ দিন দুপুরে বাগান কর্তৃপক্ষ মজুরি দিতে না পারার কথা জানিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তার পরেই বাগানে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়। একদল শ্রমিক সরাসরি রাজেশবাবুর কাছে গিয়ে মজুরি দাবি করেন। শুরু হয় তর্কাতর্কি। রাজেশবাবু তাঁদের রবিবার বকেয়া মিটিয়ে দেবেন বলে জানান। তবে তাতে ক্ষোভ কমেনি। বচসা চলার সময়েই কয়েক জন শ্রমিক লাঠি নিয়ে মালিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন রাজেশবাবু। সেই সময় রাজেশবাবুর সঙ্গে ছিলেন বাগানের ম্যানেজার অঞ্জনকুমার নিধি ও এক চিকিৎসক। তাঁরা পালিয়ে যান।

বিক্ষোভরত শ্রমিকেরা মারতে মারতে রাজেশবাবুকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে চা-গাছের ঝোপে টেনে নিয়ে যায়। মিনিট পনেরো ধরে চলে যথেচ্ছ কিল, চড়, ঘুষি। পাথর, খুকরি দিয়েও তাঁকে আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ। রাজেশবাবু নেতিয়ে পড়লে অভিযুক্তেরা চলে যায়। বাগানেই রাজেশবাবু মারা যান। খবর পেয়ে ঘণ্টাখানেক পরে ঘটনাস্থলে এসে ম্যানেজার ও চিকিৎসককে উদ্ধার করে মালবাজারের পুলিশ। বাগান তখন শ্রমিকশূন্য। মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে আনা হলে রাজেশবাবুকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

বন্ধ হয়ে যাওয়া সোনালি চা বাগানকে বাম আমলে রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। রাজ্যে চা উন্নয়ন পর্ষদ বাগানটির পরিচালনার ভার নেয়। সে সময় বাগানটি মুনাফাও করে। বাগানে অবশ্য কোনও কারখানা নেই। পরে কলকাতা হাইকোর্টের মাধ্যমে বাগানটি বেসরকারি সংস্থার হাতে যায়। বেশ কয়েক বার মালিকানা বদলের পরে বর্তমান মালিকের হাতে পরিচালন ভার যায় সোনালির। ওই বাগানে তৃণমূল প্রভাবিত তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এবং সিটুর শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। তবে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন শক্তিশালী বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।

রাতে জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বাগানে যান। বাগানের ম্যানেজার অঞ্জনকুমার নিধির সঙ্গে কথা বলেন জেলা পুলিশকর্তারা। অঞ্জনবাবু বলেন, “কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলতে পারব না। গত সপ্তাহ থেকে মালিক বাগানেই ছিলেন। বকেয়াও মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tea garden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE