নিহত হোমগার্ড। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হল এক হোমগার্ডের। রবিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল থানার সামনের এই ঘটনায় মারা গিয়েছেন প্রণব সোরেন (২৬) নামের এক হোমগার্ড। তাঁর বাড়ি ওই জেলারই জামবনি থানার হাতিকাদুয়া গ্রামে। দুষ্কৃতীদের মারে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুই পুলিশকর্মী। তাঁদের এক জনকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য জনকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে কলকাতায়। দুষ্কৃতীদের মারে সামান্য আহত হয়েছেন ঘাটাল থানার ওসি সুদীপ ঘোষাল।
ঠিক কী হয়েছিল ওই দিন?
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার মধ্য রাতে ঘাটাল থানার ওসি-র নেতৃত্বে ছ’জন পুলিশকর্মী টহল দিতে বেরিয়েছিলেন। সেই সময় থানা থেকে আড়াইশো মিটার দূরে আলমগঞ্জের কাছে ৭-৮ জনকে একসঙ্গে হেঁটে আসতে দেখেন তাঁরা। গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরা ওই যুবকদের প্রত্যেকের কাঁধে ব্যাগ এবং হাতে ৭-৮ ফুটের লম্বা বাঁশ ছিল। অত রাতে এ রকম ভাবে তাদের যেতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দাঁড় করানো হয় দলটিকে। কিন্তু দাঁড় করানো মাত্রই যে তাঁদের উপর আচমকা আঘাত হানবে তারা, সে কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি পুলিশকর্মীরা। এমনকী, পুলিশ পরিচয় দেওয়ার পরেও নিস্তার মেলেনি ওসি-সহ সাত জন পুলিশকর্মীর। বাঁশ দিয়ে তাঁদের বেধড়ক পেটানো হয়। এর পরে দুষ্কৃতীরা দু’তিনটি দলে ভাগ হয়ে যায়। ফলে বেকায়দায় পড়েন পুলিশকর্মীরা। এরই মধ্যে দুষ্কৃতীদের মধ্যে এক জন পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তখনই গুলিবিদ্ধ হন ওই হোমগার্ড। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। খণ্ডযুদ্ধ চলাকালীন এক জন পুলিশকর্মী কোনও রকমে পালিয়ে গিয়ে থানায় খবর দেন। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তত ক্ষণে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের খোঁজে গোটা এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু সোমবার দুপুর পর্যন্ত তাদের কোনও হদিশ মেলেনি। পুলিশের অনুমান, ঘাটাল শহরের পাহাড়িবাগানের চাউলি-সিংহপুরের দিকে পালিয়েছে ওই দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার পর সতর্কবার্তা পাঠানো হয় চন্দ্রকোণা এবং দাসপুর থানাতে।
ঘটনাস্থলে পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরাও যান। জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ মৃত পুলিশকর্মীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের এক জনকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, দুষ্কৃতীরা ডাকাতির উদ্দেশ্যেই এসেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে। তাদের হাতে বাঁশ কেন ছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশের উপর এ রকম হামলায় ঘাটাল শহরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই ঘটনায় কোনও মাও-যোগ আছে কি না? কেন না, সম্প্রতি বেলপাহাড়িতে মাওবাদী পোস্টার পড়ে। অন্য দিকে, পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এলাকায় মাওবাদীদের আনাগোনা বেড়েছে। ফের মাও-নাশকতার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই জঙ্গলমহলে ট্রেন চলাচলের উপরও সতর্কতা জারি করেছে রেল। ঘাটালের এই ঘটনায় মাওবাদীদের কোনও হাত আছে কি না সেই বিষয়টাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy