Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ফিলিপিন্সকে হতাশায় ডুবিয়ে জিতলেন মেওয়েদার

গোটা ফিলিপিন্সকে হতাশায় ডুবিয়ে ‘শতাব্দীর সেরা লড়াই’ জিতে নিলেন মার্কিন ওয়েল্টারওয়েট মহাতারকা ফ্লয়েড মেওয়েদার। ম্যানি প্যাকিয়াও শিবিরের তীব্র ক্ষোভ এবং দর্শকদের পয়সা উসুল না হওয়ার আক্ষেপের মধ্যে বারো রাউন্ড লড়াইয়ের শেষে তিন বিচারকই পয়েন্টের বিচারে জয়ী ঘোষণা করেন মেওয়েদারকে। দু’জন পয়েন্ট ভাগ করেন ১১৬-১১২। তৃতীয় বিচারকের রায় মেওয়েদারের পক্ষে ১১৮-১১০।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ২০:৫৭
Share: Save:

গোটা ফিলিপিন্সকে হতাশায় ডুবিয়ে ‘শতাব্দীর সেরা লড়াই’ জিতে নিলেন মার্কিন ওয়েল্টারওয়েট মহাতারকা ফ্লয়েড মেওয়েদার।

ম্যানি প্যাকিয়াও শিবিরের তীব্র ক্ষোভ এবং দর্শকদের পয়সা উসুল না হওয়ার আক্ষেপের মধ্যে বারো রাউন্ড লড়াইয়ের শেষে তিন বিচারকই পয়েন্টের বিচারে জয়ী ঘোষণা করেন মেওয়েদারকে। দু’জন পয়েন্ট ভাগ করেন ১১৬-১১২। তৃতীয় বিচারকের রায় মেওয়েদারের পক্ষে ১১৮-১১০।

ফিলিপিনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এই নিয়ে কেরিয়ারে ষষ্ঠ বার হারলেন। মেওয়েদারের জয়ের রেকর্ড অক্ষত থাকল রিং-থেকে ৪৮ তম বার হাসি মুখে ফিরতে পেরে। প্যাকিয়াওয়ের ওয়েল্টারওয়েট বেল্ট কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি এই লড়াই থেকে কুড়ি কোটি মার্কিন ডলারও জিতে ফিরলেন যিনি। আটত্রিশের মেওয়েদার জেতার পর ঘোষণা করেন, এর পর সেপ্টেম্বরে আর মাত্র একটা লড়াইয়ে নামবেন তিনি। সেটাই হবে শোটাইম স্পোর্টস-এর সঙ্গে তাঁর ছয় লড়াইয়ের চুক্তির শেষ লড়াই। তার পরেই চলে যাবেন অবসরের সরণি ধরে।

এ দিকে, রিং-এর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় রিং-এর বাইরের অন্য লড়াই। মেওয়েদার যখন ম্যাচের শেষে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, তখন প্যাকিয়াও-পন্থীরা প্রবল শোরগোল তুলে চ্যাম্পিয়নের কথাগুলো কোলাহলে ঢেকে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যান। বক্তব্য, আসল বিজয়ী প্যাকিয়াও-ই। ছত্রিশ বছরের ফিলিপিনো মহাতারকা নিজেও দাবি করেছেন, ‘‘আমি তো ভেবেছিলাম রিং-এর যুদ্ধটা আমিই জিতেছি। ও বড্ড বেশি নড়ে বেড়াচ্ছিল। আর আমি লড়তে চাইছিলাম। আক্রমণ তো সব আমিই করে গেলাম! মনে হয়েছিল আমিই এগিয়ে আছি। যে কারণে এগারো আর বারো রাউন্ডে আক্রমণের ধার আর বাড়াইনি। তাই ফল দেখে হতবাক হয়ে যাই!’’

পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন, ডান কাঁধে চোট আছে। বলেন, ‘‘তৃতীয় রাউন্ডে থেকেই কাঁধে ব্যথা অনুভব করছিলাম। তাই যে ভাবে লড়ার পরিকল্পনা ছিল, সেটা পারিনি। বেশ কয়েকটা লেফ্‌ট-রাইট কম্বিনেশন ব্যবহারই করা যায়নি।’’ প্যাকিয়াওয়ের প্রোমোটার বব আরুমও বলেন, ‘‘আপনারা তো লড়াইটা দেখেছেন, পরে যদি আবার দেখেন, বুঝবেন ও ডান হাতে খুব কম ঘুষি মেরেছে। সেটা কাঁধের পেশি ছেঁড়া আছে বলেই।’’ লড়াইয়ের আগে এমআরআইতেই নাকি চোট ধরা পড়েছিল। তবে হারলেও শোনা যাচ্ছে কমকরে ১০ কোটি মার্কিন ডলার বাড়ি নিয়ে ফিরবেন প্যাকিয়াও।

হিসাব বলছে, মেওয়েদার ৪৩৫ বার ঘুষি চালিয়ে লাগাতে পেরেছেন ১৪৮টি। প্যাকিয়াও ৪২৯ বার ঘুষি চালিয়ে লাগান মাত্র ৮১টি। কিন্তু দেশের সব কাজ শিকেয় তুলে এই লড়াইয়ের জন্য টেলিভিশনের সামনে জমায়েত হওয়া আপামর ফিলিপিন্সবাসী এই হিসাব মানতে নারাজ!

তাঁদের জাতীয় নায়ক এবং অনেকের মতেই দেশের ভাবী প্রেসিডেন্টের এই পরাজয় তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। হতাশ ফিলিপিন্সের সাফ কথা, বিচারকদের এই রায় অন্যায়। প্যাকিয়াও অবিচারের শিকার হয়েছেন। ম্যানিলার রাজপথে টাঙানো জায়েন্ট স্ক্রিনের সামনে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত থেকে শুরু করে বন্দর শহর জাম্বোয়াঙ্গার সেনা ব্যারাক— সর্বত্র মেওয়েদারকে বিজয়ী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বিদ্রুপাত্মক ধ্বনি।

বাকি বিশ্ব অবশ্য অন্য প্রতিবাদে সরব। রব উঠেছে, সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে প্রচারিত মুষ্টিযুদ্ধ, যাকে কেন্দ্র করে নাকি ইতিমধ্যেই কম করে ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়ে গিয়েছে, সেটা মন ভরাতে পারল না। বলা হচ্ছে, ব্যাপারটা অনেকটা দীপাবলির রাত বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার মতোই হল। শতাব্দীর সেরা তো নয়ই, লড়াইটা তার ধারেপাশেও যায়নি! মেওয়েদার বনাম প্যাকিয়াও প্রচারের আলো পেল ঠিকই। কিন্তু উত্তেজনা আর নাটকীয়তায় টাইসন বনাম হোলিফিল্ডকে টেক্কা দিতে পারল কই?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE