আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ চলছে। ব্যবহার করা হয়েছে স্কাই ল্যাডার।
ফের শহরে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। রবিবার সকাল পৌনে ১২টা নাগাদ নিউ মার্কেট সংলগ্ন একটি শপিং মলের তিন তলায় ভয়াবহ আগুন লাগে। ঘটনাস্থলে প্রথমে দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন আয়ত্তে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু আগুন তিন তলা থেকে নীচের তলায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় পরে আরও ২০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। নিয়ে আসা হয় স্কাইল্যাডারও। এ দিন বিকেল পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ চালাচ্ছে দমকল কর্মীরা।
শপিং মলের কর্মী এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এ দিন সকালে শপিং মলটি খোলা হয়। শপিং মলের ভিতরে তখন বেশ কয়েকজন কর্মী ছিলেন। আচমকাই তাঁরা লক্ষ্য করেন শপিং মলে উপরের কোনও এক তলা থেকে প্রচন্ড ধোঁয়া বেরোচ্ছে। উপরে গিয়ে দেখেন তিন তলার একটি কাপড়ের গুদাম ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। এর পরেই তাঁরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। খবর দেওয়া হয় দমকলে।
দমকল সূত্রের খবর, শপিং মলটিতে কাপড়, প্লাস্টিক-সহ সমস্তই দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় খুব দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়া এতটাই বেশি ছিল যে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ভিতরে ঢুকে আগুনের উৎসের কাছে পৌঁছতে পারেননি দমকল কর্মীরা। ফলে বিল্ডিংয়ের জানলার কাচ ভেঙে বাইরে থেকেই জল দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে নিউ মার্কেট চত্বর।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান। দমকল মন্ত্রী জানিয়েছেন, আগুনে শপিং মলটি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। ঠিক সময়ে সকলকেই বাইরে বের করে নিয়ে আসায় কেউ হতাহত হননি।
প্রাথমিকভাবে দমকল জানিয়েছে, শপিং মলটিতে কোনও অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। এমনকী বাণিজ্যিক কারণে ‘ইমারজেন্সি এক্সিট গেট’টিও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি আরও কয়েক ঘণ্টা পরে ঘটলে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। বিষয়টি নিয়ে মেয়র শোভনবাবু বলেন, ‘‘শপিং মল কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অগ্নিকাণ্ড অবশ্য ইদানিং এই শহরের অন্যতম পরিচিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ের খোদ পঞ্চায়েত মন্ত্রীর ঘরেই আগুন লাগে। প়ঞ্চায়েত, বিদ্যুৎ পরিবহণ-সহ বেশ কয়েকটি দফতরের গুরুত্বপূর্ণ নথি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
২০১০ সালে পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টে আগুনে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে গোলপার্কের বেসরকারি হাসপাতালে আগুন লাগে। মৃত্যু হয় অন্তত ৯০জনের। এর পর ২০১২ সালে হাতিবাগান বাজার এবং ২০১৪-য় সেপ্টেম্বরে পার্ক স্ট্রিটের চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে ভয়াবহ আগুনের সাক্ষী হয়েছেন শহরবাসী। এ দিন অবশ্য কোনও হতাহতের খবর নেই।
মহানগরের জতুগৃহ
কবে কোথায় কী হয়েছিল
২০০৬ তপসিয়া রোডে চার তলা ভবনে আগুন মৃত ১১
২০০৮ সোদপুরে রেডিমেড সেন্টার মৃত ১৩
২০১০ পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টে আগুন ৪৩ জনের মৃত্যু হয়।
২০১১ গোলপার্কের বেসরকারি হাসপাতালে আগুন মৃত্যু হয় অন্তত ৯০জনের
২০১২ হাতিবাগান বাজার কেউ মারা যাননি।
২০১৪ পার্ক স্ট্রিটের চ্যাটার্জী ইন্টারন্যাশনাল কেউ মারা যাননি। আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়।
১১এপ্রিল, ২০১৫ নব মহাকরণে আগুন ২৫টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
২৪এপ্রিল, ২০১৫ হাওড়া ভস্মীভূত হয়ে যায় চটের গুদাম।
২৬এপ্রিল, ২০১৫ নিউ মার্কেট চত্বরের শপিং মল নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৫টি ইঞ্জিন লাগে।
ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy