Advertisement
১১ মে ২০২৪

ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত ইউনিয়ন কার্বাইডের প্রাক্তন কর্তা অ্যান্ডারসনের মৃত্যু

মারা গেলেন ইউনিয়ন কার্বাইডের প্রাক্তন প্রধান ওয়ারেন অ্যান্ডারসন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ফ্লোরিডার ভেরো বিচের এক নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় ৯২ বছরের অ্যান্ডারসনের। ১৯৮৪-তে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার সময়ে তিনিই ছিলেন ইউনিয়ন কার্বাইডের প্রধান। তাঁর মৃত্যুসংবাদ এত পরে জানা গেল কেন? জানা গিয়েছে, পরিবারের তরফ থেকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ করা না হলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এই খবর বেরোলে স্থানীয় প্রশাসন তা স্বীকার করে নেয়।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ১৬:৪৩
Share: Save:

মারা গেলেন ইউনিয়ন কার্বাইডের প্রাক্তন প্রধান ওয়ারেন অ্যান্ডারসন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ফ্লোরিডার ভেরো বিচের এক নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় ৯২ বছরের অ্যান্ডারসনের। ১৯৮৪-তে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার সময়ে তিনিই ছিলেন ইউনিয়ন কার্বাইডের প্রধান।

তাঁর মৃত্যুসংবাদ এত পরে জানা গেল কেন? জানা গিয়েছে, পরিবারের তরফ থেকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ করা না হলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এই খবর বেরোলে স্থানীয় প্রশাসন তা স্বীকার করে নেয়। ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার পরে নিজেকে গুটিয়ে নেন অ্যান্ডারসন। জনসমক্ষে প্রায় আসেননি। তবে সংবাদ মাধ্যমে কয়েক বার সাক্ষাৎকারে সেই ভয়াবহ সময়ের কথা জানিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, ওই সময়ে রাতের পরে রাত ঘুমোতে পারতেন না। বাড়ি ছেড়ে হোটেলে গিয়েও থেকেছেন। তবে, অবসরের পরে পরিবারের সঙ্গেই জীবনের বাকি সময়টা কাটিয়েছেন অ্যান্ডারসন। ১৯৮৪-এর ২ ডিসেম্বর গভীর রাতে ইউনিয়ন কার্বাইডের ভোপাল কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস লিক হয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পরে। ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় অনেকের। পরে নানা হাসপাতালে অনেকে মারা যান। সব মিলিয়ে সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ছিল ৩৭৮৭। কিন্তু বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এর প্রভাবে নানা শারীরিক ক্ষতি হয় প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের। এই দুর্ঘটনার প্রভাব কয়েক প্রজন্ম ধরে ওই অঞ্চলের মানুষ ভোগ করছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি অন্যতম বৃহৎ শিল্প-দুর্ঘটনা।

১৯২১-এ নিউ ইয়র্কে অ্যান্ডারসন জন্মগ্রহণ করেন। আদতে সুইডেনের বাসিন্দা তাঁর বাবা ছিলেন কাঠের মিস্ত্রি। নৌবাহিনীর পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষিত হলেও ইউনিয়ন কার্বাইডেই ছিল তাঁর প্রথম চাকরি। সেখানেই আজীবন কাজ করেছেন। একের পর এক ধাপ পেরিয়ে সংস্থার শীর্ষস্তরেও উঠে আসেন। ১৯৮২-তে অ্যান্ডারসন ইউনিয়ন কার্বাইডের চেয়ারম্যান ও চিফ এগ্জিকিউটিভের দায়িত্ব নেন। এই সময়ে সংস্থার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। কিন্তু অ্যান্ডারসনের নেতৃত্বে সংস্থা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। সংস্থার উৎপাদনশীলতা বাড়ে। বাড়ে বিক্রিও। একের পর সংস্থা অধিগ্রহণ করতে থাকে ইউনিয়ন কার্বাইড। পাশাপাশি, পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্নাম ঘোচাতে তিনি উদ্যোগী হন। এই সময়ে সারা বিশ্ব জুড়ে ইউনিয়ন কার্বাইডের প্রায় ৭০০টি কারখানা ছিল।

কিন্তু সব কিছুতেই জল ঢেলে দেয় ভোপালের দুর্ঘটনা।

ঘটনার চার দিনের মাথায় ভোপালে আসেন অ্যান্ডারসন। তাঁকে গ্রেফতার করা হলেও আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান তিনি। এ নিয়ে সেই সময়ে প্রবল বিতর্ক হয়। এর পরে আর বিচারের জন্য ভারতে আসেননি অ্যান্ডারসন। ভারতের আদালত তাঁকে ফেরার ঘোষণা করলেও আমেরিকার প্রশাসন তাঁকে প্রত্যর্পণে রাজি হয়নি। অন্য দিকে, ইউনিয়ন কার্বাইড এই দুর্ঘটনার দায় স্থানীয় আধিকারিকদেরই ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। একে চক্রান্তও বলে তারা। খরচ কমানোর জন্য এই সব আধিকারিকরা যে বিপজ্জনক ভাবে বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করছিলেন তা তাদের অজানা ছিল বলে জানায় ইউনিয়ন কার্বাইড। তা ছাড়া ভোপালের কারখানার ৫১ শতাংশ শেয়ার ইউনিয়ন কার্বাইডের হাতে থাকায় স্থানীয় আধিকারিকদের পরিচালনার দায়িত্ব তাদের ছিল না বলে জানায় ইউনিয়ন কার্বাইড। ১৯৮৯-এ ইউনিয়ন কার্বাইড ভারত সরকারকে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়। কিন্তু ভারত সরকার, ভোপালের দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তা মানেনি। এর বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই শুরু হয়। দীর্ঘ লড়াই চলার পরে ২০১০-এ আদালত নিচুতলার আট আধিকারিককে দোষী সাব্যস্ত করে। কিন্তু আদালতে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। তবে ১৯৮৬-তে ৬৫ বছর বয়সে অবসর নেন অ্যান্ডারসন। পরে ডাও কেমিক্যাল ইউনিয়ন কার্বাইড অধিগ্রহণ করে নেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE