Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, হাওড়ায় রক্তাক্ত কলেজ রাজনীতি

হাওড়া হোমস্ শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল সোমবার চরম পর্যায়ে পৌঁছল। দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট, ইট ছোড়াছুড়ি হয়। এক গোষ্ঠী আর এক গোষ্ঠীর সমর্থককে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। এক জনের মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে।

হাওড়া কলেজে পুলিশি প্রহরা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

হাওড়া কলেজে পুলিশি প্রহরা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা‌
হাওড়া শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ২১:৫২
Share: Save:

হাওড়া হোমস্ শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল সোমবার চরম পর্যায়ে পৌঁছল। দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট, ইট ছোড়াছুড়ি হয়। এক গোষ্ঠী আর এক গোষ্ঠীর সমর্থককে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। এক জনের মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। এই ঘটনার পরেই এক দল যুবক মোটরবাইকে এসে পুলিশের সামনেই কলেজের গেট লক্ষ করে গুলি চালায় ও বোমা ছোড়ে। যদিও তাতে কেউ হতাহত হয়নি। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হাওড়া হোমস্ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০১৪ পর্যন্ত ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অঞ্জন টাকি। জেলার রাজনৈতিক মহলে যিনি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। প্রশিক্ষণ শেষ করে ওই কলেজ ছাড়ার পরে তাঁকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি করা হয়। অন্য দিকে, হাওড়া হোমসের ছাত্র সংসদে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শেখ নিয়ামত আলি। তৃণমূলের গোষ্ঠীকলহে অরূপবাবুর বিরোধী শিবিরের নেতা তথা ডোমজুড়ের বিধায়ক ও রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত তিনি। ফলে হাওড়া হোমসের ভিতরে রাজনৈতিক খবরদারির লড়াইটা কার্যত এসে দাঁড়িয়েছিল একই জেলার তৃণমূলের দুই মন্ত্রীর মধ্যে।

যদিও দুই মন্ত্রীর কেউই এই গোষ্ঠী কলহের কথা মানতে চাননি। সেচমন্ত্রী রাজীববাবু বলেন, ‘‘আমি ওই কলেজের ব্যাপারে কিছু জানি না। কে-কোন স্বার্থে ঘনিষ্ঠ বলছে, তা দেখতে হবে। তবে শিক্ষাঙ্গনে এ সব হওয়া ঠিক নয়।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপবাবুর আবার বক্তব্য, ‘‘কেউ আলাদা করে আমার ঘনিষ্ঠ নন। তবে যা-ই হোক, পুলিশকে বলেছি, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে। দলও সব খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’’ মন্ত্রী জানান, তিনি হাওড়ার পুলিশ কমিশনারকে বলেছেন, অঞ্জন টাকি-সহ কোনও বহিরাগতকেই কলেজে ঢুকতে না দিতে।

ওই কলেজ সূত্রে খবর, অঞ্জন প্রাক্তন ছাত্র হলেও দলবল নিয়ে কলেজে প্রায়ই আসতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতেন। বতর্মান সাধারণ সম্পাদক নিয়ামতের অভিযোগ, ‘‘অঞ্জনদা কলেজের সব বিষয়ে নাক গলাতেন। তিনি প্রায় প্রতিদিন বহিরাগতদের সঙ্গে এনে পড়ুয়াদের নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। প্রতিবাদ করলে মারধরও করতেন।’’

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঞ্জন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি ওই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি। তাই কলেজে যেতাম। আমার বিরুদ্ধে ওঠা এ সব অভিযোগ মিথ্যা। ওঁরাই বহিরাগতদের ডেকে কলেজে গোলমাল পাকাচ্ছেন।’’ কলেজের ডেপুটি ডিরেক্টর (ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং) সিদ্ধার্থ বসু বলেন, ‘‘কলেজে বহিরাগত ঢোকে বলে আমি জানি না। তবে গত দেড় বছরে এমন ঘটনা ঘটেনি। পুরো ব্যাপারটা খতিয়ে দেখে সমস্যা মেটাতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE