খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে বাংলাদেশের জঙ্গি যোগ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। এ বার মায়ানমারের নামও জড়িয়ে পড়ল। সোমবার হায়দরাবাদ থেকে খালিদ মহম্মদ (২৮) নামে মায়ানমারের এক নাগরিককে গ্রেফতার করেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ)-র সদস্যেরা। গোয়েন্দাদের দাবি, শাকিল-সাজিতদের পাশাপাশি খালিদও এই জঙ্গি-চক্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
গত ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ের ওই বিস্ফোরণের পর পরই জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর নাম উঠে আসে। এর পরে এনআইএ-র তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই জানা গিয়েছে কী ভাবে রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় ছড়িয়েছে জঙ্গি জাল! বর্ধমানের জঙ্গি মডিউলকে সামনে রেখে রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের হদিশ পেতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র। বাংলাদেশের হাসিনা সরকারও সাহায্যের সব রকম প্রতিশ্রুতি দেয়। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ঝাড়খণ্ড থেকে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনায় মায়ানমারের নাম উঠে আসায় গোয়েন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে!
কে এই খালেদ ওরফে খালিদ মহম্মদ?
এনআইয়ের গোয়েন্দাদের দাবি, আদতে মায়ানমারের বাসিন্দা। কিন্তু বর্তমান ঠিকানা হায়দরাবাদ। মায়ানমার থেকে এ দেশে ঢোকার বৈধ কোনও ছাড়পত্র না মিললেও গোয়েন্দারা তার কাছ থেকে উদ্ধার করেছেন ভুয়ো কিছু এ দেশীয় পরিচয়পত্র। পাকিস্তান থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণও নেওয়া আছে তার। জেরায় সে গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, পাকিস্তানের তহরিক-ই-আজাদি-আরাকান আয়োজিত একটি জঙ্গি কর্মশালায় সে অংশ নেয়। সেখানে প্রশিক্ষণ দিতে এসেছিল তহরিক-ই-তালিবানের জঙ্গিরা। রোহিঙ্গিয়া সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-এর সক্রিয় সদস্য খালিদের সঙ্গে জেএমবি-রও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে শুধু যোগাযোগই নয়, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে রীতিমতো সন্ত্রাসবাদী শিবির চালাত খালিদ। জিহাদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বেশ কিছু কাগজপত্র ও ভিডিও সমেত তার কাছ থেকে গোয়েন্দারা ইম্প্রোভাইজড্ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইডি) এবং বোমা বানানোর বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধার করেছেন। ইসলামিক স্টেটের সমর্থনেও বেশ কিছু কাগজপত্র মিলেছে খালিদের কাছ থেকে। গোয়েন্দাদের আশা, খালিদকে জেরা করে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে। তাকে বুধবার আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে বলে এনআইএ সূত্রে খবর।
বর্ধমানের ওই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিল শাকিল আহমেদ। পরে মারা যায় শেখ সুবহান। তদন্তে জানা যায় শাকিল আসলে বাংলাদেশের নাগরিক। তবে ভুয়ো নথি ব্যবহার করে এ দেশের সচিত্র পরিচয়পত্রও তার কাছে ছিল। সম্প্রতি জানা গিয়েছে শেখ সুবহানের আসল নাম আব্দুল করিম। তার বাড়ি বীরভূমের কীর্ণাহারে। ওই দিন ঘটনাস্থলে ছিল আরও তিন জন। শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া বিবি, আব্দুল হাকিম এবং তার স্ত্রী আলিমা বিবি। তিন জনকেই গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি মতো, জঙ্গিদের এই বর্ধমান মডিউলের মাথা ছিল শেখ রহমতুল্লা ওরফে সাজিদ। গত ৮ নভেম্বর তাকে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। সাজিদ সম্পর্কে গোয়েন্দারা জানান, তার বাড়ি বাংলাদেশে। সেও জেএমবি-র সক্রিয় সদস্য। পরে বাংলাদেশ পুলিশ সাজিদের ভাই মহম্মদ মোনায়েমকে গ্রেফতার করে। তদন্তের কাজে সোমবার বাংলাদেশ গিয়ে পৌঁছেছে এনআইএ-র ডিজি শরদ কুমারের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy