ফের বিরোধীদের হাতে নিজেরাই হাতিয়ার তুলে দিল তৃণমূলের রাজ্য প্রশাসন! বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভায় আগে বাধা দিয়ে গেরুয়া শিবিরকে অস্ত্র দিয়েছিল তারা। এ বার বামেদের অবস্থান কর্মসূচির আগে মিছিলের পথরোধ করে তাদের সরব হওয়ার সুযোগ করে দিল পুলিশ!
কেন্দ্র-বিরোধী যে অবস্থান বামেরা শান্তিপূর্ণ ভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পুলিশের ‘অতি-সক্রিয়তা’য় শেষ পর্যন্ত তা তৃণমূল-বিরোধী জমায়েতে পরিণত হল। ভিড়ের চাপে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আহত হলেন দুই বাম কর্মী। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হল। আহত হলেন আরএসপি-র প্রবীণ নেতা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী। আর সেই সূত্র ধরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু-সহ বাম নেতারা তৃণমূল সরকারের তীব্র সমালোচনা করলেন। বিমানবাবু এক ধাপ এগিয়ে প্রশ্ন তুললেন, “বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূলের কি কোনও গোপন বোঝাপড়া হয়েছে? তা হলে কেন কেন্দ্র-বিরোধী কমর্সূচিতে রাজ্য এ ভাবে বাধা দিচ্ছে?”
বিজেপি-বিরোধী শান্তিপূর্ণ অবস্থান যে ভাবে কার্যত বদলে গেল তৃণমূল-বিরোধী জমায়েতে, তাতে উপস্থিত বাম কর্মীরাও খুশি। মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সূর্যবাবু বলেন, “আজকের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার থাকলে নিন। কারণ, আগামী দিনে কোনও ব্যারিকেডই আর আমাদের আটকাতে পারবে না। জোয়ার আসছে। আপনাদের আর বেশি দিন নেই।” তাঁর এই কথায় প্রবল করতালি পড়ে।
এ দিন বিমানবাবু যেখানে কয়েকশো লোকের অবস্থানের কথা বলেছিলেন, সেখানে কয়েক হাজার মানুষের সভা হল। বাম নেতারা পুলিশকে ‘দলদাস’-সহ বিভিন্ন চোখা চোখা বিশেষণে আক্রমণ করলেন। সূর্যবাবু পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আপনারা আমাদের আটকাচ্ছেন। আর তৃণমূল আপনাদের মারছে।”
পুলিশের সঙ্গে কথা বলে বুধবার রাতে বিমানবাবুরা সিদ্ধান্ত নেন, দুপুর আড়াইটে থেকে আরআর অ্যাভেনিউতে অবস্থান করা হবে। তার আগে বাম নেতারা সমবেত হবেন ধর্মতলায় লেনিনের মূর্তির পাদদেশে। সেই মতোই জমায়েত হন সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, এসইউসি, সিপিআই (এমএল) লিবেরেশনের নেতেরা।
আর আর অ্যাভেনিউয়ের তিনটি লেন। দক্ষিণ দিকের লেনে অনঅনুমাদিত মাদ্রাসার একটি সংগঠনের সভা ছিল। মাঝের লেনটি ফাঁকা ছিল। এক আইপিএস অফিসার এসে সূর্যবাবুদের বলেন, “আপনারা দশ মিনিট পরে কর্মসূচি শুরু করুন।” বাম নেতারা তাতে রাজি হয়ে দুপুর আড়াইটে নাগাদ মিছিল করে আর আর অ্যাভেনিউতে প্রবেশ করতে যান। তখনই পুলিশ তাঁদের পথ আটকায়। ফুটপাথ উপচে পড়ায় বাম নেতারা উত্তর দিকের লেন দিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু পুলিশ ব্যারিকেড করে পথ বন্ধ করে দেয়। দুটি ব্যারিকেড ভেঙে বাম কর্মীরা এগিয়ে গেলেও মাঝের লেনে পুলিশ তাঁদের আসতে দেয়নি। যদিও মাদ্রাসা সংগঠনটির সভা ততক্ষণে শেষ হয়ে গিয়েছে।
বাম নেতারা বুঝতে পারেন, তাঁদের কর্মসূচি ক্রমেই দেরি করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা অধৈর্য্য হয়ে ব্যারিকেড ভেঙে মাঝের লেনে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তি। বিমানবাবু নির্দেশ দেন, মাঝের লেনেই সভা হবে। এক সময়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যায়। এতেই একাধিক বাম কর্মী আহত হন। বেহালার সমর প্রমাণিক ও কসবার চাঁদু ঘোষ গুরুতর আহত হন। সূর্যবাবু তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করার পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিমানবাবু বলেন, “পুলিশ আমাদের প্রথমে সন্ধ্যার পরে সভা করতে বলেছিল। কেন করব? আমরা কি অসামাজিক অন্ধকারের জীব?” এরপরেই তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের অনেক মন্ত্রী আছেন, যাঁরা অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy