Advertisement
১৯ মে ২০২৪

রানিগঞ্জে বুথ-সফরে ‘বেচারা’ সোহরাব

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে ‘বেচারা’। লোহা চুরির মামলায় দোষী সাব্যস্ত সেই ‘বেচারা’ সোহরাব আলি সোমবার, ভোটের দিন দিব্যি দাপিয়ে বেড়ালেন বর্ধমানের রানিগঞ্জে।

রানিগঞ্জের বুথে স্ত্রী নার্গিসের সঙ্গে সোহরাব। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

রানিগঞ্জের বুথে স্ত্রী নার্গিসের সঙ্গে সোহরাব। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৭
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে ‘বেচারা’। লোহা চুরির মামলায় দোষী সাব্যস্ত সেই ‘বেচারা’ সোহরাব আলি সোমবার, ভোটের দিন দিব্যি দাপিয়ে বেড়ালেন বর্ধমানের রানিগঞ্জে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এক বুথ থেকে বার করে দিলে তৃণমূল প্রার্থী স্ত্রী নার্গিস বানোর সঙ্গে হাজির হলেন অন্য বুথে, যেখানে ভোট চলছে। সোহরাবের এই গতিবিধিতে বাধা না দেওয়ায় এক প্রিসাইডিং অফিসারকে অবশ্য সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

রেলের লোহা চুরির একটি পুরনো মামলায় গত বছর রানিগঞ্জের বিদায়ী বিধায়ক সোহরাবের দু’বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আসানসোল আদালত। তা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে গেলেও সুপ্রিম কোর্টের নিয়মের গেরোয় আর প্রার্থী হতে পারেননি অধিকার খুইয়েছেন তিনি। সে কারণে এ বার রানিগঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী করেছে নার্গিসকে। দিন চারেক আগে রানিগঞ্জে সভা করতে এসে মমতা বলেছিলেন, ‘‘বেচারা সোহরাব! এ বার ভোটে দাঁড়াতে পারল না। নিজেদের আমলে সিপিএম ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছে।’’ রানিগঞ্জের জোট-প্রার্থী তথা সিপিএমের জোনাল সম্পাদক রুনু দত্তর টিপ্পনী, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এমন লোককে বেচারা বেছেছেন, যে বিনা দ্বিধায় ভোটের বিধির তোয়াক্কা না করে যেখানে সেখানে ঢুকে পড়ে ভোট প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে।’’

সোমবার অবশ্য সোহরাবের আচার-আচরণ দেখে বোঝার উপায় ছিল না, তিনি প্রার্থী নন। নিজে ভোটার বার্নপুরের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের। সেখানে সকাল-সকাল ভোট দেওয়ার পরে স্ত্রী-র সঙ্গে নির্দ্বিধায় ঢুকে পড়েছেন রানিগঞ্জের বিভিন্ন বুথে। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ তিনি আঞ্জুমান উর্দু বালিকা বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পাশাপাশি ৯২ ও ৯৩ নম্বর বুথ। সস্ত্রীক সোহরাব প্রথমে ঢোকেন ৯২ নম্বর বুথের ঘরে। এই বুথে সিপিএমের এজেন্ট কানেজ ফতেমার অভিযোগ, ‘‘ঘরে ঢুকে সোহরাব নিজেদের পোলিং এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেন।’’ সেখানকার প্রিসাইডিং অফিসার সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওঁকে বার করে দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ডাকি। তার মধ্যেই উনি বেরিয়ে যান।’’

এর পরে সোহরাব হাজির হন পাশের ৯৩ নম্বর বুথে। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে বার করে দেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান। সোহরাব যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন, ‘‘আমি বিধায়ক, বুথে আসতেই পারি।’’ জওয়ান পাল্টা বলেন, ‘‘তা সত্ত্বেও আপনি থাকতে পারবেন না।’’ ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার মানসকুমার দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ওঁর কথা হয়নি।’’

দুপুর দেড়টা নাগাদ আবার সোহরাবকে দেখা যায় রাইসাহেব মৃত্যুঞ্জয় ইনস্টিটিউটে ৫০ নম্বর বুথে। সেখানেও ভিতরে গিয়ে পোলিং এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কেন্দ্রীয় বাহিনী ফের তাঁকে বার করে দেয়। এই ঘটনার ঘণ্টাখানেক পরে বর্ধমানের রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানান, সোহরাবকে ঢুকতে দেওয়ার জন্য ৫০ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপসারিত প্রিসাইডিং অফিসার সৃষ্টিধর মান্ডি বলেন, ‘‘বুথের ভিতরে যখন ঢুকছেন (‌সোহরাব) ভেবেছিলাম, ভোটার। সে সময়ে তাঁকে আটকানোর কথা নয় আমার। পরে উনি ভোটার নন বুঝে যা কর্তব্য ছিল, করেছি।’’ প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, অন্য বুথে সোহরাবের গতিবিধি সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য না মেলায় অন্য প্রিসাইডিং অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

পরে সোহরাব দাবি করেন, ‘‘আমার স্ত্রী প্রার্থী। তাঁর সঙ্গে গিয়েছি কিন্তু কোনও বুথের ভিতরে ঢুকিনি।’’ নার্গিস প্রথমে বলেন, ‘‘এ সব নিয়ে কিছু বলব না।’’ পরে জোড়েন, ‘‘স্বামীর নামে অপপ্রচার হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE