Advertisement
১৫ মে ২০২৪
নিরাপত্তা নেই, নালিশ নন্দীগ্রামে

ভোটের দু’হপ্তা আগেও বন্ধ পার্টি অফিস

একই জেলায় দুই চিত্র। কোথাও বাধা কাটছে, কোথাও সেই পুরনো ছবি। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের বেশিরভাগ সিপিএম কার্যালয়ের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়।

সিপিএম অফিসের তালা খুলবে কবে? প্রশ্ন ভোটের নন্দীগ্রামে। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

সিপিএম অফিসের তালা খুলবে কবে? প্রশ্ন ভোটের নন্দীগ্রামে। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

আনন্দ মণ্ডল
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪৩
Share: Save:

একই জেলায় দুই চিত্র। কোথাও বাধা কাটছে, কোথাও সেই পুরনো ছবি।

২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের বেশিরভাগ সিপিএম কার্যালয়ের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ২০১৩-র পঞ্চায়েত ও ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন কেটেছে। তখনও ছবিটা বিশেষ বদলায়নি। ফের দোরগড়ায় বিধানসভা ভোট। এ বার নির্বাচন কমিশনের সক্রিয়তাও বেশি। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বন্ধ পড়ে থাকা খেজুরির হেড়িয়া, বারাতলা, জনকায় সিপিএম অফিস সম্প্রতি খুলেছে। কিন্তু পরিবর্তনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রামে সেই পুরনো দৃশ্য। ভোটের দিন পনেরো আগেও নন্দীগ্রামের সিপিএম জোনাল অফিস সেই তালাবন্ধই। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে তিনটি লোকাল কমিটির অফিস, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের রেয়াপড়ায় সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ও বন্ধ হয়ে রয়েছে। খোলা আছে শুধু রেয়াপাড়ায় সিপিএমের একটি লোকাল কমিটির অফিস ও সিপিআইয়ের দলীয় কার্যালয়।

এ বার ভোটের অঙ্ক আলাদা। বাম-কংগ্রেস জোটের জোরে রাজ্যের নানা প্রান্তেই দেখা যাচ্ছে প্রতিরোধের দৃশ্য। ক’দিন আগে তৃণমূলের গড় এই জেলারই হলদিয়ায় শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে জোটের কর্মী-সমর্থকদের। কিন্তু সেই হলদিয়া মহকুমারই নন্দীগ্রামে ভোটের আগে পার্টি অফিস খোলা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে রয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

২০০৭ সালে জমিরক্ষা আন্দোলনের সময় নন্দীগ্রাম বাজারে সিপিএমের জোনাল কার্যালয় বেশ কয়েকবার ভাঙচুর হয়েছিল। রোষের মুখে তখনই ওই কার্যালয়ে তালা পড়ে। তারপর থেকে একের পর নির্বাচনে নন্দীগ্রাম-সহ গোটা জেলায় ঘাসফুলের জয়জয়কার হয়েছে। আর পাল্লা দিয়ে কোণঠাসা হয়েছে লাল-শিবির। নন্দীগ্রাম ছাড়াও পাশের খেজুরি, উত্তর কাঁথি, মুগবেড়িয়া ও পটাশপুরে একের পর এক সিপিএম কার্যালয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাস এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

এ বার অবশ্য ভোটে নির্বাচন কমিশন গোড়া থেকে কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল শুরু হয়েছে। তাতে সাহস পেয়ে খেজুরি, উত্তর কাঁথি, মুগবেড়িয়ায় অনেক ঘরছাড়া বাম কর্মী এলাকায় ফিরেছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা খেজুরির হেড়িয়া বাজারে সিপিএমের জোনাল অফিস, জনকা, বারাতলা এলাকার দলীয় অফিসও খোলা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে।

নন্দীগ্রামে বিপরীত ছবি কেন?

এ ক্ষেত্রে তৃণমূলের সন্ত্রাসের দিকেই আঙুল তুলছে সিপিএম। দলের নন্দীগ্রাম জোনাল কমিটির সম্পাদক স্বপন বেরা সোমবার বলেন, ‘‘সম্প্রতি প্রশাসনের ডাকা সর্বদল বৈঠকে আমরা দলীয় কার্যালয় খোলার জন্য নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু ১৪ এপ্রিল যখন দলীয় অফিস খোলার পরিকল্পনা করলাম, সে দিনই নন্দীগ্রাম বাজারে সভা করল তৃণমূল। ফলে, ওই দিন আর বন্ধ কার্যালয় খোলা যায়নি।’’ এই কেন্দ্রে তৃণমূলের শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে লড়ছেন জোট প্রার্থী সিপিআইয়ের কবীর মহম্মদ। তাঁরও অভিযোগ, ‘‘নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বিভিন্ন স্থানে শাসক দলের লোকেরা হুমকি দিচ্ছে। প্রকাশ্যে প্রচার চালাতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।’’

সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন শাসক দলের নেতারা। নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘‘নন্দীগ্রামে বাম প্রার্থীকে প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। আসলে ওদের লোকজন নেই। তাই এই দশা।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ১৪ এপ্রিল সিপিএমের দলীয় অফিস খোলার কথা তাঁদের জানা ছিল না।

কোণঠাসা এই পরিস্থিতিতেও অবশ্য আশা হারাচ্ছে না বাম শিবির। প্রচারে বাধা ও দলীয় সমর্থকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বিকল্প ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির কথায়, ‘‘নন্দীগ্রামের পরিস্থিতি এখনও প্রতিকূল। তবে শিগগিরি আমরা ওখানে দলীয় কার্যালয় খুলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 nandigram cpm party office
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE