দু’জনেই খোসমেজাজে। (বাঁ দিকে) তৃণমূল প্রার্থী আব্দুর রহমান, (ডান দিকে) জোটের কংগ্রেস প্রার্থী আলি মুর্তাজা খান। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
বছর তিনেক আগের কথা।
নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। জোটহীন নির্বাচন। সে বার নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন আব্দুর রহমান। স্ত্রী শাহনাজ বেগম স্বামীর হয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বুথে বুথে ঘুরেছিলেন। ফলের জন্য ভেবেওছিলেন। ফল বেরিয়েছিল পাঁচ দিন পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি। বামপ্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়ে আব্দুর রহমান ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। এ বার রহমান সাহেব মুরারই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। এ বারও স্বামীর হয়ে দিনের পর দিন মুরারই বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটি অঞ্চল ঘুরে ঘুরে প্রচার করেছেন শাহনাজ বেগম। ভোট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ বার যেন একটু বেশিই চিন্তায় তিনি।
তবে মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারাননি তিনি। ভোট পেরিয়ে গিয়েছে, তবু মানুষের কাছে যাচ্ছেন তিনি। জানছেন কোন এলাকায় কেমন ভোট হয়েছে। অন্য দিকে নমাজের সময় বাড়িয়ে স্বামীর জয়ের জন্য দোয়া মানছেন তিনি। স্ত্রী চিন্তায় থাকলেও তৃণমূলপ্রার্থী আবদুর রহমান অবশ্য আশাবাদী। তিনি নিশ্চিত, তিনি জিতছেন।
অন্য দিকে, স্বামীর জয়-পরাজয় নিয়ে মানুষের উপরেই বিশ্বাস রাখছেন মুরারই বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী আলি মুর্তাজা খানের স্ত্রী সেলিনা বিবি। স্বামীর প্রতি এলাকার মানুষের যে ভালবাসা তিনি নিজে এলাকায় এলাকায় ঘুরে উপলব্ধি করেছেন, সেই ভালবাসাটাই আগামী দিনে তাঁর চলার পথে পাথেয় বলে মনে করছেন। কথায় কথায় সেলিনা বিবি জানালেন, ‘‘আসলে নির্বাচনে জেতা হারাটা বড় কথা নয়। কেউ জিতবে কেউ হারবে। কিন্তু এলাকার মানুষ যে লোকটাকে তৃণমূলের অন্যায়, অত্যাচার সন্ত্রাস থেকে বাঁচার জন্য রক্ষাকবচ হিসাবে বেছে নিয়েছেন, তাকে হারানো কি সহজ হবে। তাই আমি মনে করি, এত এত মানুষের ভালবাসা আমাদের জয় সুনিশ্চিত করে দিয়েছে।”
তবে এই দুই প্রার্থীরই জয় পরাজয় নিয়ে এত দিন ধরে টানাপড়েন আর ভাল লাগছে না।
কংগ্রেস প্রার্থী আলি মুর্তাজা খান বলছেন, ‘‘আসলে কী জানেন, যে দিন খাটব সেই দিনই মজুরি পেলে তার একটা আলাদা স্বাদ আছে। সেই স্বাদ কি আর মাসিক মজুরিতে পাওয়া যাবে? যাবে না নিশ্চয়। তাই এলাকার মানুষের কাছে ঘুরে এখনও তাঁদের ভালবাসা কুড়িয়ে যাচ্ছি। অপেক্ষাই এখন একমাত্র উপায়।”
অপেক্ষায় থেকে থেকেই টেনশনে জয়ের অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত। অন্য দিকে, আপাতত মুরারইয়ের বাড়িতেই ডেরা করেছেন আবদুর রহমান।
তিনি বলছেন, ‘‘গত নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে নলহাটি এলাকায় কে যে কার সুজন আর কে কার দুর্জন, সেটা খুঁজে বের করাটাই ছিল কঠিন ছিল। এ বারে মুরারইয়ের চেনা অলিগলি, আলপথ, চেনা মানুষ জন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন আমার জয়ের পথকে সুগম করে দিয়েছে। এখন খালি জয়ের অপেক্ষায় দিন গুনছি।”
অপেক্ষায় দিন কাটছে এলাকার বিজেপি প্রার্থী সাত্তোরের নির্যাতিতা হাইতুন্নেশা বিবিরও।
রাজ্যে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদী চরিত্র হিসাবে ভোটে দাঁড়াতে এসেছিলেন মুরারই বিধানসভায়। চেষ্টা করেছেন দলের সঙ্গে নিজের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে। ভোট শেষে তিনি ফিরে গিয়েছেন সাত্তোরে। চিন্তাতেই দিন কাটছে তাঁর।
অপেক্ষায় থেকে থেকে বলছেন, ‘‘আর কত দিন! দিনে কাজের মধ্যে থাকি। তেমন বুঝতে পারি না। কিন্তু টেনশন হয় রাতে। আমার লড়াই তো অন্য লড়াই। জিততেই হবে!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy