বিকেল চারটে। তালতলার বুথ অফিসে ‘জোট’ কর্মীদের ভিড় দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন সত্তরোর্ধ্ব ‘ছোড়দা’। অর্থাৎ সোমেন মিত্র। দিনভরের ধকলে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি ঘামে চুপচুপে। এক কংগ্রেস কর্মী কানে-কানে বললেন, ‘‘গত বারের চেয়ে বেশি লিড দেব। ক্যালকাটা বয়েজেও ভাল ভোট হয়েছে।’’ হাসিমুখে ছোড়দা বলেন, ‘‘মানুষ ভোট দিয়েছে। কী হবে জানি না। এটুকু বলব, রাজ্যে পরিবর্তন হবে। সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী।’’
ভোট দিতে এসে সকালেই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘এ বার দুশোরও বেশি আসন পাব।’’ আর দিনের শেষে সুদীপ-জায়া, চৌরঙ্গির তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ‘‘মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট করেছি। জিতবই।’’ ‘ভোট মেশিনারি’ ঠিক মতো কাজ করেছে তো? এ বার ক্ষিপ্ত নয়না, ‘‘আমি মেশিনারিতে বিশ্বাসী নই।’’
যদিও গত পুরভোট থেকে চৌরঙ্গি কেন্দ্রের উপনির্বাচন অন্য কথা বলে। পুলিশের সামনেই তৃণমূল কর্মীদের অবিরাম বুথে যাতায়াত, দিনভর জটলা, দামাল বাইকবাহিনী। সেই ছবি পাল্টাল এ বার পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী একটু আঁটোসাঁটো হতেই। গত বার রক্তাক্ত বঙ্গবাসী ও সুরেন্দ্রনাথ কলেজে দাপিয়ে বেড়াল কেন্দ্রীয় বাহিনী। স্কট লেনে কংগ্রেস তৃণমূলের হুমকির অভিযোগ তুলতেই হাজির মোবাইল ভ্যান। বসল পুলিশ পিকেট। পাশে জোড়াসাঁকোতে যখন লাগাতার অশান্তির খবর, তখন স্নায়ুচাপ ধরে রেখে চৌরঙ্গিতে শান্তিপূর্ণ ভোটই করাল প্রশাসন।
আর সেই ভরসাতেই বুক বেঁধে নয়না এবং সোমেন মিত্র— দু’পক্ষেরই দাবি, ‘আসল’ কাজটা ঠিকই করে দিয়েছেন তাঁরা। জেতা নিশ্চিত। এক কংগ্রেস কর্মীর কথায়, ‘‘বিধানসভা উপনির্বাচন ও পুরভোটে যে সব বুথে বেশি ভোট পেয়েছিলাম, সেখানে আরও বেশিতে জিতব।’’ আর তৃণমূলের বক্তব্য, ‘‘নিঃশব্দে বিপ্লব করে দিয়েছি বিকেল চারটের মধ্যেই।’’
‘ভূত’ ভোটে ভরসা নয়, মানুষের ভোট তিনিই পাবেন— দাবি বিজেপি প্রার্থী রীতেশ তিওয়ারির। বছর দেড়েক আগেকার পালের হাওয়ায় এখন অনেকটাই ভাটা। তার আঁচ রীতেশ-শিবিরেও। রমরমাও অনেক ফিকে। কর্মীর সংখ্যাও ক্রমশই নিম্নগামী। বহু বুথে তো এজেন্টই দিতে পারেনি দল।
চৌরঙ্গির লড়াই তাই ছোড়দা-বৌদিরই, বলছেন ভোটারেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy