Advertisement
২১ মে ২০২৪
Narendra Modi

Bengal Polls: মোদীর ‘দিদি-ই-ই-ই’ নিয়ে পাল্টা আক্রমণের সুর বাঁধলেন তৃণমূলের ত্রয়ী, শশী-জুন-অনন্যা

জুন প্রশ্ন তোলেন, প্রধানমন্ত্রীকে দেখে ১৩০ কোটির দেশের মানুষের কত শত অনুপ্রাণিত হন। তাঁর এই আচরণ থেকে তাঁরা কী শিখবেন?

সাংবাদিক বৈঠকে জুন মালিয়া, শশী পাঁজা এবং অনন্যা চক্রবর্তী।

সাংবাদিক বৈঠকে জুন মালিয়া, শশী পাঁজা এবং অনন্যা চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২১ ১৫:৩৭
Share: Save:

গরমে একটানা ভাষণে শুনতে শুনতে ঝিমুনি এসে গিয়েছিল প্রায়। হঠাৎই মাইকে ভেসে এল ‘দিদি-ই-ই-ই, ও দিদি-ই-ই-ই’। যে ‘ধ্বনিবাণ’ কানে ঢোকামাত্রইই চাঙ্গা হাজার হাজার মানুষের ভিড়। নীলবাড়ির লড়াইয়ে ‘অভিযানে’ এসে বার বার এই শব্দবন্ধই ঘুরেফিরে এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে। তাতে এক দিকে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্লেষ দাগার কাজও হয়ে যাচ্ছিল, তেমনই স্তিমিত সভায় প্রাণসঞ্চার ঘটছিল। কিন্তু তাঁর সেই শব্দবন্ধ নিয়েই এ বার তীব্র আপত্তি তুলল তৃণমূল। দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে বসে এ ভাবে এক জন মহিলাকে ‘টিটকিরি’ করা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অশোভন বলে আক্রমণ করল তারা।

শনিবার তারকেশ্বর এবং সোনারপুর দক্ষিণের সভাতেও মোদীর মুখে ওই শব্দবন্ধ শোনা গিয়েছে। রবিবার সকালে তা নিয়ে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন জোড়াফুল শিবিরের মহিলা ব্রিগেড। ছিলেন মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য জুন মালিয়া, রাজ্যের মন্ত্রী তথা শ্যামপুকুরের তৃণমূল প্রার্থী শশী পাঁজা এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা সমাজকর্মী অনন্যা চক্রবর্তী। একজোটে তৃণমূল নেত্রীর প্রতি মোদীর ভাষার প্রয়োগের তীব্র সমালোচনা করেন তাঁরা।

দেশের নাগরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসনটিকে তাঁরা সম্মান করেন। কিন্তু যে বা যাঁরা ওই আসনে বসে রয়েছেন, তাঁরা নিজেরাই ওই আসনের মর্যাদা রক্ষা করতে পারছেন না বলে সাংবাদিক বৈঠকে মন্তব্য করেন শশী। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসনকে সম্মান করি আমরা। কিন্তু পদাধিকারীরাই ওই আসনের মর্যাদা রাখতে পারছেন না। নির্বাচনী প্রচারে রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে যে শব্দ প্রয়োগ করছেন তিনি, তাতে তাঁর নারী বিদ্বেষী মনোভাবই সামনে চলে আসছে। উনি বলছেন, ‘দিদি-ই-ই-ই, ও দিদি-ই-ই-ই, কহাঁ হ্যায় দিদি-ই-ই-ই’’। মহিলাদের সুরক্ষার জন্য দেশে আইন রয়েছে, নির্ভয়া কাণ্ডের পর যা আরও মজবুত হয়েছে। সেখানে এই ধরনের হেনস্থা, মহিলাদের প্রতি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য বিধি রয়েছে। কিন্তু দেশের প্রশাসনিক শীর্ষ পদে থেকে, একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হয়ে, দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি এক জন মহিলা নেত্রীকে এ ভবে অসম্মান দেখান, সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক।’’

প্রকাশ্য সভায় একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির বিরুদ্ধে এ ভাবে শ্লেষ দেগে মোদী আসলে বাংলার নারী সমাজকে অপমান করেছেন বলে মন্তব্য করেন জুন। তিনি বলেন, ‘‘এই দেশে বড় হয়েছি। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গাঁধী, রাজীব গাঁধী, নরসিংহ রাও, অটলবিহারী বাজপেয়ী অথবা মনমোহন সিংহ, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সভায় এঁদের কেউ কখনও এ ভাবে কথা বলেছেন বলে মনে পড়ে না। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলকে মনে রাখতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর আসনে যিনি বসে রয়েছেন, তিনি গোটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ওঁকে বিশ্বাস করে নির্বাচিত করেছেন মানুষ। সেখানে এই ধরনের আচরণ কি ঠিক? আমার অন্তত মনে হয় না।’’

প্রধানমন্ত্রীকে দেখে ১৩০ কোটির দেশের মানুষের কত শত অনুপ্রাণিত হন। তাঁর এই আচরণ থেকে তাঁরা কী শিখবেন, সেই প্রশ্নও তোলেন জুন। তাঁর কথায়, ‘‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজে খুব সহজেই মহিলাদের চরিত্রহনন করা যায়। প্রধানমন্ত্রী যে আসনে বসে রয়েছেন, সেখান থেকে অনেকের আদর্শ উনি। ওঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হন বহু মানুষ। তাঁর এমন আচরণ থেকে নতুন প্রজন্ম কী শিখবে? এই ধরুন আমি শশীদিকে জিজ্ঞেস করতে পারি, এটা কেন করেননি শশীদি। কিন্তু আমি যদি বলি, শশী-দি-ই-ই, ও শশী-দি-ই-ই, এটা কেন হয়নি শশী-দি-ই-ই। আপনারাই বলুন পার্থক্য আছে কি না। তাই বলব সকলে সাবধান হন।’’

প্রধানমন্ত্রীর আচরণে আসলে তাঁর ব্যক্তিগত চরিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অনন্যা। তাঁর অভিযোগ, বাংলায় পিতৃতান্ত্রিক চিন্তাধারা বয়ে নিয়ে আসতে চাইছে বিজেপি। যেখানে মেয়েদের দমিয়া রাখাই নিয়ম। অনন্যা বলেন, ‘‘সত্যিই খুব দুর্দিন আমাদের। দেশের প্রধানমন্ত্রী এমন এক জন মানুষ, মহিলাদের প্রতি যাঁর বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনই তো প্রমাণ! স্ত্রী-র প্রতি ওঁর অসম্মান দেখেছি। বিবাহিত জীবনের প্রতি অসম্মান দেখিয়েছেন উনি। নির্বাচনী হলফনামায় বিবাহিত হওয়ার উল্লেখই করেননি। আমি বাংলার মেয়ে। বাংলাই নারীমুক্তির পথ দেখিয়েছে গোটা দেশকে। এই বাংলা বিদ্যাসাগর, রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ এবং শরৎচন্দ্রের বাংলা। এখন দেখছি ধর্ম নিয়ে খেলা হচ্ছে। কিন্তু সংস্কৃতে ধর্মের অর্থ, আমরা কী ধারণ করে গমন করছি। অর্থাৎ আমাদের মূল্যবোধ, যা আমাদের চালিত করে। তাতেই প্রমাণিত আমরা ধার্মিক নাকি অধার্মিক। একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এ ভাবে কথা বলা যদি কারও মূল্যবোধ হয়, সেটা কি ধর্মের পরিচয়? বরং এতে সেই পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধই প্রতিফলিত হয় যেখানে মেয়েদের দমিয়ে রাখাটাই নিয়ম। এই মূল্যবোধ বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE