Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘সেকেন্ড ম্যান হ্যায় আফটার চিফ মিনিস্টার’, ববির আরও ভিডিও

শুক্রবার নারদ নিউজের পক্ষ থেকে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের সঙ্গে তাদের কথোপকথনের অসম্পাদিত ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে রেকর্ড করা সেই কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ তুলে দেওয়া হল। গোপন ক্যামেরায় তোলা এই ফুটেজের যথার্থতা অবশ্য আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ববি তাঁর বৈঠকখানায় বসে। পরনে সাদা লুঙ্গি। গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি। আকাশি রঙের পাঞ্জাবি পরে তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদের প্রবেশ।শুক্রবার নারদ নিউজের পক্ষ থেকে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের সঙ্গে তাদের কথোপকথনের অসম্পাদিত ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে রেকর্ড করা সেই কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ তুলে দেওয়া হল। গোপন ক্যামেরায় তোলা এই ফুটেজের যথার্থতা অবশ্য আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ববি তাঁর বৈঠকখানায় বসে। পরনে সাদা লুঙ্গি। গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি। আকাশি রঙের পাঞ্জাবি পরে তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদের প্রবেশ।

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

ববি: আরে সালাম আলেকুম। বসো বসো। ইকবাল ভাইকে জানিস তো?... এ হল মমতাদির সেই পুরনো লোক। আমি ওর থেকে পরে মমতাদির... (ম্যাথু স্যামুয়েলের দিকে তাকিয়ে) চেন্নাই থেকে এসেছে?

ইকবাল: তোমার অনেক বন্ধুকে আমি হেল্প করেছি। শুনছ। (ম্যাথুর দিকে তাকিয়ে) কার্ড দে দিজিয়ে।

ম্যাথু: উই হ্যাভ লটস অব ওয়ার্কস ইন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইন আর্বান ডেভেলপমেন্ট। অ্যান্ড লটস অব কোম্পানিজ আর এনলিস্টেড।

ববি: হোয়াট দে ডু?

ম্যাথু: ইনফ্রাস্ট্রাকচার, লাইক টাউনশিপ প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।.... ইউ হার্ড অ্যাবাউট স্বামী অ্যান্ড স্বামী, জিভিকে? স্যার উই আর ডুইং লিয়েজঁইং ফর দেম।

ববি: টুডে আর ইউ ইন ক্যালকাটা? ক্যান ইউ কাম ডাউন টু মাই রাইটার্স বিল্ডিং অফিস?... আই উইল কল মাই প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি।

ইকবাল: আভি দরকার নেহি। আভি ইলেকশনের সময় কুছু ফান্ড দেবে।... (ম্যাথুকে ইশারা করে) দে দিজিয়ে।

ববি: কেয়া হ্যায়?

ম্যাথু: ফাইভ ল্যাখ্স।

ববি: আপ রাখিয়ে। আই উইল টেক ইট ফ্রম ইউ। কিপ ইট।

ইকবাল: ...সেকেন্ড ম্যান হ্যায় আফটার চিফ মিনিস্টার।

ইকবাল: আর কী হচ্ছে ববি?

ববি: যা চলছে বলার মতো নয়... এমএলএ-রা ছ্যাঁচড়া হয়ে গেছে।

ইকবাল: ছ্যাঁচড়া শালা।... খালি টাকা খাবে, চাকরি দিয়ে টাকা খাবে। সব খাবে ।...শালা পুলিশের চাকরি টাকা নেবে। কন্ট্রাকটারের কাছ থেকে টাকা নেবে। রাস্তার কাজে টাকা নেবে। কী বলব শালা তোমার হুগলির এমএলএ-রা অনেকে হারবে। পাবলিক রেগে যাচ্ছে।

ববি: জানি।

বক্সীদা এসেছিল টাকা দিতে

ববি: একটা এমপি ইলেকশন ঠিকমতো লড়তে গেলে এক কোটি টাকা খরচা আছে মিনিমাম।

ইকবাল: এ বার পার্টি দিল না?

ববি: হ্যাঁ দিয়েছে। ফাইভ জিরো দিয়েছে। মেটিরিয়ালও দিয়েছে। মেটিরিয়াল যারা যারা চেয়েছে, তাদের দিয়েছে।

ইকবাল: আমাদের লাগে না।

ববি: ...এই তো বক্সীদা এসেছিল টাকা দিতে। বক্সীদাকে বললাম, ওখানে শামসুরকে বললে বলবে, রুপায়া দেনে আয়া হ্যায়! ইসসে আচ্ছা জুতা খোলকে মুপে মারিয়ে।

ইকবাল: তোমার কাছে কাজ কি কিছু আছে? আমি তো ব্যবসা করি।...

ববি: করো না কেএমডিএ-র এতো কাজ বেরোচ্ছে।

ইকবাল: সব তো শালা ফিট আছে।

ববি: কিচ্ছু ফিট নেই। ফেলো না শালা টেন্ডার আমি করিয়ে দেব। অনেক কাজ বেরোচ্ছে। রোজ রোজ কাজ বেরোচ্ছে।

ইকবাল: (ববিকে দেখিয়ে ম্যাথুকে) ইয়ে বড়ে আদমি হ্যায়। ছোটা কাজ করতা নেহি। হাম লোগ ছোটা কাম নেহি করতা।

ববি: ছোটা কাম হাম লোগ হাত দেগা তো বাচ্চা লোগ কেয়া করেগা।

ববি: (ফোনে) হ্যাঁ পাপ্পু বল। বাপিকে ঢোকাস না। বাপি গভর্নমেন্ট সারভেন্ট। কাউন্টিং থেকে আরম্ভ করে কোথাও ওকে ঢোকাস না। ও বাইরে যা কাজ করছে, করছে।

(পাপ্পুর প্রবেশ।)

ববি: ওঁকে নীচে নিয়ে যা।

মুকুল আর শিউলি

ইকবাল: দিদি এমএলএ-দের টিকিট দিল না। বসিরহাট আমাকে দিত তো বার করে দিতাম।

ববি: দিদির কী হল, মুকুলদার সঙ্গে একটা প্রবলেম হয়ে গেল দিদির। মুকুলদা কী করল, যেখানে সব নিজের নিজের... শিউলি-ফিউলি এদের দিয়ে দিয়েছে। এ বার দিদি শালা খেপে গেল। বলল আমি কোনও এমএলএ-কে দেব না। শিউলিকে কাটতে গিয়ে শালা সব ঝাড় হয়ে গেল। মুকুলদা নিজেরই চারপাশে শালা যাদের যাদের দেখে, তাদেরই শালা সব নাম লিখে দিয়েছে। দিদি দেখল, মুকুলের গাড়িতে যারা ঘোরে, তাদেরই সব এমপি করে দিতে হবে।... মুকুলদা পাগলের মতো কাজ করেছে। সে লিস্ট ছিঁড়ে ফেলে শালা বিশাল ঝামেলা হয়েছে।

দেব বসে কাঁদছে

ববি: এই দেব পেত না। ওখানে ওয়াইদুল বলে নতুন একটা ছেলের নাম ছিল।... প্রফেসর না কী! এ বার দিদির কাছে একটা চিঠি গেছে। প্রফেসর না, ফলস প্রফেসর! ওয়াইদুলকে চেনে না দিদি। এই বার শালা মুকুল পেয়েছেটা কী! পার্টিটা কি বিক্রি করে দিচ্ছে? লাস্ট দিন যে দিন অ্যানাউন্স করবে, আগের দিন রাত্তিরবেলা হঠাৎ শিবাজী পাঁজার ওখানে দেখা দেবের সঙ্গে। দেবকে জবরদস্তি ধরে পাশে বসিয়ে। দাঁড়াতে হবে। দিদি আমার তো এটা একেবারে পিক টাইম। আরও দশ বছর হয়ে গেলে তার পর ঠিক আছে। দিদি এই সময় আমি দাঁড়ালে আমার কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে। আমার হাতে এখন প্রায় ৩০টা বই আছে।

ইকবাল: ৩০টা!

ববি: ৩০টা সাইন কিয়া হ্যায়। শুটিং শুরু নেহি হুয়া হ্যায়। এই সময় দিদি আমি মরে যাব দিদি। তা হলে তুমি আমাকে ত্যাগ করে দাও। আমি তোমার দিদি নই। হ্যান নই। ত্যান নই। ছেলেটা এমনি ভাল ছেলে। এইখানে বসে কাঁদছে আমার কাছে।

ববি: রাত্তিরে ওই দিনই দেব এখানে এসে বসে আছে। আমিও পরে ফিরে এসেছি। গুরু আমার ৩০টা বই সই করা আছে। আমার পোঁদে এখনও প্রোডিউসার ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার পাঁচ মিনিটের টাইম নেই গুরু। আমি শেষ হয়ে যাব বস্। আমি বললাম দেখ গুরু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলেছে, কেউ বলবে না। কারও বাপের ক্ষমতা নেই মমতা ব্যানার্জির সামনে। আমি বললে আবার উল্টে... তখন তো তুমি হ্যাঁ বলে দিয়েছো। দিদি বলছে কাল থেকে আমাকে দিদি বলবে না।

ইকবাল: আর কী আছে এর থেকে বড় চ্যালেঞ্জ করলে?

ববি: আমি বললাম, ঠিক আছে তুমি দাঁড়িয়ে যাও। পার্লামেন্ট এমন কিছু একটা ব্যাপার না। মাসে এক দিন গিয়ে রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দেবে।... একটা ঘর পাবে শালা। ফোকটে থাকবে। আর কনস্টিটিউন্সিতে গেলে... আমি গেলে পাশের রাস্তার লোক জানবে না। তুমি গেলে পুরো এলাকা চাউর হয়ে যাবে, দেব এসেছে দেব এসেছে।

ববি: প্রবলেম হচ্ছে শালা ওই...। (অস্পষ্ট)

ববি: ও আগের বারও তো হেরেছে ওই জন্য। আমি এসে দেখি যত মুসলিম আছে... ফ্যান্সি মার্কেটের উপর একটা দোকান আছে। আমার বন্ধু মুসলিম বিজনেসম্যান। ওখানে বসে আছে। আমি বললাম শালা তোমার ইলেকশন তিন দিন বাদে। এখানে বসে আছ? যে বিজনেসম্যান সে তো দু’চার ঘণ্টা বসিয়ে সবাইকে দেখাবে যে ও এসেছে। তার পর তো দু’লাখ টাকা দেবে।

ইকবাল: আরে এরা টাকা নিয়ে খরচা করবে না। ফিক্সড ডিপোজিট করবে। এমএলএ-রা টাকা পেয়েছে। কুড়ি লাখ করে পার্টি দিয়েছে। বাকি অনেকে তিরিশ লাখ টাকা পেয়েছে। তিরিশের বেশি। ফিকস্ড ডিপোজিট করে দিয়েছে। কী করে ইলেকশন জিতবে? ইলেকশনে একটা খরচা আছে তো! সে জন্য এরা পারবে না।

(এখানে বক্সীদা প্রসঙ্গ)

ববি: আর আমাদের কী আছে যে হেতু শালা রিলেশন মেইনটেন করি, কেউ শালা এটা দিয়ে দিচ্ছে, কেউ শালা ওটা। আমরা বুঝতে পারি না। নিজে থেকে এসে বলছে, গুরু এটা করে দিচ্ছি। কোথা দিয়ে কী মাল আসছে, নিজেরাই জানি না।

ইকবাল: আমাদের এই সুদীপদা...। আজ পর্যন্ত এক পয়সা আমরা টাচ করিনি। সুদীপদার কাজ হচ্ছে ওয়ার্ডে। এক পয়সা দেয়নি। আজকে এমএলএ আমাকে কী দেবে? দু’লাখের তো বেশি দেবে না! বলে দেবে ইকবালকে টাকা দিয়েছি। (অস্পষ্ট)

ববি: মমতা ব্যানার্জি কারও কাছে এক পয়সা নিয়ে নমিনেশন দেয় না।

ইকবাল: দিদি কী নেবে? কম আছে নাকি! মুখ খুলবে তো টাকা ভরে দিয়ে যাবে।

ববি: দিদিকে দিতে চাইছে, নিচ্ছে না। অম্বানী হিমসেল্ফ অ্যাপ্রোচড মি। উসকো বলিয়ে দিদি কো। বলল, নাহ্‌। বলিয়ে কাম করনা হ্যায়। বেঙ্গল মে কাম করনা হ্যায়।...

ইকবাল: সেটা আমাদের ভুল হয়েছিল। মুনমুন সেন?

ববি: মুনমুন সেন জিতে যাবে।

ইকবাল: সন্ধ্যা রায় কী আছে?

ববি: ওগুলোয় তো মাওবাদী ছাড়া আর কেউ নেই। জিতে যাবে। ওদের ওখানে অন্য কোনও দল নেই তো, পোলিং এজেন্ট নেই তো! মেদিনীপুর শহরটা একটু টাফ আছে। ও দিকে গ্রামে...

ইকবাল: শুভেন্দু জিতে যাবে?

ববি: হ্যাঁ। বাপ-বেটা...। শালা লক্ষ্মণ শেঠ নিজেই ওখানে পড়ে গেছে। আর ওখানে কিছু নেই। তাপস পাল টাফ। মোদী আবার একটু খারাপ করে দিয়ে গেল। বলল বাংলাদেশিদের পাঠাব। তাপস পালের ওখানে দুনিয়ার বাংলাদেশি রয়েছে।

ইকবাল: শতাব্দীরটা টাফ আছে।

ববি: শতাব্দী জিতে গেছে। ওই একটু বাদেই আসছে অনুব্রত মণ্ডল।

ইকবাল: কী বলছে? দু’টো সিটই জিতবে।

ববি: সিপিএম এজেন্টদের নাকি আগের দিন রাত্রিবেলাই ঘরে সব সিল করে দিয়েছে। সাড়ে তিনশো বুথে এজেন্টই নেই।

ইকবাল: ওর মধ্যে তো চারশো-পাঁচশো করে রিগ করলে দেড় লাখের লিড হয়ে যাবে... নমাজ-টমাজ পড়তে যাবে না?

ববি: যাব, একটায় যাব। চলো।

ইকবাল: আমাকে কেএমডিএ-টা করে দিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE