বীরভূমে দাওয়াইটা কাজে লেগেছিল। ভোটের তিন দিন আগে জেলার পুলিশ সুপারকে সরানোয় অনুব্রত মণ্ডলের গুড়-জলের কৌশল অনেকটাই গুলিয়ে গিয়েছিল। আগামী সোমবারের ভোটের আগে একই প্রেসক্রিপশন নির্বাচন কমিশনের। শুক্রবার সরানো হল উত্তর ২৪ পরগনার এসপি তন্ময় রায়চৌধুরী ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পারভেজ সেলিমকে। বিভিন্ন জেলার ১৩ জন আইসি এবং ওসি-কেও এ দিন বদলি করেছে কমিশন। উত্তর ২৪ পরগনার নতুন এসপি হয়েছেন আনাপ্পা ই। আর দক্ষিণ ২৪ পরগনার নতুন ডিএম হয়েছেন অবনীন্দ্র সিংহ।
নির্বাচনের তিন দিন আগে জেলা পুলিশের শীর্ষকর্তাকে সরানোয় ভোট-প্রস্তুতি ব্যাহত হবে না? কমিশনের এক কর্তার বক্তব্য, ১৭ এপ্রিল বীরভূমে ভোটের তিন দিন আগে সরানো হয় এসপি-কে। অনুব্রত তথা কেষ্ট মণ্ডলের ‘দশানন’কে সামলাতে নতুন এসপি সব্যসাচীরমণ মিশ্র মাত্র দু’দিন সময় পেয়েছিলেন এবং বিরোধীদের বক্তব্য, ওইটুকু সময়েই তিনি অনেকটা সফল। কমিশনও তাঁর কাজে সন্তুষ্ট। সেই দৃষ্টান্ত মেনেই ২৫ এপ্রিল উত্তর ২৪ পরগনায় ভোটের তিন দিন আগে এসপি-কে সরানো হল।
কিন্তু ভোটের ঠিক মুখে কেন এই সিদ্ধান্ত? নবান্নের একাংশের ব্যাখ্যা, যাঁদের সরানো হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। কমিশন জেনেছে, কিছু জেলায় এসপি এবং নিচুতলার কিছু অফিসার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোটের দিন গণতন্ত্র লুঠের জন্য বিশেষ ছক করেছেন। সেই ছক বানচাল করে মানুষের অবাধ ভোট নিশ্চিত করতেই শেষ-মুহূর্তের বদলির অঙ্ক। ‘‘রদবদল কিছু দিন আগে হলে নতুন অফিসারের সঙ্গেও শাসক দলের দহরম-মহরম তৈরির সুযোগ থাকে। কিন্তু বদলি শেষ মুহূর্তে হলে সেই সম্ভাবনা অনেক কম’’— বলছেন নবান্নের এক কর্তা। এক বিরোধী নেতার মন্তব্য, ‘‘এ হল কমিশনের কেষ্টবধ-লাইন!’’
কমিশন সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের অন্যতম নেতা ও হাবড়ার প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে এসপি তন্ময় রায়চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধীরা বহু দিনই সরব। বাম জমানায় সিপিএম ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ছিলেন তন্ময়বাবু। কমিশনের মনে হয়েছে, এই পুলিশ কর্তা শাসক দলের তল্পিবাহক হয়েই কাজ করেন। নিজের অপসারণ প্রসঙ্গে তন্ময়বাবুর মন্তব্য, ‘‘কমিশনের নির্দেশ মেনে চলব।’’ যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর দাবি, তিনি কখনওই শাসক দলের কথায় চলেননি। বরং তাঁর জেলায় সব অপরাধের ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক রং না দেখে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছেন।
যাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তন্ময়বাবুর বিরুদ্ধে, সেই জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘৩১ জুলাই অবসরের পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী কোন দলে যোগ দেন, সেটা দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছি! কেবল পুলিশ অফিসার সরিয়ে কী হবে? জৈদী ভোটারও পাঠাতে পারেন!’’
সরানো হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সেলিমকেও। সেখানে ভোট ৩০ এপ্রিল। সেলিমের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, কলকাতার মেয়র তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অঙ্গুলিহেলনে তিনি জেলা চালান। এই অভিযোগ কমিশনেও জমা পড়েছে। সেলিম মুখ্যমন্ত্রীরও স্নেহভাজন বলে নবান্নে পরিচিত। এ দিনই বিকেলে হাওড়ার বালিতে এক সভায় সেলিমের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেছেন, ‘‘সেলিমের মতো ডিএম কম পাওয়া যায়।’’
আরও অভিযোগ, তৃণমূলের হামলায় ঘরছাড়াদের সংখ্যা সেলিম অনেক কমিয়ে দেখিয়েছেন কমিশনের কাছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি নিয়েও কমিশনকে ভুয়ো রিপোর্ট দিয়েছেন। আর অভিযোগ, ভোটে তৃণমূলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানোর জন্য কয়েক জন রিটার্নিং অফিসারকে ‘চাপ’ দিয়েছেন তিনি। সেলিমও নিজের অপসারণ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। আর শোভনবাবুর মন্তব্য, ‘‘এত করেও কোনও লাভ হবে না। তৃণমূলই ক্ষমতায় ফিরবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy