কার্টুন-কাণ্ড না হলে অধ্যাপক পরিচিতির গণ্ডি পেরিয়ে হয়তো কেউ তাঁকে সে ভাবে চিনতই না। তিনি নিজেও জানেন এ কথা।
সে সময়ে নিজেই বলতেন, ক্ষমতার রাজনীতি চান না। এখনও বলছেন, ‘‘লড়াইটা প্রতিবাদেরই অঙ্গ। যা হার-জিতে থেমে থাকবে না।’’
তা হলে অম্বিকেশ মহাপাত্র ভোটের ময়দানে কেন? তা-ও রীতিমতো তারকা কেন্দ্রে। বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে এই নির্দল প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী শুধু হেভিওয়েট-ই নন, খোদ ‘দিদি’র কাছের মানুষ, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
কেমিস্ট্রির ডক্টরেট, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গত চার বছর ধরে শাসক দলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী মুখ’ অম্বিকেশবাবুর স্পষ্ট জবাব, ‘‘পরিস্থিতির চাপে পড়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
২০১২-এর ১২ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কার্টুন পোস্ট করে সরকারের কোপে পড়েন অম্বিকেশ। মুখ্যমন্ত্রীর ‘মানহানি’র অভিযোগে তাঁর গ্রেফতার ঘিরে ক্ষোভ ছড়ায় সর্বত্র, তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। সেই শুরু। মাত্র এক দিন পরে জামিনে ছাড়া পেয়েই গড়ে তোলেন প্রতিবাদী আন্দোলন। যা দানা বাঁধে সুঁটিয়ার বরুণ বিশ্বাসের পরিবার, কামদুনির মৌসুমী ও টুম্পা কয়াল, মেদিনীপুরের শিলাদিত্য, হাওড়ার প্রতিমা দত্তদের নিয়ে। গড়ে ওঠে সংগঠন ‘আমরা আক্রান্ত’। অম্বিকেশবাবুর কথায়, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতীক নিয়ে নয়, ‘আমরা আক্রান্ত’-র প্রতিনিধি হয়ে ভোটে লড়ছি। আমাদের স্লোগান, অত্যাচারী শাসকের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করো।’’ তবে মুখে বলা যত সহজ, কাজটা যে ততটা সহজ নয়— জানেন অধ্যাপকও। নিজেই বলছেন, ‘‘জানি কাজটা কঠিন। তবে আমাদের সহযোগিতা করছে বাম ও গণতান্ত্রিক জোট। সঙ্গে রয়েছে এসইউসি এবং সিপিআিইএমএল-ও।’’
শুধু মুখে সমর্থন নয়, অর্থ এবং লোকবল দুই-ই দিচ্ছে বামেরা। আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছে কংগ্রেসও। অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও ‘আমরা আক্রান্ত’র নাম এখন বাংলার ঘরে ঘরে বলে মনে করেন অম্বিকেশ। তার সুফল মিলবে বলে বিশ্বাসও করেন। ইতিমধ্যেই ভোটযুদ্ধে তাঁর হয়ে প্রচার করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন এবং বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের নেতানেত্রীরা। তাই পরিচিত প্রতীক না থাকলেও প্রতিবাদের এই ভিন্ন ধরনে নিজেদের বলীয়ান বলেই মনে করছেন অম্বিকেশবাবুরা।
তা বলে কলকাতার মেয়র তথা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ‘কাননের’ এলাকায় দাঁড়ানোর ‘দুঃসাহস’!
মেয়রের অর্থবল, লোকবল এবং পেশীশক্তি অনেক বেশি স্বীকার করেই অম্বিকেশবাবু জানিয়ে দেন, শোভনবাবুর ‘কুর্কমের’ খতিয়ান জনগণের কাছে তুলে ধরাকেই গুরুত্ব দিতে চান তিনি। বললেন, ‘‘নারদের স্টিং অপারেশনে মেয়রের ঘুষ নেওয়ার ছবি লোকে টিভির পর্দায় দেখেছেন। হেভিওয়েট প্রার্থী শোভনবাবুর অর্থবল, লোকবলের উৎস কোথা থেকে, তা এখন বুঝছেন মানুষ।’’
তবে সে সব বাড়তি বলেই মনে করেন অধ্যাপক। বললেন, ‘‘ও সব তো বাজে খরচ। আমি তার ধারে কাছেও যেতে পারব না। তবে পরিচ্ছন্ন ভোটে এ সবের দরকার হয় না।’’ আলোচনায় উঠে এল সদ্য ঘটে যাওয়া আর এক ছবি কাণ্ডের বিষয়ও। প্রশ্ন তুললেন, কার্টুন-কাণ্ডে তাঁকে গারদে পুড়েছিল যে সরকার, সেই শাসক দলেরই সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রধানমন্ত্রীর ছবিতে অন্য জনের মুখ (প্রকাশ কারাত) বসানোর ‘সাইবার ক্রাইমে’ জড়ালেও তাঁর শাস্তি হলো না কেন? এ ক্ষেত্রে কেনই বা নীরব খোদ মুখ্যমন্ত্রীও?
ভোটারদের কাছে এই প্রতিবাদের ঝড়টাই পৌঁছে দিতে চান অম্বিকেশবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy