Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চড় মারুন কিন্তু চোর বলবেন না: মমতা

চোর মনে করলে তাঁকে যেন মানুষ ভোট না দেন— পাটুলির প্রচারসভায় বলেছিলেন দিন দুয়েক আগে। বুধবার বেহালা চৌরাস্তার সভায় চমকে দেওয়া যে বাক্যটি প্রয়োগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাকে ‘তূণের শেষ অস্ত্র’ বলেই মনে হচ্ছে অনেকের। নিজের কেন্দ্র ভবানীপুরে ভোট আগামী শনিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৫
Share: Save:

চোর মনে করলে তাঁকে যেন মানুষ ভোট না দেন— পাটুলির প্রচারসভায় বলেছিলেন দিন দুয়েক আগে। বুধবার বেহালা চৌরাস্তার সভায় চমকে দেওয়া যে বাক্যটি প্রয়োগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাকে ‘তূণের শেষ অস্ত্র’ বলেই মনে হচ্ছে অনেকের। নিজের কেন্দ্র ভবানীপুরে ভোট আগামী শনিবার। তার আগে এ দিন দিদি বলে বসেছেন, ‘‘যদি আমার কোনও অন্যায় হয়, আমাকে দু’টো চড় মারুন! আমি কিছু ভাবব না। কিন্তু চোর বললে, কুৎসা, অপমান করলে গায়ে লাগে।’’

সভা শেষে এই দিদিকে ‘অচেনা’ মনে হয়েছে অনেকেরই। তাঁদের মতে, একটা নারদ-কাণ্ড সামাল দিতে গিয়ে কী ভাবে তৃণমূল নেত্রীকে ধাপে ধাপে এই স্তরে নেমে আসতে হল, তা সত্যিই বিস্ময়কর। প্রথমে নারদ-ভিডিওকে পাত্তাই দিতে চাননি তিনি। তার পর কুলটিতে বলেন, মানুষ তাঁর উপরে অভিমান করলেও যেন আশীর্বাদের হাত না সরান। এর পর বিভিন্ন দলীয় প্রার্থীর সভায় নিয়মিত বলতে থাকেন, ‘‘ইনি কিন্তু চোর নন।’’ শেষে কলকাতার বৌবাজারের সভায় বলেই ফেলেন যে, আগে জানলে নারদ-অভিযুক্তদের তিনি ভোটের টিকিট দিতেন না।

এর পরেই দলের অন্দরে কার্যত বিদ্রোহের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ক্রমশ দেখা যায়, নারদ-অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন দিদি। কখনও বলেছেন, সংসারে অনেক ছেলে থাকলে দু-একটা ‘দুষ্টু’ হয়, কিন্তু মা তাদের তাড়ান না। কখনও নারদ-অভিযুক্তকে ‘আমার প্রিয়’ বলেছেন প্রকাশ্য সভায়। গত সোমবার পাটুলিতে বলেছিলেন, ‘‘চোর মনে হলে ভোট দেবেন না।’’ এ দিন সেই কথাকেও ছাপিয়ে গেলেন বেহালায়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বেহালা-পূর্ব হল অন্যতম নারদ-অভিযুক্ত শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র।
এ দিন তার আগেই মমতা সভা করেন আরও এক নারদ-অভিযুক্ত ফিরহাদ হাকিমের কেন্দ্র কলকাতা বন্দর এলাকায়।

বেহালার সভায় এ দিন দিদি বলেছেন, ‘‘আমার কথা বিশ্বাস না হলে আমায় বলে দেবেন। আমি কিছু মনে করব না। যত দিন আপনারা ভাববেন, তত দিনই থাকব।’’ যা শুনে বিরোধীদের কটাক্ষ, নারদ-ফাঁসে নেত্রীর এমনই দশা যে, নিষ্কৃতি পেতে শোভন-ফিরহাদের কেন্দ্রে গিয়ে নিজেকে ‘সৎ’ বলে তুলে ধরতে হচ্ছে তাঁকে!


মঞ্চে ওঠার মুখে হোঁচট খেলেন নেত্রী। মুহূর্তে সামলেও নিলেন।বুধবার মহেশতলায়
নির্বাচনী সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।

ঘটনাচক্রে, এ দিনই মমতার বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে প্রচারে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, ‘‘একটা বিধানসভা আসন— ভবানীপুরে বদলে দিন। গোটা রাজ্যের ভাগ্য বদলে যাবে।’’ দলীয় প্রার্থী চন্দ্র বসুর সমর্থনে ওই প্রচারসভায় অমিত দাবি করেন, বিমানবন্দরে একটি বাচ্চা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের জন্য ১৫০টি আসন দরকার কি না। তিনি তাকেও বুঝিয়ে এসেছেন, বদল আনতে একটি আসনে বদলই যথেষ্ট। সেটি ভবানীপুর।

প্রথম দফার ভোটের আগে রাজ্যে এসে সারদা, নারদ এবং উড়ালপুল নিয়ে মমতাকে বিঁধেছিলেন অমিত। উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের অভাবের জন্যও দুষেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিন ফের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘আমি কখনও কাউকে এত নির্লজ্জ ভাবে ঘুষ নিতে দেখিনি! আর অদ্ভুত ব্যাপার, যাঁরা ঘুষ নিলেন, মমতাজিও তাঁদের কিছু বললেন না! তাঁরা ভোটেও লড়ছেন!’’ বিজেপি সভাপতির দাবি, কেন্দ্রে দু’বছর সরকার চালানোর পরেও নরেন্দ্র মোদীর গায়ে কোনও কালি লাগেনি। তাঁর নেতৃত্বে দেশে সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের জনতারও বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে সেই উন্নয়নের সুফল নেওয়া উচিত।

ভবানীপুরের সভায় ওই কেন্দ্রের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে গিয়ে অমিত বলেন, ‘‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধা জানানোর বিরল সুযোগ পেয়েছেন ভবানীপুরের মানুষ। এখানকার বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসু নেতাজির নাতি।’’ সভায় হাজির ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এবং রাহুল সিংহ, প্রাক্তন ক্রিকেটার চেতন শর্মা, সাংসদ-অভিনেতা পরেশ রাওয়াল প্রমুখ। নারদ-প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যে পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেন তাঁরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE