মমতার বৃত্তে নেই নারদ-অভিযুক্তরা। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের মিছিলে। সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
রাত ফুরোলেই হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার দক্ষিণ অংশেও ভোট। তার আগে বিষ্যুৎবার বিকেলে শহরে মহামিছিল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দু’পাশে আড়াআড়ি ভাবে হাঁটলেন রাসবিহারী কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, টালিগঞ্জের অরূপ বিশ্বাস, কসবার জাভেদ আহমেদ খান। এমনকী সোনারপুর উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী ফিরদৌসি বেগমকেও চোখে পড়ল। অথচ আশ্চর্যজনক ভাবেই উধাও রইলেন তিন জন— সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম।
কেন? যাদবপুরের সুকান্ত সেতু থেকে শুরু করে ঢাকুরিয়া, গড়িয়াহাট হয়ে বালিগঞ্জ পর্যন্ত কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে হনহন করে হাঁটলেন দিদি। তবু মিছিল যেন আটকে গেল ওই এক প্রশ্নে। ‘সুব্রতদা কেন নেই?’, ‘ববিকে তো দেখা গেল না?’, ‘শোভন কোথায় গেলেন?’
তৃণমূলের তরফে এর একটা ‘সঙ্গত’ জবাব দেওয়া হয়েছে। দলীয় তরফে বলা হয়েছে, এটা ওঁদের এলাকা নয়। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বেহালার প্রার্থী, ববি হাকিম লড়ছেন বন্দরে। মিছিল সেই পথ দিয়ে তো যায়নি। তা ছাড়া ওঁরা নিজ নিজ এলাকায় প্রচারে ব্যস্ত।
কিন্তু তাই কি? নাকি নারদ কাণ্ডে তিন অভিযুক্তকে তাঁর মিছিলে ঢুকতেই দিলেন না মমতা?
তৃণমূলের ব্যাখ্যা যদি সঠিক হয়, তা হলে শোভন বা ফিরহাদ হাকিমের মিছিলে না থাকারই কথা। প্রশ্ন হল, তা হলে মিছিলে ফিরদৌসি কী করছিলেন। তিনি লড়ছেন সোনারপুর উত্তর কেন্দ্রে। তা ছাড়া মিছিল গিয়েছে গড়িয়াহাট-বালিগঞ্জ হয়ে। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শেষ দিনের প্রচারে দিদির পাশে তাঁর থাকাটাই স্বাভাবিক নয় কি?
এই প্রশ্নের মুখে তৃণমূলের তরফে নানা যুক্তি সাজানো হলেও তা দুর্বলই ঠেকেছে। আর সেটাই লুফে নিয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শনিবার ভবানীপুরে ভোট। মমতা ভয় পাচ্ছেন, নারদ কাণ্ডের প্রভাব পড়তে পারে সেখানে। তাই সুচিন্তিত ভাবে আড়াল করতে চেয়েছেন তিন মূর্তিকে।’’ একই শ্লেষ উড়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের থেকেও।
তৃণমূল নেতারাও ঘরোয়া আলোচনায় এর সত্যতা অস্বীকার করছেন না। তাঁরাও মনে করছেন, নারদের নেতিবাচক প্রভাব তৃণমূলের ভোট বাক্সে পড়ার ভরপুর আশঙ্কা রয়েছে। আর সেই আশঙ্কা থেকেই দিদি এক সময় বলেছিলেন, আগে জানলে নিশ্চয়ই ভাবতাম। ওঁদের টিকিট দিতাম না। পরে দলের অন্দরেই বিদ্রোহের মুখে পড়ে তা থেকে কৌশলে কিছুটা পিছু হটতে হয়েছে। কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে মঞ্চে বসিয়ে ‘আমার প্রিয়’ বলতে হয়েছে। কিন্তু ভোট ক্রমশ কলকাতায় এবং তাঁর নিজের কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে আসার পর থেকেই দিদির সুর ফের বদলে গিয়েছে। কখনও বলেছেন, ‘‘আমাকে চোর মনে করলে ভোট দেবেন না।’’ কখনও বলেছেন, ‘‘আমি অন্যায় করলে চড় মারুন। কিন্তু চোর বললে আমার গায়ে লাগে।’’ তৃণমূল নেতারাই মনে করছেন, এ কথা বলে আসলে নারদ অভিযুক্তদের থেকে নিজের দূরত্ব বাড়াতে চাইছেন দিদি। বোঝাতে চাইছেন, ওঁরা চোর হলেও আমি নই। আমাকে দেখেই ভোটটা দিন। ২৯৪ টা আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রার্থী।
শেষ বেলায় তাতে কতটা কাজ হয়, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy