Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
হরিপাল

‘পহেলে তফাত যাও’, মন্ত্রীকে নির্দেশ জওয়ানের

হরিপালের সেপাইগাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুপুর সাড়ে ১২টা। অহল্যাবাই রোড লাগোয়া ওই প্রাথমিক স্কুলের বুথের সামনে থেমনে গেলে তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার গাড়ি। বুথ প্রায় সুনসান। চড়া রোদে দাঁড়িয়ে হাতে গোনা কয়েক জন ভোটার। দাঁড়িয়ে ইনসাস হাতে এক জওয়ান।

হরিপালে একটি বুথের সামনে বেচারাম মান্না। ছবি: দীপঙ্কর দে।

হরিপালে একটি বুথের সামনে বেচারাম মান্না। ছবি: দীপঙ্কর দে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০২:২৩
Share: Save:

হরিপালের সেপাইগাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুপুর সাড়ে ১২টা। অহল্যাবাই রোড লাগোয়া ওই প্রাথমিক স্কুলের বুথের সামনে থেমনে গেলে তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার গাড়ি। বুথ প্রায় সুনসান। চড়া রোদে দাঁড়িয়ে হাতে গোনা কয়েক জন ভোটার। দাঁড়িয়ে ইনসাস হাতে এক জওয়ান।

গাড়ি থেকে নামার তোড়জোড় করছিলেন মন্ত্রী। তার আগেই হাঁ হাঁ করে ছুটে এলেন ওই জওয়ান। কারণ নিয়ম, বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে থাকা যাবে না। গাড়ির ভিতর থেকে ‘হাম ক্যান্ডিডেট হ্যায়’ বলে মন্ত্রী তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতেই একরোখা মেজাজ জওয়ানের পাল্টা বুলি ‘‘পহেলে তফাত যাও।’’

কী করবেন বুঝে উঠতে না পেরে কিছুটা অপ্রস্তুত মন্ত্রী। শে‌ষ পর্যন্ত চালক গাড়ি নিয়ে পিছোতে শুরু করলেন। ততক্ষণে বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেক্টর ইনচার্জ এসে হাজির। তিনিও মন্ত্রীর গাড়ি দূরে না রাখার জন্য ধমক দিলেন চালককে। তাতেই রেহাই মিলল না। গাড়িও তল্লাশি করল জওয়ানেরা। গাড়িতে রাখা একটি ব্যাগে কী আছে তাও জানতে চাইল তারা। এরপর অবশ্য মন্ত্রী সেখানে থাকেননি।

বিরোধীরা নন। শনিবার ষষ্ঠ দফার ভোটে হুগলিতে দিনভর শাসকদের অভিযোগের ঠেলায় পর্যবেক্ষকদের কানের পোকা মারার অবস্থা। কোথাও মুড়ি, আলুর দম নিয়ে যাওয়ার জন্য থানায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা, কোথাও আবার শাসকদলের এক আধা নেতাকে তাড়া করে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। বস্তুত কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপটে জাঙ্গিপাড়া আর চণ্ডীতলার কয়েকটি জায়গায় ‘আতঙ্কে’ ঘরেই স্বেচ্ছাবন্দি থাকতে বাধ্য হয়েছে শাসকদলের ডাকাবুকোরা।

ভোলা প্রাথমিক স্কুলে আলুর দম আর মুড়ি দলীয় কর্মীদের বিলি করছিলেন অশোক ধোলে। ভোর থাকতেই বেরিয়ে পড়া কর্মীদের জন্য টিফিনের আয়োজন। প্লাস্টিকে মুড়ি আর আলুর দম বিলি হচ্ছিল। হঠাৎই ফোনে খবর, এক কিলোমিটার দূরে কিঙ্করবাটিতে আধা সেনা আলুর দম মাটিতে ফেলে দিয়েছে। ভয়ে সিঁটিয়ে গেলেন তৃণমূলের কর্মীরা। মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে গেল এলাকা। সকালের টিফিনেই ‘চোনা’ ফেলে দিলে পুলিশ, আফসোস এক ব্লক নেতার। তাঁর খেদোক্তি, ‘‘বলুন, এটা কী ঠিক করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী? কী অন্যায় করেছিল ওরা? যদি ছেলেরা ‘ফল্স’ ভোট দিতে যেত তা হলে তোমরা আইনমতো ব্যবস্থা নাও। এটা কিন্তু ওরা বাড়াবাড়ি করছে।’’ হরিপুরে সাইকেলে চড়ে স্থানীয় কয়েকজন মানুষ নিজেদের কাজে যাচ্ছিলেন। আধা সেনা তাঁদের থামিয়ে সাইকেলের চাকার হাওয়া খুলে দেয়। দলের কর্মী-সমর্থকেরা পুলিশ-বাহিনীর প্রতি বিষোদ্গার করলেও বেচারামবাবুর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওঁরা আইনমাফিক কাজ করেছেন।’’

বস্তুত, এ দিন একেবারে ‘অন্য ভোট’ প্রত্যক্ষ করল গঙ্গা পারের জেলা হুগলি। শাসকদলের এক কর্মী বলেন, ‘‘আমরা উৎসব করে ভোট দিতাম। সবাই মিলে গল্প, খাওয়া দাওয়া। সেই চেহারাটাই মাটি করে দিল আধাসেনা।’’ জাঙ্গিপাড়ার জেলা পরিষদের সদস্য সেখ জব্বরের আবার করুণ হাল। শুক্রবার রাতেই পুলিশ তাঁর বাড়িতে হানা দেয়। তখন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। পাড়ায় ভোটের কাজে ছিলেন। খবর পেয়ে সরে পড়েন। তাঁকে না পেয়ে বাড়ির লোকজনকে ‘খবর পেলে জানিতে দিতে’ বলে যায় পুলিশ। জব্বরের বক্তব্য, ‘‘আমি কিছুই করিনি। আমার নামে না কি অভিযোগ আছে? তাই আমি আর বাড়ির বাইরে যাইনি।’’

জাঙ্গিপাড়ার বিদায়ী বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী অবশ্য ‘‘খুব ভাল পরিবেশে ভোট হয়েছে,’’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছে।

আর কমিশনের এমন ভোট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নাম না প্রকাশের র্শতে ভিন রাজ্য থেকে আসা এক পর্যবেক্ষকের কথায়, ‘‘আমরা এটাই চেয়েছিলাম। শুরুতেই এমন কড়া পুলিশিং হবে, যাতে কেউ সুযোগ না পায়। আমরা সেটাই করে দেখিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 central forces
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE