Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নবির সেমসাইড, দিদির ধমক

ফাইনাল ম্যাচে দলের বিক্ষুব্ধ চার নেতার ফাইনাল পাস মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু প্র্যাক্টিসেই যে সেমসাইড গোল!

মঞ্চেই তিরস্কার দলীয় প্রার্থী রহিম নবিকে। সোমবার পাণ্ডুয়ার  চালকল মাঠের মঞ্চে তাপস ঘোষের তোলা ছবি।

মঞ্চেই তিরস্কার দলীয় প্রার্থী রহিম নবিকে। সোমবার পাণ্ডুয়ার চালকল মাঠের মঞ্চে তাপস ঘোষের তোলা ছবি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
পাণ্ডুয়া শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৯
Share: Save:

ফাইনাল ম্যাচে দলের বিক্ষুব্ধ চার নেতার ফাইনাল পাস মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু প্র্যাক্টিসেই যে সেমসাইড গোল!

দর্শক থ! নেতাদের ফিসফাস!

আর গোলদাতা রহিম নবির মুখ নিচু! ‘দিদি’কেই গোল দিয়েছেন যে!

শুক্রবার ভরদুপুরে পাণ্ডুয়ার চালকল মাঠে এই গোল খেয়ে ‘দিদি’র মুখ লাল। ফুটবল মাঠ থেকে রাজনীতির মাঠে যাঁকে তুলে এনেছেন, তিনিই কি না পাশে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘‘পান্ডুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশা। উন্নয়নের কাজ কিছুই হয়নি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নতি খুবই দরকার।’’

সঙ্গে সঙ্গে ‘দিদি’র ধমক, ‘‘চুপ কর।’’ তার পরে বোঝানোর ভঙ্গিতে নবির দিকে তাকিয়ে ‘দিদি’ বলতে থাকেন, ‘‘রাজ্যে একটাই পিজি হাসপাতাল হয়। একটাই মেডিক্যাল কলেজ হয়। সব জায়গায় ওই মানের হাসপাতাল করা সম্ভব নয়। মানুষ চায় তার বাড়ির কাছে রেল স্টেশন। সেটা সব সময় সম্ভব নয়।’’

দলের ওই নির্বাচনী সভায় এ দিন নিখাদ উন্নয়ন ফেরি করছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুডেই ছিলেন। আওড়াচ্ছিলেন উন্নয়নের তালিকা। হঠাৎ থামলেন। উন্নয়নের ফিরিস্তি বলিয়ে নেওয়া শুরু করলেন স্থানীয় নেতাদের দিয়ে। বলাগড়ের নেতা শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় সবুজদ্বীপের রাস্তার কথা বললেন। পাণ্ডুয়ার নেতা আনিসুল ইসলামও গড় গড় করে বেশ কিছু কথা বললেন। তার পরে মমতা ডাকলেন পাণ্ডুয়ার দলীয় প্রার্থী রহিম নবিকে। আর শুরুতেই কি না নবির ওই কথা!

ফুটবল মাঠে যে কোনও পজিশনে খেলতে অভ্যস্ত নবি। ময়দানের পরিভাষায় ‘ইউটিলিটি ফুটবলার’। কিন্তু রাজনীতির মাঠে তাঁর কোচকেই যে তিনি বিপাকে ফেলে দেবেন, তা আন্দাজ করতে পারেননি মঞ্চে হাজির অন্য নেতারা। পরে অবশ্য মমতা পরিস্থিতি হাল্কা করার চেষ্টা করেন। বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি চাইলেও কেন রাজ্যে হাসপাতালগুলির হাল ফেরানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন,‘‘ হাসপাতাল চালাতে ডাক্তার লাগে। এখন ডাক্তারই পাওয়া যায় না। ডাক্তার তৈরি হয় বিশেষ পড়াশোনার মাধ্যমে। সর্বভারতীয় স্তরে বিজ্ঞাপন দিয়েও ডাক্তার মিলছে না।’’

কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ভরা মাঠে শুরু হয়ে গিয়েছে গুঞ্জন। নবি ফের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলা শুরু করলেও সেই গুঞ্জন থামেনি। পরে নবি আর ওই পরিস্থিতি নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। মমতাও বেশিক্ষণ
বিরক্তি ধরে রাখেননি। বক্তৃতাতেও শোনা যায়নি পুরনো ঝাঁঝ। বিনয়ী সুরে তিনি বলেন, ‘‘বলাগড়ে অসীম (মাজি) বা পাণ্ডুয়ায় নবি নয়। ধরে নিন দু’জায়গাতেই আমিই প্রার্থী।’’ তার পরে প্রশ্ন, ‘‘কী এ বার আমার ভোটটা দেবেন তো?’’

জনতা হাত তুলেছে। মুখে হাসি ফুটেছে মমতার। স্থানীয় নেতাদের দিয়ে প্রার্থীদের জেতানোর প্রশ্নে শপথ করিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু দলের একাংশ বলছে, পাণ্ডুয়া কঠিন ঠাঁই। একেই তো এখানে বামেরা শক্তিশালী। তার উপরে নবিকে প্রার্থী হিসেবে মানতে না চেয়ে দলের চার গুরুত্বপূর্ণ নেতা ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের চাপে তাঁরা শেষ পর্যন্ত নবিকে মেনে নেন। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচে
তাঁদের পাস পাওয়া নিয়ে সন্দিহান দলের অনেকেই।

তার উপরে এ দিন নবির বক্তব্য। দলের এক নেতা তো বলেই দিলেন, ‘‘গতবারে প্রবল মমতা-ঝড়়েও এখানে হারতে হয়েছে। সেখানে এ বার প্রার্থীই এমন বললেন, তাতে ভুল বার্তা গেল। শেষরক্ষা হলে হয়!’’ দলের কেউ কেউ অবশ্য নবিকে রাজনীতিতে ‘নবাগত’ বলে তাঁর বক্তব্যকে লঘু করার চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, ওরা তো সেমসাইড গোল খেয়ে গিয়েছে। বল জাল ছেঁড়েনি এই যা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE