Advertisement
E-Paper

জোটের দায়ে রাহুলের মাঠ ভরাচ্ছে বামেরাই

সে এক সময় ছিল। যখন তাঁর ঠাকুরমা, বাবা জেলায় বড় সভা করেছেন। কিন্তু জেলার সিপিএম নেতারা সে সবের খোঁজ রাখার প্রয়োজনও মনে করতেন না! সে এক সময় ছিল। যখন তিনি নিজেও এই জেলায় সভা করেছেন। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের আগের সেই সভায় তাঁর আক্রমণের মূল নিশানাই ছিলেন সিপিএম প্রার্থী। তৃণমূলের সঙ্গে তখন তাঁর দলের বন্ধুত্ব।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৬
হাতে হাত মিলিয়ে। রাহুল গাঁধীর সভার প্রস্তুতি বাঁকুড়ায়। শুক্রবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

হাতে হাত মিলিয়ে। রাহুল গাঁধীর সভার প্রস্তুতি বাঁকুড়ায়। শুক্রবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

সে এক সময় ছিল। যখন তাঁর ঠাকুরমা, বাবা জেলায় বড় সভা করেছেন। কিন্তু জেলার সিপিএম নেতারা সে সবের খোঁজ রাখার প্রয়োজনও মনে করতেন না!

সে এক সময় ছিল। যখন তিনি নিজেও এই জেলায় সভা করেছেন। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের আগের সেই সভায় তাঁর আক্রমণের মূল নিশানাই ছিলেন সিপিএম প্রার্থী। তৃণমূলের সঙ্গে তখন তাঁর দলের বন্ধুত্ব। তখনও সেই সভাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে জেলা সিপিএম। ভোটে ড্যাংড্যাং করে জিতেছেন সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়া।

আজ, শনিবার ফের তিনি জেলায় আসছেন। কিন্তু সময় বদলেছে। তৃণমূলের দাপটে কোণঠাসা হয়ে বদলেছে জেলার সিপিএমও।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাই বাঁকুড়ায় কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর সভা সফল করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন জেলার তাবড় সিপিএম নেতারা! এ বার বাঁকুড়া জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে শুধু কংগ্রেস প্রার্থীরাই নন, রাহুলের সভায় জেলার একাধিক কেন্দ্রের বাম প্রার্থীরাও থাকবেন। আড়ালে কংগ্রেস নেতারাই কবুল করছেন, রাহুলের সভা উতরোতে তৃণমূলের এই ভরা বাজারেও সিপিএমের চওড়া কাঁধই ভরসা! সিপিএম নেতা-কর্মীরা ছুঁৎমার্গ সরিয়ে রাহুলের সভায় ভিড় করানোর চ্যালেঞ্জ ঘাড়ে নিয়েছেন।

কী ভাবে?

জেলা সিপিএম সূত্রের খবর— লোকাল এবং জোনাল কমিটির সম্পাদকদের বলে দেওয়া হয়েছে, নিজেদের এলাকা থেকে যত বেশি সম্ভব লোক আনতে। বাড়ি-বাড়ি প্রচার করতে গিয়ে ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে রাহুল গাঁধীর সভায় আসার আমন্ত্রণপত্র। একই দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা রয়েছে বলে আপাতত কমবেশি ৮০টি বাস জোগাড় করতে পেরেছেন বামেরা। সে জন্য জনতাকে সভায় আনতে শ’চারেক ছোট গাড়ির বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাতে ট্রাক্টর থেকে ট্রেকার, এমনকী, টোটোও রয়েছে। গোটা ব্যাপারটা নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা কমিটি এবং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরা। দলের নিচুতলার কর্মীদের বার্তা দেওয়া হয়েছে—‘দশ জনকে সভায় আনতে পারাটা কিস্যু নয়। চেষ্টা করুন একশো জনকে আনতে’। সেই সঙ্গে চলছে জেলা কংগ্রেসের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক। পাছে, আয়োজনে এক রত্তি ত্রুটি না হয়।

শুক্রবার সকাল থেকে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলমাধব গুপ্ত, জেলা নেতা পদ্মনাভ বিশ্বাসেরা যখন তামলিবাঁধ ময়দানে রাহুলের জনসভার মঞ্চের কাজ দেখতে ব্যস্ত, তখন শহরের স্কুলডাঙায় সিপিএমের বাঁকুড়া জোনাল কমিটির অফিসে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রতীপ মুখোপাধ্যায়, জেলা কমিটির সদস্য সুবিকাশ চৌধুরীরা কর্মী-সমর্থকদের আনতে যানবাহনের ব্যবস্থা করতে প্রাণপাত করছেন। তামলিবাঁধে গিয়ে দেখা গেল, টকটকে লাল গেঞ্জি পরা সিপিএম কর্মীর হাতে হাত চিহ্ন আঁকা পতাকা বাধার সুতলি জোগাচ্ছেন সাদা চটি পরা এক কংগ্রেস নেতা।

সিপিএমের বাঁকুড়া জোনাল অফিসে মোবাইল ফোন বাজল প্রতীপবাবুর। ও প্রান্তে জেলা পুলিশের এক কর্তা। বক্তব্য: কত লোক হতে পারে, একটা আন্দাজ দিন! হাসতে হাসতে প্রতীপবাবু বললেন, “ধরুন ২৫ হাজার!’’

জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় মানছেন, বাঁকুড়ায় তাঁদের সংগঠনের এখন যা অবস্থা, তাতে একার জোরে সভা ভরানো মুশকিলই ছিল। সিপিএম তাঁদের হয়ে ব্যাট করায় কাজটা সহজ হয়ে যাচ্ছে! ইন্দিরা-রাজীবের ছায়া এড়িয়ে চলতেন যাঁরা, তাঁরাই এখন রাহুলের সভা ভরানোর মূল দায়িত্বে? প্রতীপবাবুর জবাব, ‘‘তৃণমূলকে সরাতে মানুষ জোট চেয়েছেন। রাহুলের সভাটা আমাদের কাছে একটা এমন সভা, যা এই জোটকে আরও সুদৃঢ় করবে।’’

এত তুঙ্গ আয়োজনের মধ্যেও ওই সভায় সিপিএম রাজ্য স্তরের কাউকে না পাঠানোয় সামান্য অস্বস্তি আছে। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘সনিয়া বা রাহুল গাঁধীর মতো কেন্দ্রীয় নেতার সভায় অন্য দলের কাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে সেটা আমাদের হাইকম্যান্ড ঠিক করে। আমি নিজে তো নারায়ণগড়ে যাচ্ছি সূর্যকান্ত মিশ্রের সভায়।’’

সভা ভরাতে মরিয়া বামকর্মীদের মন্তব্য, ‘‘ভিড় কত হবে, জানা নেই। কিন্তু সব চেয়ে বড় ব্যাপার, জোট জমে গিয়েছে!’’

assembly election 2016 Rahul gandhi left-cong alliance bankura campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy