Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ঘুষ ভিডিওর অস্বস্তির মধ্যেই জোড়া ফুলে এবার জাল ছবির হুল

সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপির সখ্য নিয়ে নারদের ধাঁচে ভিডিও এবং ছবি দেখাতে গিয়ে হুল ফুটল তৃণমূলেরই জোড়া ফুলে।

বিজেপির ওয়েবসাইটে আসল-নকল।

বিজেপির ওয়েবসাইটে আসল-নকল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপির সখ্য নিয়ে নারদের ধাঁচে ভিডিও এবং ছবি দেখাতে গিয়ে হুল ফুটল তৃণমূলেরই জোড়া ফুলে।

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই শনিবার দুপুরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন ভিডিও এবং ছবি দেখান। চার ঘণ্টার মধ্যে ওই ছবিগুলির মধ্যে একটি প্রত্যাহার করে নেয় শাসক দল। সন্ধ্যার পরে তৃণমূলের তরফে টুইট করা হয়, ‘‘সাংবাদিক বৈঠকে দু’টি ভিডিও ও ছ’টি ছবি দেখানো হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছবি ‘ফটোশপ’-এর মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা তা জানতে পারার পরেই ছবিটি সরিয়ে নেওয়া হয়।’’ ডেরেক কী দেখিয়েছিলেন? শনিবার দুপুরে বালিগঞ্জের আহিরিপুকুরে নিজের অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করেন ওই তৃণমূল নেতা। বিজেপি নেতারা নিজেদের অফিসে নারদ স্টিং অপারেশনের একের পর এক ভিডিও ফুটেজ দেখান। অনেকটা সেই কায়দায় এ দিন বড় কম্পিউটার স্ক্রিন লাগিয়ে ছবি দেখানোর ব্যবস্থা ছিল ডেরেকের দফতরেও। তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘রাহুল কংগ্রেসের আশ্চর্য বালক (ওয়ান্ডার বয়)।’’ তার পরে কেরল ও পশ্চিমবঙ্গে রাহুলের দু’টি বক্তৃতার ভিডিও দেখান তিনি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কেরলে রাহুল সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছেন। আবার এ রাজ্যে এসে দু’দল একজোট হয়ে ভোটে লড়ার কথা বলছেন। ওই ভিডিও দেখিয়ে ডেরেক কংগ্রেস-সিপিএমের আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার পরে তিনি ছ’টি স্থিরচিত্র দেখান সাংবাদিকদের। তার মধ্যেই একটি ছবি নিয়েই বিতর্ক।

ওই স্থিরচিত্রে দেখা গিয়েছে সিপিএমের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংহ। ডেরেকের সাংবাদিক বৈঠকের পরেই এই ছবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল সাইটে। তখনই জানা যায়, ওই ছবি জাল। এর পরেই ময়দানে নামেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, তৃণমূল যে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছিল, তা মানুষের মন থেকে সরানো যাবে না। বিভ্রান্তিকর ছবি দেখিয়ে শাসক দল ভোটারদের প্রভাবিত করতে চেয়েছিল, এই মর্মে নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ জানাবেন বিরোধীরা। যাঁর ছবি ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত, সেই প্রকাশ কারাট বলেন, ‘‘রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা হওয়ার কখনও সুযোগ হয়নি। এটা একেবারেই জাল ছবি।’’ সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘নারদ ফুটেজ প্রকাশের পরে মমতা বলেছিলেন, ওটা ভেজাল। এখন দেখা যাচ্ছে ভেজালের কারবার তৃণমূল-ই করে।’’ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজার মুখে মাছি পড়েছিল। রাজা বাঁদরকে তলোয়ার দিয়েছিলেন মাছি তাড়াতে। বাঁদর রাজার নাক কেটে দিয়েছিল। ডেরেকও মাছি তাড়াতে নেত্রীর নাক কাটলেন!’’ আর বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এই ঘটনাকে সাইবার অপরাধ বলেই মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘‘আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। প্রয়োজনে এফআইআর করব।’’

সাইবার ফরেন্সিক ও আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ছবিতে এই ধরনের কারসাজি করা হলে তা বৈদ্যুতিন নথি জালিয়াতির আওতায় পড়বে। কারও বদনামের জন্য জালিয়াতি করা হলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৫ এবং ৪৬৯ ধারায় মামলা রুজু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল এবং জরিমানা হতে পারে। এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে মানহানির মামলাও দায়ের করা যেতে পারে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায় ও দীনেশ ত্রিবেদীর ব্যঙ্গচিত্র ই-মেলে ‘ফরোয়ার্ড’ করে গ্রেফতার হয়েছিলেন অম্বিকেশ মহাপাত্র। এখন ‘আমরা আক্রান্ত’-এর জোট সমর্থিত প্রার্থী তিনি। অম্বিকেশবাবুর দাবি, ‘‘আমি ব্যঙ্গচিত্র ফরোয়ার্ড করেছিলাম। ডেরেক তো জাল ছবি দেখিয়েছেন। এখনই ওঁকে গ্রেফতার করা উচিত।’’

দুপুরে ভিডিও-ছবি দেখানোর আগে ডেরেক বলেন, ‘‘নির্বাচন চলছে, তাই এক-দেড় মাস কোনও সাংবাদিক বৈঠক করিনি। কিন্তু আজ (শনিবার) দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আপনাদের (সাংবাদিকদের) ডেকেছি।’’ তখনই রাজনাথ-কারাট ছবি দেখাতে দেখাতে ডেরেক বলেছিলেন, ‘‘এটা আমার সবচেয়ে পছন্দের ছবি।’’ আর রাতে বলেছেন, ‘‘ইন্টারনেট থেকে আমাদের ‘রিসার্চ টিম’ ছবিগুলো নিয়েছিল। এর মধ্যে একটি ছবি ফটোশপ করা রয়েছে তা জানার সঙ্গে সঙ্গে ওই ছবি সরিয়ে দিয়েছি।’’ ছবি-কাণ্ডের দায় নিজের কাঁধেই নিয়েছেন ডেরেক। বলেছেন, ‘‘ভুল হয়েছে। ক্ষমা চাইছি।’’

তৃণমূলের অন্দরের খবর, এই কঠিন সময়ে অকারণে বিড়ম্বনা ডেকে আনায় বিব্রত শীর্ষ নেতারা। তাঁরা ডেরেককে ভর্ৎসনাও করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE