সলমন খান একটা ব্যাপার বটে। সলমন কি দারুণ অভিনেতা? না। সলমনের চেয়ে ভাল দেখতে হিরো কি বলিউডে নেই? আছে। সলমনের চেয়েও অ্যাকশনে দড় হিরো নেই? আছে। সলমনের চেয়ে ভাল নাচিয়ে? আছে। সলমনের চেয়ে বেশি রোম্যান্টিক? আছেই আছে।
কিন্তু সলমন খান একটা ব্যাপার বটে। তিনি নিজেই একটা আস্ত প্যাকেজ। এমন এক প্যাকেজ, বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না। এমন এক প্যাকেজ, যার কাঁধে ভর দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি চোখ বুজে শত কোটি টাকা কামায়। কামাতেই থাকে। সে সব ছবির মাথামুন্ডু আছে কি নেই, তাই নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না। তোলার দরকারই হয় না। ছবিতে সলমন আছেন, ব্যস। সুতরাং ঈদের ছুটিতে ‘সুলতান’ এ বছরের বক্স অফিসে রেকর্ড গড়ল, এটা কোনও খবর নয়। এমনটা না ঘটলেই খবর হত।
আসল খবরটা অন্য জায়গায়। সেটা হল, সলমন বদলাচ্ছেন। বদলাতে শুরু করেছেন। সলমন মানেই মাইন্ডলেস ছবি, এই সমীকরণটা এ বার ভাঙতে চাইছেন ভাইজান। ‘বজরঙ্গী’ ছিল সেই গন্তব্যের প্রথম ধাপ, পরেরটা ‘সুলতান’। বদলতা বলিউডে সলমনও ইস্যুভিত্তিক ছবির দিকে ঝুঁকছেন। ‘বজরঙ্গী’র মতো ছবি সলমন আগে করেননি, ‘সুলতান’ও তাঁর তিজোরিতে প্রথম স্পোর্টস ফিল্ম। লক্ষ করার বিষয়, কুস্তি নিয়ে বলিউড যেন হঠাৎই খুব মেতে উঠেছে। অলিম্পিক সাফল্য নিশ্চয় তার একটা কারণ। আর একটা কারণ বোধ করি, কুস্তিতে যোগচর্চার মতোই আর একটা খাঁটি দেশীয় জিনিস পাওয়া গিয়েছে যা জাতীয়তাবাদের ভাল টনিক হতে পারে। অতএব দেশি বয়েজ-এর নতুন নেশা কুস্তি। শুধু বয়েজ না, গার্লসও। ‘বেটি বঁচাও’য়ের সঙ্গেও কুস্তিটা যায় ভাল। ‘সুলতান’য়ে
সলমন কুস্তি শিখছেন কুস্তিগির অনুষ্কার দিল জিতবেন বলেই তো!
‘সুলতান’ই তো দেখাল, সলমনের ছবিতে নায়িকারাও বদলে যাওয়ার দিকে এগোচ্ছেন। সলমনের কেরিয়ারের প্রথম পর্বে নায়িকাদের ভালই কদর ছিল। ভাগ্যশ্রী, মাধুরী, ঐশ্বর্যা...। কিন্তু সলমনের দ্বিতীয় পর্ব, ‘তেরে নাম’-উত্তর কালে সলমনের নায়িকারা সৌন্দর্য বর্ধন ছাড়া তেমন কিছু করেননি। করিনা ছাড়া খুব দাপুটে অভিনেত্রীদের সলমনের পাশে দেখা যায়নি। দরকারই হয়নি। ছবি জুড়ে সলমনই সব। অনুষ্কাকে দিয়ে সেই ধারাটাও কিছুটা ভাঙার চেষ্টা হল।
তবে হ্যাঁ, চেষ্টাটুকুই হল। তার বেশি না। জাঠ সমাজে মেয়েদের অবস্থান বদলে দেওয়ার যে শপথবাক্য অনুষ্কার মুখে শুনলাম, কাজে তার কোনও প্রতিফলন দেখলাম না। সলমনের খুশির জন্য গর্ভবতী অনুষ্কা সন্তানকেই অগ্রাধিকার দিলেন, অলিম্পিকে গেলেন না। এমনকী সলমনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরেও তাঁকে নিজের কেরিয়ার নতুন করে শুরু করার কথা ভাবতে দেখলাম না। তিনি বাবার আখড়ায় বাচ্চাদের কুস্তি শিখিয়েই দিন কাটালেন। এবং সেই বাচ্চাদের মধ্যেও চোখে পড়ল না কোনও মেয়েকে।
আর সলমন কী করলেন? অশিক্ষিত গ্রাম্য যুবক অনুষ্কার কাছে থাপ্পড় খেয়ে কুস্তি শিখতে এসেছিলেন। দৌড়ে ট্রেনকে হার মানাচ্ছিলেন। তার পর অলিম্পিক-টলিম্পিক জিতে তাঁর পায়া ভারী হয়ে গেল। আর তখনই জীবন তাঁকে দ্বিতীয় থাপ্পড়টা মারল। সলমন, অনুষ্কা-বিচ্ছিন্ন সলমন ‘বিয়িং হিউম্যান’য়ের সাধনায় লেগে গেলেন। বেশ কয়েক বছর পার। প্রৌঢ় সলমনকে মিক্সড মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় নামানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলেন দিল্লির এক ব্যবসায়ী। রণদীপ হুডার কাছে আবার প্রশিক্ষণ শুরু হল। বাকিটা স্পোর্টস ফিল্মের অত্যাবশ্যক শর্ত মেনে এগোল। অর্থাৎ হিরো অবশ্যম্ভাবী হারের মুখ থেকে ফিরে এসে চ্যাম্পিয়ন হলেন। এটা তো হবেই, হতে বাধ্য। কিন্তু আলি আব্বাস জাফর সাহেব, আপনি এই অতি চেনা পথটা হেঁটে আসতে এতটা সময় খরচ করলেন কেন? এত আজগুবি রসেরই বা অবতারণা করলেন কেন? দানবীয় যোদ্ধাদের হাতে সলমন যে কত মার খেলেন, কত বার তাঁর চোখ উলটে গেল আর কত বার যে তিনি ফের ঘুসি পাকালেন...! শেষ বার তো অনুষ্কার হাত লেগে থলি ভর্তি দেশ কি মিট্টি উপুড় হয়ে পড়ল। সেই মাটির সুঘ্রাণ সলমনের নাকে গিয়ে ঢুকতে তবে তিনি যমের দুয়ার থেকে ফিরলেন!
আলি আব্বাস এতটা বাড়াবাড়ি করলেন বলেই না সলমন মুখ ফস্কে আজেবাজে কথা কয়ে ফেললেন! নইলে এই যে সলমন একটা দোষে-গুণে চরিত্র করলেন, এই যে তিনি তাঁর যাবতীয় প্লাস-মাইনাস নিয়েও তাঁর মতো করে একটা অনুচ্চকিত অভিনয় করার চেষ্টা করলেন, এই যে তিনি যশরাজের ব্যানারে এসে শাহরুখকে নিয়ে ভাল ভাল কথা বললেন, সেগুলো নিয়ে আরও কত কালি খরচ করা যেত! কিন্তু বিধি বাম! লক্ষ্মী-সরস্বতী সলমনকে কিছুতেই একসঙ্গে কৃপা করছেন না! না হলে পর্দায় যত বার সলমনকে হাতজোড় করতে দেখলাম, পর্দার বাইরে তার একটা রিপ্লে হতে পারত না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy