Advertisement
০১ জুন ২০২৪
Pregnancy

Pregnancy after 35: ৩৫ বছর বয়সের পর মা হতে চাইলে কোন পরীক্ষাগুলি করানো আবশ্যিক, জানালেন চিকিৎসকরা

বয়স ৩৫ পেরোনোর পর অনেক মেয়েই প্রথম বার মা হন। কিন্তু তাঁদের জন্য গর্ভধারণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ? সতর্ক হবেন কী ভাবে? জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২২ ১৬:২৩
Share: Save:

এ দেশে প্রত্যেক দু’সেকেন্ডে একজন শিশু ভূমিষ্ঠ হচ্ছে। বছরে সেই সংখ্যাটা দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি ৫৫ লক্ষ। এদের মধ্যে প্রায় ১১ লক্ষ বাচ্চা জন্মায় নানা ধরনের শারীরিক অপূর্ণতা নিয়ে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাসুদেব মুখোপাধ্যায়ের মতে, এর বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটি হল বেশি বয়সে মা হওয়া।

চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, ১২ বছর থেকে ৫০ বছর বয়স মেয়েদের ঊর্বর সময়। অর্থাৎ এই বয়সে মা হওয়া সম্ভব। কিন্তু ৩৫ বা তারও বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করলে হবু মা ও গর্ভস্থ শিশু দু’জনেরই নানা শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে। স্ত্রী ও ধাত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম বার মা হওয়ার আদর্শ বয়স ২৫ থেকে ৩০.৫ বছর। ৩৫ বছরের পর যাঁরা প্রথম বার মা হতে চলেছেন তাঁদের কিছু শারীরিক সমস্যার সম্ভাবনা থাকে।

সম্প্রতি ৩৫ সপ্তাহের সন্তানসম্ভবার গর্ভস্থ ভ্রূণ ও হবু মায়ের শারীরিক জটিলতার কথা বিচার করে আদালত গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়ায় চারদিকে শোরগোল পড়ে গেছে। আসলে নিউরাল টিউব ডিফেক্ট নামে এক ধরণের জন্মগত ত্রুটির কারণে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কোনও ভাবেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে মধ্য তিরিশে যাঁরা মা হতে চান তাঁদের কিছু আগাম সতর্কতা নেওয়া উচিত বলে জানালেন বাসুদেব মুখোপাধ্যায়।

মাথায় রাখুন কিছ বিষয়—

১) মা হওয়ার পরিকল্পনা করার সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়ার উচিত। প্রস্তুতিপর্ব থেকেই নিয়ম করে ফলিক অ্যাসিড ওষুধ খাওয়া জরুরী।

২) সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে ‘প্রি প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিং’ করিয়ে নিলে ভাল হয়। এ ক্ষেত্রে হবু সন্তান ও মায়ের অসুস্থ হয়ে পড়া ও অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি কমে যায়।

৩) সম্প্রতি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়েশন’-এর ‘সারক্যুলেশন’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গিয়েছে যে সন্তান ধারণের আগে হবু মায়ের হৃদ্‌যন্ত্র পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার। ফিটাল মেডিসিনের চিকিৎসক দেবস্মিতা মণ্ডল জানালেন যে, ভ্রূণের ১৮-২০ সপ্তাহ বয়সে ফিটাল আলট্রা সাউন্ডের সাহায্যে ভ্রুণের হৃৎপিণ্ডের পরিষ্কার ছবি পাওয়া যায়।

৪) বেশি বয়সে মা হওয়া ‘হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি’ গ্রুপে পড়ে। তাই গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই ফিটাল মেডিসিন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা জরুরী। এতে ভবিষ্যতের অনেক জটিলতা ও সমস্যা প্রতিরোধ করা যায় বলে ভরসা দিলেন দেবস্মিতা।

৫) গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে বাড়তি সাবধানতা নেওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় ওষুধ যেমন ফলিক অ্যাসিড ও অন্য ওষুধ খেতে ভুললে চলবে না।

৬) সাধারণ স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে কোভিড বিধিও মেনে চলতে হবে।

৭) অনেক সময়ে হবু মায়ের সুগার বা থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সাধারণ পরীক্ষা অর্থাৎ ফাস্টিং বা পিপি সুগার টেস্ট করিয়ে ধরা নাও যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এইচবিএ১সি টেষ্ট ও গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করা প্রয়োজন।

৮) থাইরয়েডের অসুবিধে থাকলেও অনেক সময়ে ভ্রূণ স্বাভাবিক ভাবে বাড়তে পারে না। টিথ্রি, টিফোর, টিএসএইচ টেস্ট করিয়ে স্বভাবিক ফল পেলেও অনেক সময়ে থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যের কারণেই গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টি টিজি অ্যান্টিবডি ও টিপিও পরীক্ষা করানো দরকার। এর সাহায্যে থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য জেনে নিয়ে ওষুধ খাওয়া দরকার।

৯) হবু মায়ের রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যা (ক্লটিং ডিসর্ডার) থাকলেও মিসক্যারেজের ঝুঁকি বাড়ে। তাই মধ্য তিরিশে যাঁরা মা হতে চান তাঁদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগোন উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pregnancy Gynecology Pregnancy Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE