সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।
চালু হওয়ার চার বছর পার। তবু এখনও বেশ কয়েকটি বিভাগ চালুই হয়নি বর্ধমান শহরের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। ক্ষুুব্ধ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা ও কল্যাণ কেন্দ্র সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ওই বিভাগগুলি চালু করার আবেদন জানিয়েছে। আগেও ওই আবেদন জানিয়েছিলেন তারা।
কয়েক বছর আগে, ওই হাসপাতাল চালু করার বিষয়টি গড়িয়েছিল হাইকোর্ট পর্যন্ত। বর্ধমানের ক্রেতা সুরক্ষা ও কল্যাণ কেন্দ্রের তরফে ওই হাসপাতাল চালু করতে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলার শুনানিতে হাজির হয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবি, বিচারপতি বীরেন ঘোষ ও অলোককুমার বসুকে জানিয়েছিলেন, সরকার অনাময় হাসপাতাল নিজের দায়িত্বে চালু করবে। তখনই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপর চাপ কমাতে অনাময় হাসপাতালে নিউরোলজি, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, হেমাটোলজি, গ্র্যাসট্রো-এন্ট্রোলজি, এন্ডক্রিনোলজি এবং অঙ্কোলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলিকে চালু করার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই দাবি আজও মেটেনি। জেলা ক্রেতা সুরক্ষা ও কল্যাণ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কুদরাতুল আবেদিনের দাবি, “অনাময় হাসপাতালে ওই বিভাগগুলির বেশিরভাগই চালু হয়নি। ফলে জেলা এবং ভিন জেলার মানুষের সমস্যার সমাধানও হয়নি। সরকার আমাদের আবেদনের কথা মাথায় রেখে ওই বিভাগগুলি নতুন করে খোলার ব্যবস্থা না করলে ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে আমাদের।”
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নতুন বিভাগ খোলার জায়গা না থাকায় ১৯৯০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সাহায্যে বর্ধমানের আলিশা মৌজায় ২০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল গড়া হয়। তারপরে প্রায় ১০ বছর হাসপাতালটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। পরে হাসপাতালটির সদব্যবহারের জন্য তা তুলে দেওয়া হয়েছিল জেলা পরিষদের হাতে। জেলা পরিষদ সরকারি খরচে নির্মিত ওই হাসপাতালটি বর্ধমানের এক চিকিৎসককে নার্সিংহোম হিসেবে খুলতে ৩১ বছরের নিঃশর্ত ইজারা দেওয়ায়, ক্ষুব্ধ শহরবাসী প্রতিবাদ শুরু করেন। জেলা ক্রেতা ও কল্যাণ কেন্দ্র ওই ঘটনার কথা জানতে পেরে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে। তবে হাইকোর্ট রায় দেওয়ার আগেই বর্ধমানের তৎকালীন জেলাশাসক সুব্রত গুপ্ত সরকারি আইনজীবিকে জানিয়ে দেন, হাসপাতালটি সরকারি তত্বাবধানেই চালু করা হবে। তারপরেই অনাময়কে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি উইং হিসেবে মর্যাদা দিয়ে সেখানে কার্ডিওলজি বিভাগটি চালু করা হয়। পরে নিউরোলজি বিভাগও চালু হয়। তবে সম্প্রতি ওই বিভাগকে ফের ফেরত পাঠানো হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
অনাময় হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, যথেষ্ট সংখ্যক শল্যচিকিৎসক না থাকায় নিউরোলজি বিভাগটিকে আপাতত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আপাতত কার্ডিওলজি ও কার্ডিও থোরাসিক ভস্কুলার সার্জারি বিভাগ চালু রয়েছে ওই হাসপাতালে। কার্ডিওলজি বিভাগে কিছু অপারেশনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, পেসমেকার বসানোর ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু হৃদরোগের ক্ষেত্রে জরুরি বাইপাস সার্জারির ব্যবস্থা আজও নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, গত তিন বছরে এই পরিকাঠামো নিয়েই প্রায় পাঁচ হাজার রোগীর আঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়েছে, পেসমেকার বসানো হয়েছে।
তবে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা ও কল্যাণ কেন্দ্রের সম্পাদকের অভিযোগ, “জিটি রোড সম্প্রসারিত হয়ে চার লেন হওয়ায় সুবিধেও হয়েছে। দুর্ঘটনাও বেড়েছে। কিন্তু জিটি রোড বাইপাসের ধারে অবস্থিত ওই হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগ না থাকায় আহতদের উপযুক্ত চিকিৎসা হচ্ছে না। সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে অনেকের মৃত্যুও ঘটছে। অবিলম্বে ওই হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগ খোলা দরকার। তা ছাড়া কিডনি, পেটের বিভিন্ন রোগ, থাইরয়েড, ক্যান্সার ও রক্ত সংক্রান্ত অসুখও বাড়ছে। তাই সে সব সংক্রান্ত বিভাগগুলিও ওই হাসপাতালে দরকার।”
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, “ওই হাসপাতালে আমরা কিছুদিনের মধ্যেই ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু করার চেষ্টা করছি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিসরে অঙ্কোলজি বিভাগও চালু করতে চলেছি।” আগামী দিনে অনাময় হাসপাতালে নিউরোসার্জারি, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি সার্জারি বিভাগও খোলা হবে বলে তাঁর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy