চিকিৎসক নেই। তাই রোগীদের ভরসা ফার্মাসিস্ট। পাত্রসায়র ব্লকের নলডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক বছরের বেশি সময় ধরে এমনটাই চলছে। তার উপরে সম্প্রতি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুই নার্সকে বদলির নির্দেশ দেওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছে বাসিন্দাদের। এরপরে চিকিৎসা পরিষেবার মান আরও পড়ে যাবে আশঙ্কা করে অবিলম্বে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগ করা এবং নার্সদের বদলি রোধের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। সম্প্রতি বিডিও-র সঙ্গে দেখা করে বাসিন্দারা গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি দেন। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়েন পাত্রসায়রের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমর্ত্য পাল। তবে পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাসের আশ্বাস, “পুরো ব্লক এলাকাতেই কয়েকমাস ধরে চিকিৎসকের সমস্যা দেখা দিয়েছে। নলডাঙার মানুষের দাবি জেলাশাসককে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে নার্সদের এই মুহূর্তে বদলি না করতে বলা হয়েছে।”
বিউর-বেতুড় পঞ্চায়েতের এই নলডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গত তিন বছর ধরে মাঝে মধ্যেই চিকিৎসকহীন অবস্থায় থাকে। তখন থেকেই ভরসা ফার্মাসিস্ট কাতির্র্কচন্দ্র বাগদি। স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রের খবর, গত বছরের ১২ মে থেকে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকই নেই। নেই চতুর্থ শ্রেনির কর্মী, সাফাই কর্মী। রয়েছেন ফার্মাসিস্ট কার্তিকচন্দ বাগদি, প্যারামেডিক্যাল অপথ্যালমিক অ্যাসিস্ট্যান্ট ইমামুল হক মিদ্যা, সিনিয়র নার্স সাবিত্রী মুখোপাধ্যায় ও টুম্পা পাত্র। সম্প্রতি ওই দুই নার্সকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই বদলির নির্দেশ ঘিরেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এতদিন ধরে চিকিৎসক নেই। ফার্মাসিস্ট রোগী দেখে ওষুধ দিচ্ছেন। নার্সরা যথেষ্ট ভাল পরিষেবা দিচ্ছেন। এখন নার্সরাও চলে গেলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালাবেন কারা? তাঁদের আশঙ্কা, মনে হয় স্বাস্থ্য দফতর ধাপে ধাপে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়ার পথে এগোচ্ছে।
পাত্রসায়র ব্লক সদর থেকে প্রায় ১৪ কিমি দূরে, বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তায় নলডাঙা মোড়। সেখান থেকে প্রায় এক কিমি দূরে ডিভিসি-র সেচখালের পাশে নলডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বর্ধমান জেলার সীমানা ঘেঁষা বাঁকুড়ার এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাত্রসায়র ও ইন্দাস ব্লকের চারটি পঞ্চায়েতের প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাত্রসায়রের নলডাঙা, লালবাঁধ, বিউর, তেলুড়, রসুলপুর, কাটোরা, শ্যামসুন্দরপুর, শালখাঁড়া, মামুদপুর, বীজপুর, দেউলি, কাজিরডাঙা এবং ইন্দাসের রোল, ফাটিকা, সোমসার, ভাসনা, বিড়াশিমূল, কুমনা, পলাশডাঙা, কুমরুল-সহ আশেপাশের বহু গ্রামের বাসিন্দারা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ সফিউর রহমান, সোনা মণ্ডল, শেখ বোরজাহান বলেন, “বহুদিন ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক। রোগীদের দেখাশোনা করেন তো ফার্মাসিস্ট আর দুই নার্স-সহ অন্য কর্মীরা। নার্সরাও চলে গেলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা দেবে কে?” এলাকার বাসিন্দা তথা বিউর বেতুড় পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের হারুন রশিদ গ্রামবাসীর অভিযোগকে সমর্থন করে বলেন, “পাত্রসায়র, ইন্দাসের একাংশের সঙ্গে বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানা এলাকার কয়েকটি গ্রামের মানুষও চিকিৎসার জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আমরা অবিলম্বে এখানে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছি।” তাঁর অভিযোগ, “কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন উল্টে নার্সদের বদলির নির্দেশ দিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে।”
পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওখানে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক না থাকায় পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। এক নার্স ছুটিতে চলে যাচ্ছেন। অন্য এক নার্সকে ইন্দাসে বদলি করা হচ্ছে। এর ফলে এলাকার মানুষ আরও দুর্ভোগে পড়বেন। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগ করা এবং নার্সদের বদলি রোধ করতে জেলাশাসক ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।”
পাত্রসায়রের বিএমওএইচ অমর্ত্য পাল জানান, “ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও চিকিৎসকের সমস্যা রয়েছে। ব্লকে ছ’জন চিকিৎসকের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে তিন জন রয়েছেন। বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিকের কাছে লিখিত ভাবে সমস্যার কথা জানিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসক দেওয়ার জন্য এবং নলডাঙা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নার্সদের বদলি না করতে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আপাতত বদলি হওয়া নার্সদের রিলিজ করা হয়নি। ব্লকে নতুন চিকিৎসক নিয়োগ করা হলেই নলডাঙা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজনকে পাঠানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy