Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
এনসেফ্যালাইটিসের জেরে প্রতিবন্ধী

কবে শুরু থেরাপি, অপেক্ষায় আক্রান্তরা

থেরাপি শুরু করতে যত দেরি হবে, ফল হবে তত কম। অথচ এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত যে রোগীদের মধ্যে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে, তাঁদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলার ব্যাপারে গড়িমসি করছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। কেন্দ্রীয় সরকার ৬ কোটি টাকা অনুমোদন করার পরেও ১০ শয্যার পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু কাজে এখনও অবধি একটিই অগ্রগতি হয়েছে। তা হল, কেন্দ্রের জন্য চিহ্নিত হয়েছে একটি ঘর।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪১
Share: Save:

থেরাপি শুরু করতে যত দেরি হবে, ফল হবে তত কম। অথচ এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত যে রোগীদের মধ্যে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে, তাঁদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলার ব্যাপারে গড়িমসি করছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। কেন্দ্রীয় সরকার ৬ কোটি টাকা অনুমোদন করার পরেও ১০ শয্যার পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু কাজে এখনও অবধি একটিই অগ্রগতি হয়েছে। তা হল, কেন্দ্রের জন্য চিহ্নিত হয়েছে একটি ঘর।

দিন দশেক আগে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার ভূষণ চক্রবর্তী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে পুনর্বাসন কেন্দ্র খুলে থেরাপি শুরু করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন। কারণ, যে রোগীরা জাপানি এনসেফ্যালাইটিস বা অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের কেউ কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন, কেউ দৃষ্টিশক্তি, কেউ বা অন্যান্য সমস্যায় আক্রান্ত। চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের জন্য উপযুক্ত জায়গা না পেয়ে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।

এনসেফ্যালিইটিসে আক্রান্ত হয়ে দিনহাটার তরুণ পিন্টু সেন, ইটাহারের শিশু রবিউল ইসলাম, ঘোকসাডাঙার বাসিন্দা সাহিদা খাতুনরা বাকশক্তি হারিয়েছেন। আমবাড়ি ফালাকাটার ছাত্র ভিক্টর রায় বাক্শক্তি ছাড়াও হাত, পায়ে সাড় হারিয়েছেন। বাঁ হাত পা অসাড় হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না জটেশ্বর-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষক প্রভাত রায়রা। এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ৩০ জনেরও বেশি। তবে ঠিক কত জন এমন রোগী আছে, সেই তথ্য নেই মেডিক্যাল কলেজ বা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ফিজিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক রণেন ঘটক বলেন, “জেই-তে যখনই হাত-পা অসাড় হতে শুরু করবে, তখনই থেরাপি শুরু করতে হবে। না হলে পঙ্গুত্ব চিরস্থায়ীও হয়ে যেতে পারে। অনেক সময়ে দীর্ঘ দিন শুয়ে থাকার জন্য বেড সোর হয়েও রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।”

অর্থাৎ প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরলেও ওই রোগীদের ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জানিয়েছে, পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলার জন্য নতুন ভবন নির্মাণ এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। বর্তমান ভবনে কেন্দ্রের জায়গা ঠিক করতেই ১০ দিন কেটে গিয়েছে। অবশেষে ঠিক হয়েছে, চেস্ট বিভাগের দোতলায় যে নতুন ঘর তৈরি হয়েছে সেখানেই ওই কেন্দ্র খোলা হবে। তবে ওই সরঞ্জাম কিছুই এখনও কেনা হয়নি। কেন্দ্র চালাতে যে স্বাস্থ্য কর্মী এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন, তাঁদেরও নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি। এই সব সম্পূর্ণ করে কেন্দ্র চালু করতে অন্তত সপ্তাহ দু’য়েক গড়িয়ে যাবে বলে কর্তৃপক্ষেরই একাংশ মনে করছেন। হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস অবশ্য দ্রুত কেন্দ্র শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন।

কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের বর্তমান পরিকাঠামোয় এই রোগীদের থেরাপি শুরু করা যাবে না কেন? হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সুষ্ঠু চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা উত্তরবঙ্গের কোনও সরকারি হাসপাতালেই সেভাবে নেই। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার চিকিৎসা হয়। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। তা ছাড়া বাক্শক্তি যাঁরা হারিয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার জন্য কোনও স্পিচ থেরাপিস্ট নেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। নেই অকুপেশন থেরাপিস্ট, যাঁরা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক কাজকর্মে ফেরাতে চিকিৎসা করেন। অতএব পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

সেই অপেক্ষা যত দীর্ঘ হচ্ছে, তত অসহায় হয়ে পড়ছেন এনসেফ্যালাইটিস থেকে বেঁচে ফেরা রোগীদের আত্মীয়-স্বজনরা। পিন্টু সেন এখনও কথা বলতে পারছেন না। তাঁর মা প্রভারানিদেবী বলেন, “মেডিক্যালে পুনর্বাসন কেন্দ্র খুললে আমাদের বড় উপকার হত।”

এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু শিশুর

নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঁকুড়া

অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিন্ড্রোম নিয়ে (এ ই এস) বাঁকুড়া মেডিক্যালে মারা গেল এক শিশু। বুধবারের ঘটনা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম লক্ষ্মী মেটা (৫)। সে আদপে বীরভূমের বাসিন্দা হলেও পরিবারের সঙ্গে থাকত দুর্গাপুরের বিধাননগর এলাকায়। হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “জ্বর নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করা হয় ওই শিশুকে। এ ই এস নিয়ে বুধবার দুপুরে সে মারা যায়। উল্লেখ্য, কয়েক সপ্তাহ আগেই অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালেই মৃত্যু হয়েছিল বিষ্ণুপুরের এক শিশুর। ঘটনার পরে রীতিমতো উদ্বেগ ছড়ায় জেলা জুড়ে। পঞ্চাননবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, অজানা জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের আমরা বিশেষ ভাবে দেখাশোনা করছি। জ্বর দেখলেই রোগীদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে এনসেফ্যালাইটিস কি না তা নির্ণয় করা হচ্ছে।” অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি থাকা দু’জনের মৃত্যু হলেও বাঁকুড়া মেডিক্যালে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের নমুনা নিয়ে কেউ ভর্তি হননি বলে তিনি জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

encephalitis soumitra kundu siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE