Advertisement
১০ মে ২০২৪
সোয়াইন ফ্লু

প্রচার, প্রস্তুতির অভাবে রোগ-চক্রব্যূহে রাজ্য

চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ুক না-বাড়ুক, ব্যবস্থা নেওয়ার সময় পালিয়ে গেলে রোগের বাড়বৃদ্ধি যে ঠেকিয়ে রাখা যায় না, বিলক্ষণ বুঝছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা! পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। মাস্ক নেই। প্রতিষেধক নেই। সর্বোপরি নেই প্রচারটুকুও। কিন্তু হুহু করে বেড়ে চলেছে রোগীর সংখ্যা! স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রোজই সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্তের খবর মিলছে। “রবিবার আরও ১৬ জনের রক্ত পরীক্ষায় ওই রোগের ভাইরাস ধরা পড়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ুক না-বাড়ুক, ব্যবস্থা নেওয়ার সময় পালিয়ে গেলে রোগের বাড়বৃদ্ধি যে ঠেকিয়ে রাখা যায় না, বিলক্ষণ বুঝছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা!

পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। মাস্ক নেই। প্রতিষেধক নেই। সর্বোপরি নেই প্রচারটুকুও। কিন্তু হুহু করে বেড়ে চলেছে রোগীর সংখ্যা! স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রোজই সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্তের খবর মিলছে। “রবিবার আরও ১৬ জনের রক্ত পরীক্ষায় ওই রোগের ভাইরাস ধরা পড়েছে। তাঁরা কলকাতার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন,” বলেছেন স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে। এই নিয়ে রাজ্যে এই মারণ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩১।

এক দিকে রোগের দাপট, অন্য দিকে মোকাবিলায় ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম অবস্থা সব মিলিয়ে সোয়াইন ফ্লু পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে রাজ্য সরকার। এতটাই যে, স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা বড় অংশ এখন স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন, সময়মতো সাবধান হলে এবং সতর্ক করলে এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হয়তো এড়ানো যেত।

সাবধান হওয়া যেত কী ভাবে?

সতর্ক হয়ে এবং সচেতন করে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ-সব ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফে প্রথমেই রোগের বাড়বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখতে সতর্ক হওয়া দরকার। আর সচেতনতার প্রচার সেই সতর্কতার সব চেয়ে বড় হাতিয়ার। সোয়াইন ফ্লু-র ক্ষেত্রে যেটা আদৌ হয়নি। স্বাস্থ্যকর্তাদের যুক্তি, বেশি প্রচার চালালে অযথা আতঙ্কের সৃষ্টি হবে। কিন্তু আতঙ্ক যে এখন ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার কী হবে? সরাসরি জবাব এড়িয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু রোগের দাপট বাড়ছে বই কমছে না।

তাই সচেতনতার প্রচার না-হলেই নয়। সেই সঙ্গে চাই ওষুধ আর রোগ মোকাবিলার সরঞ্জাম-সহ প্রস্তুতি। কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড)-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগে থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ, প্রতিষেধক টিকা এবং মাস্ক মজুত রাখা উচিত ছিল সরকারের। তা না-করে গোড়া থেকেই ওষুধের বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে গিয়েছেন সরকারি কর্তারা। এমনকী সরকারি হাসপাতালেও যথেষ্ট ওষুধ-টিকা-মাস্ক মজুত রাখেননি। পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে গিয়েছে, তখন ওষুধ, ভ্যাকসিন আনানোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। তত ক্ষণে অবশ্য বাজারে দু’টিই অমিল!

স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক বিজ্ঞানী জানান, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা শুরু হতে অন্তত তিন সপ্তাহ লাগে। এখন ভ্যাকসিন আনিয়েও কোনও লাভ নেই। কারণ, ভাইরাস ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। “পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদেরও ওষুধ বা ভ্যাকসিন দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা খুবই ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন। অনেকে কাজ করতে অস্বীকার করে ছুটিতেও চলে গিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর কী ভাবে পরিস্থিতি সামলাবে, তা তাঁরাই জানেন,” বললেন বিজ্ঞানী।

পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা। বলেন, “সমস্যা তো সব দিকেই। ডায়াগনসিসের পরিকাঠামো খুবই সীমিত। দোকানে ওষুধ বা মাস্ক কিছুই নেই। তার উপরে পড়ুয়াদের মাস্ক পরে আসা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে বিভিন্ন স্কুল। প্রতিদিন অসংখ্য ফোন পাচ্ছি আমরা।” এন-৯৫ মাস্ক এখন অধিকাংশ দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে না। গড়িয়াহাটে এক ওষুধের দোকানের কর্মী বললেন, “শুক্রবার ২০০ মাস্ক আনিয়েছিলাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব শেষ। এখন ক্রেতাদের নাম, ফোন নম্বর রাখছি। মাস্ক এলে খবর দেব।”

এই পরিস্থিতিতে প্রকৃতির দিকেই তাকিয়ে আছে স্বাস্থ্য দফতর। যত গরম পড়বে, তত দ্রুত কমবে রোগের প্রকোপ। সাধারণ ভাবে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলেই ভাইরাসের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে যায়। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পেরোলে ভাইরাস বাঁচে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। যে-কোনও ভাইরাসঘটিত রোগের প্রকোপই ৩-৪ সপ্তাহ পরে কমতে শুরু করে। তাই আশা করা হচ্ছে, আবহাওয়ার বড় ধরনের পরিবর্তন না-হলে মার্চের মাঝামাঝি রোগটা কমে যাবে। তবে পরজীবী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, “ইতিমধ্যে যথেষ্ট গরম পড়ে গিয়েছে। কিন্তু রাত বাড়লে বা ভোরের দিকে খানিকটা ঠান্ডা পড়ছে। সেটাই ক্ষতিকর। ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে গেলে সর্বক্ষণ গরম জরুরি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

swine flu west bengal health department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE