Advertisement
১০ মে ২০২৪

বাঁকুড়ায় ম্যালেরিয়ার হানায় মৃত প্রৌঢ়, জ্বরে কাঁপছেন অনেকে

ঢিমেতালের বৃষ্টির জন্যই এ বার বাঁকুড়ায় ফের থাবা বসিয়েছে ম্যালেরিয়া। উত্তরবঙ্গ যখন এনসেফেলাইটিসে কাঁপছে, ম্যালেরিয়া প্রবণ বাঁকুড়ায় জেলা তখন ফিরে এসেছে ম্যালেরিয়া। ইতিমধ্যেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হওয়ায় চিন্তায় পড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মশা বাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সিমলাপাল ব্লকের চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা আশিস ঘোষ (৫৭)। কিছুদিন আগেই তিনি জ্বর নিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৩
Share: Save:

ঢিমেতালের বৃষ্টির জন্যই এ বার বাঁকুড়ায় ফের থাবা বসিয়েছে ম্যালেরিয়া। উত্তরবঙ্গ যখন এনসেফেলাইটিসে কাঁপছে, ম্যালেরিয়া প্রবণ বাঁকুড়ায় জেলা তখন ফিরে এসেছে ম্যালেরিয়া। ইতিমধ্যেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হওয়ায় চিন্তায় পড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মশা বাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সিমলাপাল ব্লকের চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা আশিস ঘোষ (৫৭)। কিছুদিন আগেই তিনি জ্বর নিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন। শনিবার হাসপাতালেই তিনি মারা যান। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “আশিসবাবুর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ফ্যালসিপেরাম জীবানুর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে।” শুধু সিমলাপালই নয়, দক্ষিণ বাঁকুড়ার বিভিন্ন ব্লকে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। বাঁকুড়া মেডিক্যালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া অনেকের রক্তেই মিলছে এই রোগের নমুনা মিলেছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন।

চলতি বছরে বিষ্ণুপুর, ওন্দা, ইঁদপুর, ছাতনা, তালড্যাংরা, সিমলাপাল, রাইপুর ও রানিবাঁধ মোট আটটি ব্লককে ম্যালেরিয়া প্রবণ ব্লক হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সিমলাপালের চাঁদপুরে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই স্বাস্থ্য দফতরের দল মঙ্গলবার ওই গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের রক্ত পরীক্ষা করেন। দ্রুত ওই এলাকায় মশা মারার ওষুধ ছড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।

এই পরিস্থিতিতে ম্যালেরিয়া প্রবণ ব্লকগুলিতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ম্যালেরিয়া রুখতে আশাকর্মীদের আলাদা করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বর্ধমান ডিভিশনের জোনাল ম্যালেরিয়া আধিকারিক সত্যজিৎ চক্রবর্তী বাঁকুড়ায় আশা কর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে ম্যালেরিয়ার লক্ষণ চেনাচ্ছেন। র্যাপিড ডায়গনাস্টিক কিট দিয়ে রক্ত পরীক্ষা করানোর পদ্ধতিও শেখাচ্ছেন হাতে ধরে। গ্রামেগঞ্জে বাড়ির ভিতরে মশা মারার ওষুধ ছড়াতে গেলে হামেশাই বাধা দেন গৃহকর্তারা। এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে আশাকর্মীদের। বুধবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি শিবিরে উপস্থিত ছিলেন সত্যজিৎবাবু।

এ দিন বিষ্ণুপুর, ওন্দা, ইঁদপুর, ছাতনাতেও আশাকর্মীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছে। আগামী শুক্রবার বাকি চারটি ব্লকে এই শিবির করার কথা। সত্যজিৎবাবু বলেন, “আগামী দিনে ম্যালেরিয়া রক্ত পরীক্ষা ও এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা আশাকর্মীদের দিয়েই করানোর চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য সরকার। তাই ধীরে ধীরে তাঁদের প্রস্তুত করার কাজ চলছে। গ্রামাঞ্চলে আশাকর্মীদের যোগাযোগ ভাল বলে এই কাজ তাঁদের পক্ষে করা আরও সহজ হবে।”

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ম্যালেরিয়া নিয়ে জেলা জুড়েই সতর্কতা জারি হয়েছে। ম্যালেরিয়াপ্রবণ ব্লকগুলিতে ১০ হাজার রাসায়নিক ওষুধ লাগানো মশারি বিলি করা হবে। তার তালিকাও তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। ম্যালেরিয়া আক্রান্তের চিকিৎসার জন্য ওষুধ ও ইঞ্জেকশন মজুত করা আছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর নিজের উদ্যোগেই প্রতিটি ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এই ইঞ্জেকশন কিনে মজুত করে রেখেছে। রোগীরা বিনামূল্যেই এই ইঞ্জেকশন পাবেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি থেকে।”

বাঁকুড়া মেডিক্যালও ম্যালেরিয়া আক্রান্তের চিকিৎসার ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু। তিনি বলেন, “জ্বর নিয়ে কেউ ভর্তি হলেই তাঁর রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবানুর অস্তিত্ব রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।” তিনি জানান, দক্ষিণ বাঁকুড়া থেকেই ম্যালেরিয়া রোগী বেশি সংখ্যায় আসছেন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রোগীর শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু দেখা গিয়েছে।

জেলা সদর বাঁকুড়ায় এখনও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা না গেলেও মশার উৎপাত বাড়ায় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। এমনিতেই সাধারণ ঠান্ডা লেগে জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে শহরে। অনেকেই সেই জ্বরকে ম্যালেরিয়া ভেবে রক্ত পরীক্ষা করাতে ছুটছেন।

যদিও মানুষের এই প্রবণতাকে যুক্তিযুক্ত বলে জানিয়ে সত্যজিৎবাবু বলেন, “ভাইরাল ফিবার আর ম্যালেরিয়ার মধ্যে তফাৎ আপাত ভাবে বোঝা মুশকিল। তাই সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের আবেদন জ্বর হলেই ম্যালেরিয়া কি না তা পরীক্ষা করান।” বাঁকুড়া পুরসভায় যাতে ম্যালেরিয়ার প্রভাব না পড়ে পুরসভার তরফে তার জন্যেও বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পুরপ্রধান শম্পা দরিপা। তিনি বলেন, “মশা মারার রাসায়নিক ওষুধ আমরা নিয়মিতই স্প্রে করি। তা ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডের ঝোপঝাড় সাফ করার কাজও শুরু হয়েছে।” বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন দিয়েও ম্যালেরিয়া নিয়ে পুরবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

attack of malaria death of a man fever bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE