Advertisement
১১ মে ২০২৪

ভোটে কর্মীরা, শঙ্কা স্বাস্থ্য পরিষেবায়

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র ঝাড়ুদার তিনি-ই। কাজ ছেড়ে এখন তাঁকেই ছুটতে হচ্ছে নির্বাচনের প্রশিক্ষণে। একই কারণে চিকিৎসকহীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা মিলছে না একমাত্র ফার্মাসিস্টেরও। এমনিতেই জেলার বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক, নার্স, কর্মী প্রভৃতির পদ শূন্য। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটের কাজে হাসপাতাল কর্মীদের নিয়োগের জেরে জেলার একটা বড় অংশের স্বাস্থ্য পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৯
Share: Save:

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র ঝাড়ুদার তিনি-ই। কাজ ছেড়ে এখন তাঁকেই ছুটতে হচ্ছে নির্বাচনের প্রশিক্ষণে। একই কারণে চিকিৎসকহীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা মিলছে না একমাত্র ফার্মাসিস্টেরও। এমনিতেই জেলার বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক, নার্স, কর্মী প্রভৃতির পদ শূন্য। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটের কাজে হাসপাতাল কর্মীদের নিয়োগের জেরে জেলার একটা বড় অংশের স্বাস্থ্য পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধিকারিকেরা কেউ লিখিত ভাবে কেউ মৌখিক ভাবে সমস্যার কথা বিডিও থেকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলার নির্বাচন আধিকারিকের কাছে জানিয়েছেন। যদিও প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও নতুন করে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে নিয়োগপত্র পাঠানো জারি রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও তাঁদের আপত্তি সত্ত্বেও উপরমহলের নির্দেশ মতো নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক মণ্ডল জানান, প্রতি নির্বাচনেই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং জেলার মূল কার্যালয় থেকে এক জন দু’জন করে পুরুষ স্টাফদের নির্বাচনের কাজে নেওয়া হয়। এ বারও নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এ বারে ঠিক কত জনকে নেওয়া হয়েছে, সে হিসাবটা এখনই বলা যাবে না।”

এই পরিস্থিতিতে পরিষেবা নিয়ে আশঙ্কায় রোগীর পরিজনেরা। কেননা জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই চিকিৎসকের অভাবে নলহাটি ১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীন কুরুমগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কয়থা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মুরারই ১ ব্লকের রাজগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চাতরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের ঢেকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সিউড়ি মহকুমার নাকড়াকোঁদা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীন লোকপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি কার্যত ধুঁকছে। সেখানকার স্বাস্থ্য পরিষেবা টিকিয়ে রেখেছেন একমাত্র ফার্মাসিস্টরাই। এই অবস্থায় তাঁরা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকায় ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির কী হাল হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

নলহাটি ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কালোবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বেগ, “নির্বাচনের কাজে একের পর এক কর্মীকে ডাকা হচ্ছে। এক সঙ্গে এত জন কর্মীকে নির্বাচনের কাজে তুলে নেওয়া হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালাবো কী করে? বিষয়টি নিয়ে মৌখিক ভাবে বিডিও-র সঙ্গে আলোচনা করেছি। কোনও ব্যবস্থা না হলে, লিখিত ভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” অন্য দিকে দুবরাজপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ কুণাল মুখোপাধ্যায় জানান, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন মাত্র ফার্মাসিস্ট আছে। সাধারণত ফার্মাসিস্টদের কাজ অন্য কেউ করতে পারে না। অসুবিধার কথা জানা সত্ত্বেও এক জন ফার্মাসিস্টকে নির্বাচনের কাজে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “নির্বাচনের কাজে জরুরি ভিত্তিতে ডাকা হয়েছে জেনেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অসুবিধার জানিয়ে বিডিও, জেলা নির্বাচনী আধিকারিক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে লিখিত ভাবে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সদুত্তর মেলেনি।”

নলহাটি ১ ব্লকের ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে নির্বাচনের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ব্লক হাসপাতালের একমাত্র ঝাড়ুদাড়ও রয়েছেন। হাসপাতালের কর্মীদের বক্তব্য, “একমাত্র ঝাড়ুদারকেও যদি তুলে নেওয়া হয়, তা হলে হাসপাতালের বর্হিবিভাগের কাজ তো ব্যাহত হবেই। পাশাপাশি জরুরি বিভাগ ও ইন্ডোর বিভাগের কাজও ব্যাহত হবে।” ওই একই ব্লক হাসপাতালে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এক জন ফার্মাসিস্ট নেই। কুরুমগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কয়থা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এক জন করে ফার্মাসিস্ট তিন দিন করে রোটেশনের ভিত্তিতে ব্লক হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের কাজ করেন। দুই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দু’জন ফার্মাসিস্টকেই ভোটের কাজে ডাকা হয়েছে। দু’জনেই আবার ওই চিকিৎসকহীন দুই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র ভরসা। তাঁরা চলে গেলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র দু’টির পাশাপাশি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবার ব্যাঘাতও ঘটবে বলে আশঙ্কা।

এ দিকে, দুবরাজপুর ব্লকের যাত্রা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাহাপুর, পদুমা পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা পরিষেবা পান। এক জন চিকিৎসক সেখানে তিন দিন এবং নিরাময় যক্ষা হাসপাতালে তিন দিন কাজ করেন। চিকিৎসহীন তিন দিন যাত্রা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ফার্মাসিস্টের ভরসাতেই চালু থাকে। আবার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন নার্স মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। ফলে ফার্মাসিস্ট না থাকলে সেখানকার স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। কিন্তু সেখানেও ফর্মাসিস্ট এবং এক জন ‘গ্রুপ-ডি’ স্টাফকে ভোটের কাজে নেওয়া হয়েছে।

ভোটের মুখে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির এই চিত্র মিললেও সিএমওএইচ বলছেন, “এতে অসুবিধা যে হয় না, তা নয়। কিন্তু কী করা যাবে, নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি কাজে যেমন নির্দেশ আসবে তা মানতেই হবে। তবে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে যাতে কোনও অসুবিধা তৈরি না হয়, সে দিকটি বাকি কর্মীদেরই দেখতে হবে। এখনও পর্যন্ত পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কোনও খবর নাই।” অন্য দিকে, জেলা নির্বাচন আধিকারিক তথা জেলাশাসকের ফোন বেজে গেলেও তিনি ফোন ধরেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

apurba chattapadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE