Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভুল চিকিৎসায় মহিলার মৃত্যুর অভিযোগ

চিকিত্সায় গাফিলতিতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে হরিশ্চন্দ্রপুরের এক মহিলার মত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সকালে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় রাধারানি দাস (৩৪) নামে ওই বধূর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

চিকিত্সায় গাফিলতিতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে হরিশ্চন্দ্রপুরের এক মহিলার মত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার সকালে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় রাধারানি দাস (৩৪) নামে ওই বধূর। হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকাবাজার এলাকার বাসিন্দা ওই বধূ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা পদে কাজ করতেন। রবিবার চাঁচল থেকে ডেঙ্গি হয়েছে সন্দেহে তাঁকে মালদহে স্থানান্তরিত করা হয়। ডেঙ্গি সন্দেহ করা হলেও তাঁর রক্ত পরীক্ষা না করে শুধু স্যালাইন দিয়ে ওই রোগিণীকে ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ। তারপর এদিন সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। রাতে মহিলার অবস্থার অবনতি হওয়ার পরও সকাল পর্যন্ত আর চিকিত্সকের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিজনেরা। চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপারের পাশাপাশি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছেও ভুল চিকিত্সায় রাধারানিদেবীর মৃত্যু হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন রোগীর পরিজনেরা।

মালদেহর মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মন্ডল বলেন, ‘‘ভুল চিকিত্সায় ওই রোগিণীর মৃত্যু হয়েছে বলে পরিজনেরা আমার কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে যেহেতু বিষয়টি মেডিক্যাল কলেজের তাই ওখানকার প্রশাসকরাই বিষয়টি দেখছেন।’’ মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার এম এ রশিদ বলেন, ‘‘আমি কলকাতায় রয়েছি। তবে বিষয়টি শুনেছি। মালদহে ফিরে অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

হাসপাতাল ও রোগিণীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রচন্ড জ্বর ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে গত ২২ অগস্ট রাধারানিদেবীকে চাঁচল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গির লক্ষণ ধরা পড়ে। এরপরেই ভালো চিকিত্সার জন্য পরদিন তাঁকে মালদহে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়।

পরিজনদের অভিযোগ, রবিবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে রাধারানিদেবীকে স্যালাইন দেওয়া হয়। চাঁচলে ডেঙ্গির রিপোর্ট দেখিয়ে ফের তাঁর রক্ত পরীক্ষার কথা বলেন রোগিণীর পরিজনেরা। কিন্তু তিন দিন স্যালাইন চলার পরে রক্ত পরীক্ষা করা হবে বলে কার্যত বিনা চিকিত্সায় তাঁকে ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ। এরপর সোমবার রাত ১২টায় রাধারানিদেবীর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। তখন তাঁকে স্যালাইনের সঙ্গে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ইঞ্জেকশন দিয়েই চিকিত্সক বেরিয়ে যান বলে অভিযোগ। কিছুক্ষণ বাদেই রাধারানিদেবীর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। বুকে ও মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় রোগিণীর পরিজনেরা নার্সকে বলেন চিকিত্সককে আসার জন্য। কিন্তু অভিযোগ, কর্তব্যরত নার্স ফিরে এসে জানিয়ে দেন যে সকালের আগে চিকিত্সক আর আসবেন না। তা ছাড়া চিন্তার কিছু নেই জানিয়ে চিকিত্সকের পরামর্শ মতো রোগিণীর মাথায় জলপট্টি দিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রবল যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন রাধারানিদেবী। সকাল ছটা দশ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিত্সকেরা জানিয়ে দেন।

ওই বধূর বাপের বাড়ি চাঁচলের ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায়। তাঁর স্বামী সুভাষ মহালদার ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের ১২ ও ১১ বছরের দুই ছেলে রয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুরের দেগুনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়ক পদে কাজ করতেন রাধারানিদেবী। মৃতার ভাই বাসুদেব দাস বলেন, ‘‘চিকিত্সার ভুলেই দিদি মারা গেল। জেলা হাসপাতালে ভাল চিকিত্সার জন্য গিয়ে দিদিকে এ ভাবে চিকিত্সকদের গাফিলতিতে হারাতে হবে ভাবিনি। মৃতার ভাসুর কৈলাশ মহালদারের অভিযোগ, ‘‘ভুল চিকিত্সায় ভাইয়ের স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর ব্যবস্থা না নিলে আমরা আদালতে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE