Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মেডিক্যাল কলেজে অবহেলার নালিশ

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখনও সব ওষুধ পাচ্ছেন না খিঁচুনি জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকেও ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এর আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব মেডিক্যাল কলেজ ঘুরে বলেছিলেন প্রতিটি জ্বরের রোগীকে, বিশেষ করে তিনি যদি জাপানি এনসেফ্যালাইটিস (জেই) বা অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস (এইএস)-এ আক্রান্ত হন, তা হলে মেডিক্যাল কলেজ থেকে সমস্ত ওষুধ বিনা মূল্যে দিতে হবে।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে খিঁচুনি জ্বর নিয়ে ভর্তি রোগী। ছবি: সন্দীপ পাল।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে খিঁচুনি জ্বর নিয়ে ভর্তি রোগী। ছবি: সন্দীপ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০২:০৪
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখনও সব ওষুধ পাচ্ছেন না খিঁচুনি জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকেও ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এর আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব মেডিক্যাল কলেজ ঘুরে বলেছিলেন প্রতিটি জ্বরের রোগীকে, বিশেষ করে তিনি যদি জাপানি এনসেফ্যালাইটিস (জেই) বা অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস (এইএস)-এ আক্রান্ত হন, তা হলে মেডিক্যাল কলেজ থেকে সমস্ত ওষুধ বিনা মূল্যে দিতে হবে। যদিও এখনও বহু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রোগীর আত্মীয়রা।

মেডিক্যাল কলেজ সুপার নির্মল বেরা দাবি করেছেন, এমন হওয়ার কথা নয়। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আরও তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে দু’জন শুক্রবারই সকালে মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে একজনের জেই প্রমাণিত, বাকি দুজনের এইএস রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

বিহারের ঠাকুরগঞ্জের মহম্মদ আইনুল হককে বৃহস্পতিবার ভর্তি করা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজে। রাত থেকে প্রবল খিঁচুনি হলেও ভোর সাড়ে তিনটের আগে কোনও চিকিৎসক দেখতে আসেননি। তখন ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়। চিকিৎসকের লিখে দেওয়া ওষুধের মধ্যে একটি ওষুধ দেওয়া হয়নি। তা বাইরে থেকে কিনতে হয় বলে জানান রোগীর দাদা মহম্মদ আফজল। তিনি বাইরে থেকে ওষুধ নিয়ে গিয়েছেন। মেডিক্যাল কলেজ সুপার নির্মল বেরা বলেছেন, ‘‘এমন হওয়ার কথা নয়। তবে কেউ কোনও ওষুধ বাইরে থেকে কিনলেও বিল থাকলে তার দাম দিয়ে দেওয়া হবে। অভিযোগ নির্দিষ্ট করে জানালে তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ যদিও অভিযোগ জানালেও তার কোনও সুরাহা হচ্ছে না বলে রোগীর আত্মীয়রা জানিয়েছেন। এমনকী অভিযোগ, রাতে অসুবিধা হলেও রুটিন চেক-আপের সময় ছাড়া চিকিৎসকদেরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।

কিন্তু খিঁচুনি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এখন দাঁড়াল ৪০। মৃতদের মধ্যে রয়েছে একটি শিশুও। বৃহস্পতিবার রাতে মারা গিয়েছেন কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ির বাসিন্দা বিপ্লব রায় (৭)। তাঁকে গত ১৭ জুলাই ভর্তি করানো হয়েছিল। তবে রক্ত পরীক্ষা করে জেই-এর জীবাণু মেলেনি। বাকি দুজনের মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার সকালে। এর মধ্যে বাগডোগরার সিঙ্গিঝোরার বাসিন্দা ঝলু ওঁরাও (৬৫)-এর রক্তে মিলেছে জেই-এর জীবাণু। এদিন সকালেই প্রবল জ্বর ও খিঁচুনি নিয়ে ভর্তি করান‌ো হয়েছিল আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা গ্রেগরি তিরকেকে (৩৫)। তাঁর রক্ত পরীক্ষা করানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

শুক্রবার সকালে আলিপুরদুয়ার থাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় মৃত্যু হয় এক রোগিণীর। এ নিয়ে গত দু’দিনে আলিপুরদুয়ারে জেলা হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত সন্দেহে তিন জন মহিলার মৃত্যু হল। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার রাজা সাহ বলেন, “বৃহস্পতিবার রীতা ভুজেল (৩০) সহ দুজনের মৃতু হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে। শুক্রবার সকালে মৃতু হয় জেরাগুড়ি তিরকে (৬২) নামে এক মহিলার। গত ২৩ জুলাই কালচিনির বাসিন্দা ওই রোগিণী জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। এদিন এনসেফ্যালাইটিস সন্দেহে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয় তাঁকে। পথে ওই রোগিণীর মৃত্যু হয়েছে।” আলিপুরদুয়ার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ শর্মা বলেন, “কিছু রোগীকে এনসেফ্যালাইটিস সন্দেহে রেফার করা হয়ছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রচার ও ধোঁয়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE