ছানির অস্ত্রোপচারের পরে ৮ জন বয়স্ক রোগী তাঁদের এক চোখে দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারাতে বসেছেন। বৃহস্পতিবার তাঁদের ছানি অপারেশন হয় কোচবিহার জেলা হাসপাতালে। শুক্রবার চোখ পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁরা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। এক দিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরে শনিবার ৭ জনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। তাঁদের পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়। যদিও সে দিন বিকেলে তাঁদের জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। রবিবার তাঁদের মধ্যে ৩ জনকে জলপাইগুড়ি থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়।
কোচবিহারে যে চিকিৎসক ওই রোগীদের অস্ত্রোপচার করেছিলেন, তাঁর সন্দেহ, অস্ত্রোপচারের কোনও যন্ত্র থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
সাধারণত জেলা হাসপাতাল থেকে রোগীদের উচ্চতর হাসপাতালেই রেফার করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা করা হয়েছিল। তবে তাঁদের জলপাইগুড়িতে নিয়ে যাওয়া হল কেন? কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্ত মতোই ওই রোগীদের প্রথমে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।” সরকারি সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উত্তরকন্যায়। শনিবার দুপুরে সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব যখন বৈঠক করছিলেন, সে সময়েই ছানি অস্ত্রোপচারে বিভ্রাটের খবর আসে। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আপাতত জলপাইগুড়িতে রাখা হবে ওই রোগীদের। কেন এমন সিদ্ধান্ত? সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, এনসেফ্যালাইটিস মোকাবিলা করতে এমনিতেই রাজ্য জেরবার। তথ্য গোপনের অভিযোগে ৩ স্বাস্থ্যকর্তাকে সাসপেন্ড হয়েছেন। এ বার সরকারি হাসপাতালেই অস্ত্রোপচার করিয়ে দৃষ্টিশক্তি হারাতে চলেছেন রোগীরা এই বিষয়টি সামনে এলে সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়তে পারত।
স্বাস্থ্যকর্তাদের সিদ্ধান্তে তারপরে চক্ষু বিশেষজ্ঞ গৌতম ভাদুড়িকে ফোনে অনুরোধ করা হয়, ওই রোগীদের দেখে যেতে। তিনি রবিবার কলকাতা থেকে গিয়ে ওই রোগীদের দেখেছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “চিকিৎসক গৌতমবাবু দেখার পরে ওই রোগীদের মধ্যে তিন জনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা গুরুতর অসুস্থ। প্রয়োজনে তাঁদের কলকাতা বা অন্য কোনও উপযুক্ত জায়গায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হবে।”
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “তথ্য গোপন করতে গিয়েই এনসেফ্যালাইটিস সাংঘাতিক বেড়ে গেল। এ বার ছানি অস্ত্রোপচারে গাফিলতি আড়াল করতে গিয়ে বিধি ভেঙে এক জেলা হাসপাতাল থেকে আর এক জেলা হাসপাতালে পাঠানো হল। এ সব হচ্ছেটা কী?” তাঁর বক্তব্য, “সে জন্যই বারবার বলছি, এক জন পূর্ণ সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দরকার।”
ওই রোগীদের মধ্যে রয়েছেন চান্দামারির বিজয় সরকার। তিনি এখন জলপাইগুড়িতে ভর্তি। তিনি বলেন, “হাসপাতাল থেকে আমাদের সাত জনকে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার নাম করে গাড়িতে তুলে জলপাইগুড়িতে কেন আনা হল, বুঝতে পারছি না।” তাঁর অভিযোগ, কী চিকিৎসা হচ্ছে তা-ও কেউ জানাচ্ছে না। আর এক রোগী শ্রীবাস রায়ের অভিযোগ, “ভাল চিকিৎসার জন্য শিলিগুড়িতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছিল। এখন কেউ আর কিছু বলছেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy