Advertisement
২১ মে ২০২৪

মনস্কামনা পূর্ণ হয় তিথি অনুযায়ী ঈশ্বর বন্দনায়

দেখে নেওয়া যাক কোন তিথিতে কোন দেবতার আরাধনা করা উচিত হবে

পার্থপ্রতিম আচার্য
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

জ্যোতিষশাস্ত্রে ‘তিথি’কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। যে তিথির যে দেবতা সেই তিথি অনুযায়ী, নিয়মানুসারে ও নিষ্ঠা সহকারে পুজো-আরাধনায় দেবতা প্রসন্ন হন এবং মনের অভিলাষা অনেকার্থে পূর্ণ হয় দৈব আশীর্বাদে।

এখন দেখে নেওয়া যাক কোন তিথিতে কোন দেবতার আরাধনা করা উচিত হবে—

প্রতিপদ-

প্রতিপদ অর্থাৎ প্রথমা বা প্রথম তিথি। এই তিথির স্বামী হলেন অগ্নিদেব। প্রথমা বা প্রতি পদ তিথিতে অগ্নিদেবের পুজার্চনা করলে গৃহে ধন, ধান্য, আয়ু, যশ, বল, মেধা ইত্যাদির বৃদ্ধি হয়।

দ্বিতীয়া-

এই তিথির অধীশ্বর হলেন ব্রহ্মা দেব। ব্রহ্মা দেবের পুজো করা আবশ্যক। এবং এই তিথিতে কোনও ব্রহ্মচারী সৎ ব্রাহ্মণকে খাইয়ে অন্ন-বস্ত্র দান করলে খুবই শুভদায়ক ফল পাওয়ার আশা করা যায়।

তৃতীয়া-

এই তিথির অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন গৌরী মাতা। মাতার পুজো আরাধনায় সৌভাগ্য বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। এই তিথির আর এক স্বামী হলেন কুবের দেব। অতএব কুবের দেবের আরাধনায় গৃহে ধন বৃদ্ধি ঘটে।

চতুর্থী-

এই তিথির অধীশ্বর শ্রীগণেশ। হিন্দুশাস্ত্রানুযায়ী সকল পুজোর পূর্বে গণেশজীর আরাধনা প্রচলিত। ওঁর শরণাগত হলে জীবনের সকল বাধাবিঘ্ন দূরীভূত হয়। এ ছাড়া সকল কর্মেরই সিদ্ধিদাতা হিসাবে গনেশ দেব পুজিত হন।

আরও পড়ুন: কোন রাশির কী ধরনের যৌনতা অপছন্দ

পঞ্চমী-

এই তিথির স্বামী হলেন নাগদেব। এই তিথিতে নাগদেবতার পূজার্চনা করলে জীবন থেকে অনাবশ্যক ভয় দূর হয়। কালসর্প দোষের প্রভাবও হ্রাস পায়।

ষষ্ঠী-

এই তিথির অধীশ্বর হলেন স্কন্দ অর্থাৎ কার্তিক দেব। এঁর পুজোয় ব্যক্তি মেধাবি, কীর্তিমান ও যশস্বী হন। অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন ও তোতলা শিশুর জন্য কার্তিকদেবের আরাধনায় অনেকার্থে শুভাশুভ ফল প্রাপ্তি হয়। মঙ্গলের দশায় যারা মামলায় জর্জরিত তারা যদি কার্তিক দেব বা স্কন্দদেবের পুজো করেন, তা হলে তা ফলদায়ক হবে।

সপ্তমী-

এই তিথির স্বামী সূর্যদেব। সনাতন বা বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে সূর্যদেবকে আরোগ্যকারক মানা হয়। সূর্য হলেন জগতের পিতা বা রক্ষাকর্তা। সুস্থ জীবন ও রোগমুক্তির জন্য সূর্যপুজো আবশ্যক। বিশেষ করে যাদের চোখের সমস্যা তারা এই বিশেষ তিথিতে সূর্যপুজো নিয়মিত করলে শুভ ফল লাভ করতে পারেন।

অষ্টমী-

এই তিথির দেবতা হলেন রুদ্রদেব। অতএব এই তিথিতে সুশোভিত ভগবান সদাশিবের পুজো করলে সকল কষ্ট ও রোগ মুক্তি হয়।

নবমী-

এই তিথির অধিশ্বরী দেবী হলেন দুর্গামাতা। এঁর পুজো-অর্চনায় যশ লাভ ঘটে, বাধা ও শত্রু নাশ হয়। দুর্গামন্ত্র জপ ও পুজো করলে মা দুর্গা প্রসন্ন হন এবং জীবনে শুভ ফল লাভ হয়।

দশমী-

এই তিথির স্বামী হলেন যমরাজ। এই তিথিতে যমদেবের আরাধনা করলে অকাল মৃত্যু ও নানা বিপদ ও দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

একাদশী-

এই তিথির দেবতা বিশ্বদেব। এঁর পুজো, আরাধনা করলে ধন-ধান্য এবং ভূমি বা জমি বৃদ্ধি পায়।

দ্বাদশী-

এই তিথির স্বামী হলেন বিষ্ণুদেব। শ্রীবিষ্ণুর নিয়মিত পুজো করলে সকল প্রকার সুখ বৃদ্ধি হয় এবং সকল স্থানে মানুষের শ্রদ্ধা ও আদর প্রাপ্তি ঘটে। এই বিশেষ তিথিতে শ্রীবিষ্ণুর সহস্র নাম জপ করলে শুভ ফলদায়ক হবে। এই তিথিতে তুলসী চয়ন নিষিদ্ধ বলেই মানা হয়।

ত্রয়োদশী-

এই তিথির অধীশ্বর কামদেব। এঁর বন্দনা করলে ব্যক্তি রূপবান হয় এবং বৈবাহিক জীবনে সুখ বেশি করে পাওয়া যায়।

চতুর্দশী-

এই তিথির অধীশ্বর দেবাদিদেব মহাদেব অর্থাৎ ভগবান শিব। তাই প্রতি মাসের চতুর্দশী তিথিতে বিশেষ করে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে ভগবান শিবের উপাসনা এবং রুদ্রাভিষেক করলে ভগবান শিব প্রসন্ন হন। এবং ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। ঐশ্বর্য ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি হয়।

পূর্ণিমা-

এই তিথির দেবতা চন্দ্রদেব। এঁর পুজো করলে মানুষের সমগ্র সংসার জগতে আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে যাদের চন্দ্রের দশা চলছে, তাদের জন্য পূর্ণিমার ব্রত করে চন্দ্রকে অর্ঘ্য দিলে মানসিক শান্তি ও সুখ বেড়ে যায়। যে সকল বাচ্চা সর্দিকাশি, ঠান্ডা জনিত রোগে প্রায়ই ভোগে তাদের মায়েদের অন্তত এক বছর পূর্ণিমার ব্রত পালন করা উচিত।

অমাবস্যা-

এই তিথিতে পিতৃপক্ষের আধিপত্য। অতএব এই তিথিতে নিজের পিতৃপক্ষের শান্তিলাভ হেতু, তাদের স্মরণ করে গরিবদের অন্ন, বস্ত্র সাধ্যমত দান করলে মানসিক শান্তি ও পিতৃপক্ষের আশীষ প্রাপ্তি হয়। ফলে নিজ কুলের মান, মর্যাদা, ধন-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় এবং সুসন্তানের অধিকারি হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Problems Rashi Tithi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE