শিলচরের একটি এটিএমের সামনে গ্রাহকদের লাইন। মঙ্গলবার স্বপন রায়ের তোলা ছবি।
এই এল, এই উধাও। এমনই ছিল কাছাড়ে আজকের নোট-চিত্র। গত কাল স্টেট ব্যাঙ্ক ও ইউনাউটেড ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিয়েছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা না এলে একটি এটিএম-ও আর চালানো সম্ভব নয়। গত রাতে দুই চেস্টেই টাকা আসে। কিন্তু বেশিরভাগই ছিল ২ হাজারের। সামান্য কয়েকটি ২০ টাকার বান্ডিল। ২ হাজার বা ২০ টাকা— কোনওটিই এটিএমে ঢোকানো যায় না। তবু এ দিন এটিএমের জন্য কিছু ১০০ টাকার নোট বের করেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতে অবশ্য নোট-বদল বা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে গেলে শুধু ২ হাজারের নোট মিলেছে। তাই ছোট নোটের জন্য এটিএমের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন সবাই। স্টেট ব্যাঙ্কের চ্যানেল ম্যানেজার ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, দক্ষিণ অসমের চার জেলায় তাঁদের মোট ২০৮টি এটিএম রয়েছে। তার মধ্যে ১১৮টি কাজ
করে। তার ৫৩টিতে আজ টাকা ঢোকানো হয়।
নোট নিয়ে এত সঙ্কট-সমস্যার মধ্যেও অবশ্য কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। নেই গণ-অসন্তোষও। বরং লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে যারা দু-চারকথা মন্দ বলেন, তাঁরাই টাকা নিয়ে বেরিয়ে মন্তব্য করেন, ‘‘এমন একটা সিদ্ধান্তের প্রয়োজন ছিল।’’ এমনকী, রাজনীতি বোঝেন না যে দিনমজুররা, তাঁরাও কাজের ফাঁকে এ নিয়েই খোশগল্প করেন। তাঁরা খুশি, বড় বড় মালিকরা এখন লুকিয়ে রাখা টাকা নদী-নালায় ফেলতে বাধ্য হবেন। এ বার সরকারি তহবিল চুরি, উৎকোচ আদায়, দুর্নীতি কমবে, এমনই আশা তাঁদের।
ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাকের চার জেলা ও মিজোরাম, মণিপুর মিলিয়ে তাদের মোট ৭৮টি এটিএম রয়েছে। তার মধ্যে ৪২টি কাছাড় জেলায়। ১১ তারিখ থেকেই লক্ষ্মীপুরের এটিএমে টাকা দেওয়া হচ্ছে। গত কাল তাঁদের অন্যান্য জায়গার এটিএমেও টাকা মেলে। এ দিন চালু ছিল আঞ্চলিক অফিস চত্বরের এটিএমটিও।
কিন্তু একই সঙ্গে বা নির্দিষ্ট সময়ে এটিএমগুলিতে টাকা না ঢোকানোয় মানুষ জানতে পারেননি, কখন কোথায় টাকা মিলছে, বা কতক্ষণ পাওয়া যাবে। ফলে এটিএমে টাকা ঢোকাতে দেখলেই শুরু হয় লাইন। খবর ছড়িয়ে পড়লে সবাই যখন আসতে শুরু করেন, তখনই দেখা যায়, টাকা নেই। পরে আর ওই এটিএমে টাকা ঢোকানো হয় না। তখন হয়তো অন্য কোথাও টাকা মিলছে।
এ দিন সকালে স্টেট ব্যাঙ্কের প্রধান শাখার এটিএম-গুলিও বেশ কিছু সময় বন্ধ ছিল। ভোর চারটের আগে থেকে মানুষ এসে এটিএমের সামনে লাইনে দাঁড়ান। আগে ২৪ ঘণ্টা সেগুলি চালু থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে বছরখানেক ধরে রাত ১০টায় জেলার সমস্ত এটিএম বন্ধ হয়ে যায়। খোলে সকাল ৮টায়। বড় নোট বাতিলে টাকার জোগান অনিয়মিত হয়ে পড়ায় এখন ওই সব নিয়মনীতি কাজ করে না।
এ দিকে, জেলার এটিএমগুলিতে ২ হাজার টাকার নোট রাখার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলি কাজে নেমে পড়েছে। আজ লক্ষীপুরে স্টেট ব্যাঙ্কের এটিএম বেলা ২টোয় কিছু সময় চালু ছিল। তখন শুধু ২ হাজার টাকার নোটই দেওয়া হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, চেস্টে থাকা ২ হাজারের নোটগুলি ব্যাঙ্ক কাউন্টারের পাশাপাশি এটিএমের মাধ্যমেও বিতরণ করা হবে।
তাতে সমস্যার সুরাহা হবে কি না এ নিয়ে খোদ ব্যাঙ্ককর্তারাও আশঙ্কায়। তাঁদের কথায়— ‘এখন সঙ্কটমোচন হতে পারে একমাত্র ৫০০ টাকার নতুন নোটগুলি এসে পৌঁছলে। ৫০০ টাকা হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়লে একদিকে যেমন ২ হাজার টাকার খুচরো পেতে সমস্যা হবে না। অন্য দিকে, ১০০ নোটগুলি যাঁরা বিপদের আশঙ্কায় হাতে ধরে রেখেছেন, তাঁরা সেগুলি ব্যবহার করতে শুরু করবেন।’
স্টেট ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার প্রদীপ পালের আশা, দিনতিনেকের মধ্যে নতুন ৫০০ টাকার নোট এই অঞ্চলে ঢুকে যাবে। আর তখনই নোট-আতঙ্ক কমবে।
কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন জানিয়েছেন, যে কোনও ধরনের কর বা রাজস্ব আদায়ে সরকার ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত পুরনো ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত রাতেই তিনি তা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন। ওই নোটগুলি চলবে সরকারি হাসপাতাল, পেট্রোল পাম্প এবং ওষুধের দোকানেও। তবে কোনও ব্যবসায়ী বাতিল নোট গ্রহণ করবেন না, জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy