সুইৎজারল্যান্ড কবে কালো টাকা নিয়ে সাহায্য করবে, তার অপেক্ষায় হাত গুটিয়ে বসে থাকছে না নরেন্দ্র মোদীর সরকার। উল্টে নয়াদিল্লির তরফেই দ্রুত এই বিষয়ে সাহায্য করার জন্য জুরিখের উপর চাপ তৈরি করা হবে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তরফে আজই এ বিষয়ে সুইৎজারল্যান্ড সরকারকে চিঠি লেখা হয়েছে।
গত কাল সুইস সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, তাদের দেশের ব্যাঙ্কে কালো টাকা জমা রেখেছেন, এমন সন্দেহভাজন ভারতীয়দের নামের একটি তালিকা তৈরি করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আজ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, এ বিষয়ে সরকারি ভাবে এখনও সুইস সরকারের তরফে ভারতে কিছু জানানো হয়নি। তবে তার অপেক্ষায় তিনি বসে থাকছেন না। বাজেটের প্রস্তুতি নিয়ে চূড়ান্ত ব্যস্ততার ফাঁকেই আজ জেটলি অর্থ মন্ত্রকের বাইরে এসে সাংবাদিকদের জানিয়ে যান, “সুইস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা যোগাযোগ করছেন। আমরা আজই সুইস কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে সমস্ত তথ্য দ্রুত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি।”
বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে বিদেশের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধার করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে মোদী সরকার যে বদ্ধপরিকর, আজ সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন জেটলি। নয়াদিল্লিতে সুইৎজারল্যান্ডের দূতাবাসের তরফেও জানানো হয়েছে, কর ফাঁকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুইস সরকার ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চায়। এই বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গেও সমন্বয় রেখে এগোচ্ছে মোদী সরকার। আজ কালো টাকার তদন্তকারী সিটকে প্রয়োজনীয় সব নথি দিতে সব ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
ইউপিএ জমানায় এক সুইস ব্যাঙ্কের গচ্ছিত কালো টাকার মালিকদের তালিকা সেই ব্যাঙ্কের এক কর্মচারী চুরি করেছিলেন। সেই তথ্য অন্যান্য দেশের মতো ভারত সরকারের হাতে এসে পৌঁছয়। কিন্তু বেআইনি ভাবে পাওয়া তথ্য বলে সুইস সরকার ওই তালিকার বিষয়ে নয়াদিল্লিকে সাহায্যে রাজি হয়নি। যুক্তি ছিল, স্থানীয় আইনে এ বিষয়ে বাধা রয়েছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম সরকারি ভাবে এই তথ্য দেওয়ার জন্য বারবার সুইস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন। নয়াদিল্লির যুক্তি ছিল, সুইৎজারল্যান্ড ভারতের সঙ্গে করফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনিক ভাবে সাহায্য করার জন্য চুক্তিবদ্ধ। তাতেও ফল মেলেনি। এ বার সুইস সরকারই তথ্য দেওয়ার কথা বললেও জেটলি আগেভাগে চাপ তৈরি করে রাখতে চাইছেন।
মোদী সরকার গঠনের পরে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে কালো টাকা উদ্ধারে প্রাক্তন বিচারপতি এম বি শাহের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন হয়েছিল। বিচারপতি শাহের মতে, সুইস ব্যাঙ্কের তথ্য হাতে এলে সে দেশে ভারতীয়দের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। সুইৎজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ২০১৩ সালে ৪৩ শতাংশ বেড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
আজ কালো টাকা নিয়ে সুইৎজারল্যান্ডের আইনে পরিবর্তন আনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের সরকার। এখন সুইস ব্যাঙ্কে কোনও ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য অন্য দেশের সরকার চাইলে প্রথমে সেই ব্যক্তিকে খবর দেয় সুইস সরকার। কিন্তু পরিবর্তিত আইনে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তথ্য দেওয়ার পরে ওই ব্যক্তিকে জানানোর অধিকার পাবে সরকার। বেশ কয়েক জন ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে এক সঙ্গে খবর দেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরিবর্তিত আইনে সে ক্ষেত্রেও ছাড় পাবে সুইস সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy