গণপতি (বাঁ দিকে) ও বাসবরাজু। —ফাইল চিত্র
জল্পনা ছিল কিছু দিন ধরেই। এ বার তাতে সিলমোহর দিল সিপিআই (মাওবাদী)।স্বাস্থ্যের কারণে মাওবাদীদের সুপ্রিমো মুপাল্লা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতি দলের সাধারণ সম্পাদক পদে ‘স্বেচ্ছায়’ ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর জায়গায় ওই পদে এসেছেন বাসবরাজু ওরফে নামবাল্লা কেশব রাও। দীর্ঘ ২৫ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন গণপতি। বাসবরাজুকে সাধারণ সম্পাদক পদে বসানোর প্রস্তাব দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পঞ্চম বৈঠকে অনুমোদিত হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর পলিটব্যুরো সদস্য থাকা ছাড়াও বাসবরাজু দলের কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের প্রধান ছিলেন। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সিপিআই (মাওবাদী)-র সর্বোচ্চ পদে এই রদবদল গভীর ইঙ্গিতবাহী বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
এক প্রেস বিবৃতিতে সিপিআই (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র ‘অভয়’ গণপতির সরে দাঁড়ানোর খবর জানিয়েছেন। এই প্রেস বিবৃতি আনন্দবাজার ডিজিটালের হাতে এসেছে। ওই বিবৃতিতে অভয় জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে গণপতির স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। তাঁর বয়সও বাড়ছে। এরই পাশাপাশি সংগঠনকে আরও মজবুত বানানোর লক্ষ্যে গণপতি ‘স্বেচ্ছায়’ তাঁর পদ থেকে সরে গিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য দলে দু’নম্বর স্থানাধিকারী বাসবরাজুর নাম প্রস্তাব করেন। কেন্দ্রীয় কমিটি কয়েক দফা আলোচনার পরে সেই প্রস্তাবে সিলমোহর দেয়।
দলের অন্দরে বাসবরাজু কট্টরপন্থী বলেই পরিচিত। পার্টির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামরিক অভিযানের উপরেও কড়া নজর রাখেন তিনি। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মিলিয়ে বাসবরাজুর মাথার দাম ছিল ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক পদে বসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মাথায় দাম হয়ে গেল ৪ কোটি টাকা। গণপতির মাথার দামও প্রায় সমান।
মাওবাদী স্কোয়াডের মহিলারা। —ফাইল চিত্র
আরও পড়ুন: ‘রাম-নামে’ বিজেপির সেয়ানে সেয়ানে কংগ্রেস, তবে অনেক এগিয়ে ছোট দলগুলো
দলের অভ্যন্তরে ও বাইরে, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছেও বাসবরাজুর একাধিক ছদ্মনাম রয়েছে। গগন্না, কৃষ্ণা, বিজয়, কেশব, বিআর, প্রকাশ, দরাপু নরসিংহ রেড্ডি প্রভৃতি। তাঁর বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার কোটাবোম্মালি থানার জিয়ান্নাপেটা গ্রামে। ওয়ারাঙ্গল থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক বাসবরাজু ১৯৮০ সালের পর থেকেই ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’-এ চলে যান। গোয়েন্দাদের কাছে বহু পুরনো ছবি ছাড়া তাঁর সাম্প্রতিক কোনও ছবিই নেই।
পদ থেকে সরে গেলেও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দলের হাল ধরার ব্যাপারে গণপতির ভূমিকার কথা মাওবাদীদের প্রেস বিবৃতিতে সবিস্তার উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৯২-র জুনে তৎকালীন সিপিআই (এমএল পিপলস ওয়ার)-এর সাধারণ সম্পাদক হন গণপতি। পরে ২০০৪-এর ২১ সেপ্টেম্বর পিপলস ওয়ার এবং মাওয়িস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার (এমসিসি) নামে মাওবাদীদের দুই সংগঠন আনুষ্ঠানিক ভাবে মিলে তৈরি হয় সিপিআই (মাওবাদী)। তার পর থেকে দলের সর্বোচ্চ পদে ছিলেন গণপতিই।
জঙ্গলে কড়া নজরদারি মাওবাদীদের। —ফাইল চিত্র
আরও পড়ুন: সিবিআই বনাম সিবিআই, আস্থানার ফাইল বর্মাকে দেখার অনুমতি আদালতের
মাওবাদীদের এই ঘোষণা কপালে ভাঁজ ফেলেছে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের।পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন পর্ব চলছে। আর কয়েক মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে লোকসভা ভোট। এই পরিপ্রেক্ষিতে মাওবাদীদের সামরিক তৎপরতা বাড়বে বলে অনেকেরই আশঙ্কা। মাওবাদীদের দুর্গ বলে পরিচিত ছত্তীসগঢ়। সেখানকার রাজ্য পুলিশের স্পেশাল ডিজি আর কে ভিজ আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘বাসবরাজু সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের প্রধান ছিলেন। ফলে দলের পরবর্তী কার্যকলাপে তার কিছুটা প্রভাব পড়তেই পারে। তবে, বাসবরাজুকে এখন সামরিক লাইনের পাশাপাশি তাঁদের দলের রাজনৈতিক লাইনও ঠিক করতে হবে। তার দায়িত্ব সামলাতে হবে। তাই মাওবাদীরা শুধু সামরিক তৎপরতা বাড়াবে, এমনটা মনে হচ্ছে না। গণপতিকে সরানোর সিদ্ধান্তও আজকের নয়। অনেক দিন ধরেই ওদের এই প্রক্রিয়া চলছিল।’’ পুলিশি তৎপরতা ও অভিযান কি এর পর আরও বাড়বে? ভিজ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy