গুজব এবং জল্পনায় উত্তাল চেন্নাই। কী অবস্থা মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার? চেন্নাই তথা গোটা তামিলনাড়ু জুড়ে আজ বিকেল থেকে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে এই প্রশ্নকে ঘিরে। দু’টি তামিল টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত খবরের জেরে এবং এআইএডিএমকে সদর দফতরে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকতে দেখে দাবানলের মতো ছড়ায় দুঃসংবাদ। শোনা যায়, জয়ললিতা মারা গিয়েছেন। পরে অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে এখনও জীবনদায়ী ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বড় দল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
রবিবার সন্ধ্যায় বড়সড় হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই জয়ললিতার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। ফলে তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই গুজব ছড়াচ্ছিল। আজ বিকেলে দু’টি তামিল টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত খবর সেই গুজবের আগুনে ঘি ঢালে। জয়ললিতা আর নেই, দাবি করছিল চ্যানেল দু’টি। তবে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সে খবর ঠিক নয়। এইমস এবং অ্যাপোলোর চিকিৎসকদের যৌথ দল মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে।
অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
চেন্নাইতে এআইএডিএমকে সদর দফতরেও বিকেলে হঠাৎ দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছিল। সেই ছবিও গুজব ছড়ানোর অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। দলের পতাকা যখন সদর দফতরেই অর্ধনমিত করে দেওয়া হয়েছে, তখন আম্মা আর নেই, স্বাভাবিক ভাবেই এমন গুজব ছড়ায় এআইএডিএমকে-র সদর দফতরের বাইরে। অ্যাপোলো হাসপাতালের বাইরে সমবেত জয়ার হাজার হাজার অনুগামীও অস্থির হয়ে ওঠেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পরে হাসপাতাল থেকে বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পরে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এআইএডিএমকে সদর দফতরেও পতাকা আবার তুলে দেওয়া হয়।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে এআইএডিএমকে সদর দফতরে দলীয় বিধায়কদের বৈঠক শুরু হয়েছে। এই বৈঠকের দিকেও নজর রেখেছে ওয়াকিবহাল মহল। পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে গোটা চেন্নাইকে।
আরও পড়ুন: দল বলছে আম্মা নিরাপদ, হাসপাতাল বলছে অত্যন্ত সঙ্কটে, বিভ্রান্তি চরমে
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার শারীরিক অবস্থা ঠিক কেমন? এ নিয়ে সোমবার সকাল থেকেই চূড়ান্ত বিভ্রান্তি রয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালেই জয়ললিতার বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। কিন্তু, তার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে জয়ার দল এআইএডিএমকে-র তরফে জানানো হয়েছিল, ‘আম্মা’ সম্পূর্ণ সুস্থ, কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবেন। আজও তামিলনাড়ুর শাসক দল জানিয়েছে, সকালে জয়ললিতার হার্ট সার্জারি হয়েছে এবং তিনি এখন ভাল আছেন। কিন্তু অ্যাপোলো হাসপাতালের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি এবং মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থা ‘অত্যন্ত সঙ্কটজনক’।
গত দু’মাস ধরে হাসপাতাল-বন্দি জয়ললিতা। তামিলনাড়ুর সরকার বা শাসক দল এআইএডিএমকে বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কেউই স্পষ্ট করে জানায়নি জয়ার অসুস্থতা ঠিক কতটা। মাঝে-মধ্যে শুধু দলের তরফে দাবি করা হচ্ছিল, আম্মা সুস্থ হচ্ছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এর মাঝে তামিলনাড়ুর একটি উপনির্বাচনে এআইএডিএমকে-র প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য জয়ললিতার সই জরুরি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু জয়ার স্বাক্ষর জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। এআইএডিএমকে নেতৃত্ব হাসপাতাল থেকে জয়ললিতার টিপসই নিয়ে এসেছিলেন। জানানো হয়েছিল, হাতে সংক্রমণ রয়েছে বলে আম্মা সই করতে পারেননি। সম্প্রতি অবশ্য জয়ার সই করা একটি চিঠি এআইএডিএমকে প্রকাশ্যে আনে। ‘আম্মা’ সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এমন বার্তাই তাঁর লক্ষ লক্ষ অনুগামীর মধ্যে চারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো দিকে মোড় নিয়েছে।
সোমবার সকালে বিভ্রান্তি কিন্তু ছড়িয়েছিল জয়ার দল এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাকের জেরেই। এআইএডিএমকে মুখপাত্র সিআর সরস্বতী এ দিন বলেন, ‘‘আজ সকালেই একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে, চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, আম্মা সুস্থ হয়ে যাবেন।’’ তার পর জয়ার দলের আর এক নেতা পি রামচন্দ্রন জানান, আম্মার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। জয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিতে অ্যাপোলো হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন এক কংগ্রেস নেতা। তামিলনাড়ুর মুখ্য সচিব পি মোহন রাও ওই কংগ্রেস নেতাকে নাকি জানান, মুখ্যমন্ত্রী ভাল আছেন। কিন্তু অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সব দাবি নস্যাৎ করে দেয়। মেডিক্যাল বুলেটিন প্রকাশ করে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, সোমবার সকালে জয়ললিতার হৃদযন্ত্রে কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি। তাঁকে একস্ট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন বা একমো নামের একটি জীবনদায়ী ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থা এতই সঙ্কটজনক যে এই একমো ব্যবস্থার মাধ্যমে তাঁর হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের স্বাভাবিক ক্রিয়া নিশ্চিত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চেন্নাইয়ের রাস্তায় জনসমুদ্র, হাই-অ্যালার্টে রাজ্য
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy