Advertisement
১৮ মে ২০২৪
National News

মসজিদে চলছে শিখদের লঙ্গরখানা

শিখদের জন্য মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী মসজিদের একাংশ খুলে দিয়েছিলেন মুসলিমরা। লঙ্গরখানা বানানোর জন্য। আর সেখানেই পাত পেড়ে বসে খাওয়ার জন্য। স্বেচ্ছায়।

ফতেগড় সাহিবের ভিতরে সেই লাল মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত।

ফতেগড় সাহিবের ভিতরে সেই লাল মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
ফতেগড় সাহিব শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:৫৮
Share: Save:

কোনও ঐতিহ্যবাহী মসজিদের ভিতরে শিখদের কোনও উৎসবের জন্য লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে ভারতে, শুনেছেন কখনও?

দেখেছেন কখনও, সেই মসজিদের ভিতরে সার দিয়ে বসে মাথায় পাগড়ি পরে পাত পেড়ে খাচ্ছেন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ?

তিন দিন ধরে এমনটাই ঘটেছে পঞ্জাবের ফতেগড় সাহিবে ঐতিহাসিক লাল মসজিদ চত্বরে।

শিখদের জন্য মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী মসজিদের একাংশ খুলে দিয়েছিলেন মুসলিমরা। লঙ্গরখানা বানানোর জন্য। আর সেখানেই পাত পেড়ে বসে খাওয়ার জন্য। স্বেচ্ছায়।

‘শহিদি জোর মেলা’ উপলক্ষ্যেই ওই লঙ্গরখানার আয়োজন। তিন দিনের লঙ্গরখানা। গুরু গোবিন্দ সিংহের যে সাহিবজাদারা শহিদ হয়েছিলেন, তাঁদের স্মরণেই ওই উৎসব।

পঞ্জাবের ফতেগড় সাহিবে মসজিদটি বানানো হয়েছিল মুঘল আমলের শেষ দিকে। সেটা শেখ আহমেদ ফারুকি সিরহিন্দির নাতি সৈফুদ্দিনের আমল। প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগেকার মসজিদটি বেহাল হয়ে পড়ায় বছর দু’য়েক আগে সেটা মেরামত করেছিলেন স্থানীয় মুসলিমরা।

আরও পড়ুন- বিজেপির গ্বালিয়রে ১২০০ গরুর মৃত্যু, গো-প্রেমীরা কোথায়?​

আরও পড়ুন- ম্যাঙ্গালোরে নিউ ইয়ার পার্টিতে ফতোয়া​

মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর জেলার খামানো সাব ডিভিশনের দু’টি গ্রাম রানওয়ান ও বাথোর বাসিন্দারা সেই ঐতিহ্যবাহী লাল মসজিদ চত্বরে লঙ্গরখানা খোলেন।


প্রতীকী ছবি

রানওয়ান গ্রামের বাসিন্দা চরণজিত সিংহ চান্নি বলেছেন, ‘‘মুসলিমরা স্বেচ্ছায় আমাদের এই অনুমতি দিয়েছেন। তিন দিন হল আমরা এখানে লঙ্গরখানা খুলেছি। আমাদের রানওয়ান আর পাশের গ্রাম বাথোর লোকজন পালা করে ওই লঙ্গরখানা চালাচ্ছি। তিন দিন ধরে আমাদের দু’টি গ্রামের মানুষ এখানে পাত পেড়ে বসে খাচ্ছেন। দু’টি গ্রামের মানুষজন সেখানে পালা করে পরিবেশন করছেন।’’

ইতিহাস বলছে, মুঘল সাম্রাজ্যে যাঁর নাতির আমলে ওই ঐতিহাসিক মসজিদটি বানানো হয়েছিল, সেই শেখ আহমেদ ফারুকি সিরহিন্দি কিন্তু শিখদের তেমন পছন্দ করতেন না। পঞ্চম শিখ গুরু অর্জুন দেবজীর উপর লাগাতার উৎপীড়ন আর তাঁর প্রাণদণ্ডের পিছনে প্রধান ভূমিকা ছিল ফারুকি সিরহিন্দিরই। কিন্তু পরে যখন সিরহিন্দের নাতির সাম্রাজ্য বেদখল হয়ে যায় বান্দ্রা সিংহ বাহাদুরের হাতে, তখন কিন্তু তিনি একটি মসজিদও ধ্বংস করেননি।

পাটিয়ালার পঞ্জাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঐতিহাসিক পরমবীর সিংহ বলছেন, ‘‘একই ভাবে, আফগান অনুপ্রবেশকারী আহমেদ শাহ আবদালির অনুগতদের যুদ্ধে হারানোর পরেও কোনও মসজিদ ধ্বংস করেননি জস্সা সিংহ অহলুয়ালিয়ার মতো শিখ ধর্মীয় নেতারা। শিখদের যুদ্ধটা কখনওই ছিল না মুসলিম বা ইসলামের বিরুদ্ধে। শিখদের লড়াইটা ছিল শুধুই মুঘল সম্রাটদের বিরুদ্ধে।’’

যেখানে ওই লঙ্গরখানা খুলেছেন শিখরা, সেই লাল মসজিদের দায়িত্বে থাকা খলিফা সৈয়দ মহম্মদ সাদিক রাজার কথায়, ‘‘শিখদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা এখানে বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে থাকতেই পছন্দ করি। যদিও অতীতে রাজনীতিকরাই আমাদের মধ্যে ফাটল ধরিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE