আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করব, আপনি কি ওই কাগজপত্র দেখেছেন? আপনি বলবেন, না দেখিনি।
একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই ফোনালাপ নতুন করে দেখিয়ে দিল, এক যুগ পুরনো মামলাটি ঘিরে বিতর্ক এখনও টাটকা, প্রশ্নও বহু।
মামলাটি পুলিশের গুলিতে ১৯ বছরের তরুণী ইশরত জহাঁর মৃত্যু সংক্রান্ত। সাম্প্রতিক এই কথাবার্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক প্রাক্তন অফিসারের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বি কে প্রসাদের। যে বি কে প্রসাদকে কয়েক মাস আগেই ইশরত-ফাইলের হারিয়ে যাওয়া পাঁচটি নথির খোঁজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
ঠিক বারো বছর আগের কথা। ২০০৪ সালের ১৫ জুন গুজরাত পুলিশের গুলিতে মহারাষ্ট্রের ১৯ বছরের তরুণী ইশরত জহাঁ এবং তাঁর তিন সঙ্গী নিহত হন। গুজরাত পুলিশ ইশরতদের লস্কর জঙ্গি বলে দাবি করলেও ইশরতের পরিবারের অভিযোগ ছিল, ভুয়ো সংঘর্ষে খুন করা হয়েছে তাঁদের মেয়েকে।
এর পর সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তে নামে সিবিআই। কিন্তু তদন্ত চলাকালীন বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় ফাঁসাতে সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া প্রথম হলফনামা পাল্টে পরে আরেকটি হলফনামা জমা দেয় সরকার। তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাই দাবি করেন, সরকারের অবস্থান বদলের নেপথ্যে ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তিনি কিছু জানতেন না।
পিল্লাইয়ের দাবি অনুযায়ী সেই কারণেই, প্রথম হলফনামায় ইশরতরা লস্কর জঙ্গি ছিল বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (আইবি) জানালেও, দ্বিতীয় হলফনামায় কেন্দ্র অবস্থান পাল্টে জানায়, ইশরতরা জঙ্গি কি না সে বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। এ প্রসঙ্গে আজ চিদম্বরম জানান, প্রথম হলফনামায় (৬ অগস্ট, ২০০৯) কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান হয়েছিল। কিন্তু সেই তথ্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে সংশয় সৃষ্টি হয়। বিজেপি শিবির সংঘর্ষের যৌক্তিকতার পিছনে ওই রিপোর্টটির উল্লেখ করতে শুরু করে। তাই ধোঁয়াশা দূর করতে দ্বিতীয় হলফনামা (২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯) আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, রাজ্য সরকারকে যে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া হয়েছিল তাতে ইশরতরা যে জঙ্গি সে বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা হয়নি।
সেই হলফনামা পাল্টানো সংক্রান্ত পাঁচটি নথিই ইশরত-ফাইল থেকে লোপাট হয়ে গিয়েছে। বিজেপির দাবি, এই কাণ্ড ঘটেছে ইউপিএ জমানাতেই। মার্চ মাসে সংসদের বাজেট অধিবেশন নথি হারানোর কথা স্বীকার করে নিয়ে তা উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বর্ষীয়ান আমলা বি কে প্রসাদকে। নথি তো উদ্ধার হয়ইনি, উল্টে তদন্ত করতে গিয়ে শিখিয়ে-পড়িয়ে সাক্ষীদের তদন্ত কমিশনের সামনে হাজির করাচ্ছেন তিনি, এখন এই বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছেন অবসরের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ওই আমলা।
কী করেছেন প্রসাদ?
সংবাদপত্রের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তদন্তে নেমে একাধিক ব্যক্তির জবানবন্দী নিয়েছেন প্রসাদ। তার মধ্যে ছিলেন বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রকে কর্মরত অশোক কুমার। যিনি ২০১১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইশরতের মামলার দায়িত্বে ছিলেন। গত এপ্রিলে অশোক কুমারকে ফোন করে প্রসাদ বলেন, তিনি প্রশ্ন করবেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে থাকাকালীন অশোক কি নথিগুলি দেখেছেন? উত্তরে অশোককে বলতে হবে, তিনি তা দেখেননি। ওই আমলা যদি বলেন যে তিনি ওই নথি দেখেছেন, সে ক্ষেত্রে ওই নথি কোথায় গেল তার দায় অশোক কুমারের উপরেই বর্তাবে। প্রসাদের পরামর্শ ছিল, এর থেকে ‘না’ বলাই শ্রেয়। অন্য অফিসারদেরও এই কথা বলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, ফোনে কুমারকে জানান তিনি।
তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আজ তদন্ত কমিশনের সামনে আসা বিভিন্ন অফিসারদের কী প্রশ্ন করা হয়েছিল তাও জানানো হয়। কিন্তু খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পরে অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। চিদম্বরম আজ বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটির মাধ্যমে মিথ্যে চাপতে গিয়েও ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে।’’ তাঁর দাবি, ফাইলগুলো আদপেই ইউপিএ জমানায় হারিয়ে যায়নি। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওই নথি উধাও হওয়ার অর্থই হলো, প্রভাবশালীদের বাঁচাতে গিয়ে গল্প ফাঁদছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আসলে মোদী সরকার হলফনামা নিয়ে একটি ভূয়ো বিতর্ক তৈরি করে মূল বিষয়টি থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে। মূল বিযয়টি হলো, ইশরত ও তার সঙ্গীদের কি ভূয়ো সংঘর্ষে হত্যা করা হয়েছিল? এত বছর ধরে বিষয়টি আদালতে ঝুলে রয়েছে। মামলার রায় আসলেই আসল সত্য প্রকাশ পাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy