পারস্য উপসাগরে ইরানি বাহিনীর হাতে আটক জাহাজ। ছবি সংগৃহীত।
আরব আমিরশাহি উপকূলে ইরানের আটক করা জাহাজে রয়েছেন ১৭ জন ভারতীয়। সেই ১৭ জনের মধ্যে রয়েছেন কেরলের বাসিন্দা শ্যামনাথ। সুদূর পারস্য উপসাগরের হরমুজ় প্রণালীতে আটক হওয়া এমএসসি এরিজ জাহাজে থাকা শ্যামনাথের চিন্তায় ঘুম উড়েছে তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের।
শনিবার পারস্য উপসাগরের বুকে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে একটি ইজ়রায়েলি জাহাজ আটক করে ইরানের বিশেষ বাহিনী ‘রেভোলিউশনারি গার্ডস অ্যারোস্পেস ফোর্স’। হেলিকপ্টার নিয়ে পারস্য উপসাগরের হরমুজ় প্রণালীতে তল্লাশি অভিযান চালানোর সময়েই ইরানি সেনা জাহাজটি ধরে। বন্দুক উঁচিয়ে জাহাজটিকে দাঁড় করায় সেনারা। তার পর হেলিকপ্টার থেকে একে একে নেমে আসেন বিশেষ বাহিনীর সদস্যেরা।
প্রথমে ঘটনার কথা স্বীকার না করলেও পরে জাহাজটি পরিচালনা সংস্থা এমএসসি জানিয়েছে, হেলিকপ্টারে চেপে এসে ওই জাহাজে উঠেছেন ইরানের প্রশাসনের আধিকারিকেরা। জাহাজটি আদতে লন্ডনের জোডিয়াক গোষ্ঠীর। জোডিয়াক গ্রুপ হল ইজ়রায়েলি ধনকুবের ইয়াল অফারের। শুক্রবার দুবাই থেকে জাহাজটি মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। সেই জাহাজে ছিলেন ২৫ জন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জনই ভারতীয়। এ ছাড়াও জাহাজে ছিলেন দু’জন পাকিস্তানি, এক জন রাশিয়ান, চার জন ফিলিপিনো এবং এক জন এস্তোনিয়ান।
কেরলের কোঝিকোড়ের বাসিন্দা বিশ্বনাথন এবং শ্যামলার ছেলে শ্যামনাথ শনিবার থেকেই আটক ইরানি বাহিনীর হাতে। মুম্বইয়ের শিপিং কোম্পানির থেকে ফোন পেয়ে বিষয়টি জানতে পারেন বিশ্বনাথন। কিন্তু এখনও বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি এই বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁদের কথায়, শনিবারই ফোনে কথা হয়েছে শ্যামনাথের সঙ্গে। বেশ হাসিখুশি গলায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছে ছেলে, এমনই জানান বিশ্বনাথন। তার পর কী ঘটে গেল তা বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।
বিশ্বনাথনের কথায়, ‘‘আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। কোম্পানি বলেছে তারা এখনও আমাদের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।’’ তবে এই বৃদ্ধ দম্পতি আশাবাদী খুব শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে মুক্তি পাবেন বন্দিরা।
শ্যামনাথ গত ১০ বছর ধরে এমএসসি অ্যারিস জাহাজে কাজ করছেন। তিনি সেই কোম্পানির এক জন ইঞ্জিনিয়ার। গত বছর সেপ্টেম্বরে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন শ্যামনাথ, এমনও জানান তাঁর বাবা বিশ্বনাথন। শুধু শ্যামনাথ একা নন, ওয়েনাড় এবং পালাক্কাড়ের দু’জন যুবকও আটকে রয়েছেন এমএসসি অ্যারিসের জাহাজে।
ভারত সরকার ইতিমধ্যেই তেহরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, পণ্যবাহী জাহাজ এমএসসি দখল করেছে ইরান। তাতে সওয়ার রয়েছেন ১৭ জন ভারতীয়। কূটনৈতিক ভাবে ইরানের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। নয়াদিল্লিতেও ইরানের দূতাবাসের সঙ্গে কথা চলছে। ভারতীয়দের দ্রুত মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে কথা চলছে।
অন্য দিকে, রবিবার থেকেই ইরান-ইজ়রায়েলের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। রবিবার ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডকে লক্ষ্য করে প্রায় ২০০টি ড্রোন দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। বলা হচ্ছিল, ড্রোনগুলি লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। তার আগেই আমেরিকার সেনাবাহিনী আকাশপথে ড্রোনগুলিকে ধ্বংস করার জন্য গুলি ছোড়ে। একের পর এক ড্রোন নষ্ট করা হয়। আমেরিকার পাশাপাশি ব্রিটেনও এই কাজে ইজ়রায়েলকে সাহায্য করেছে। পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy