Advertisement
০৩ মে ২০২৪
general-election-2019-journalist

দুই অলিম্পিয়ানের লড়াইয়ে লক্ষ্যভেদ হবে কার

দাবার ছকে নয়। আমেরের এই পাড়ায় এবার ভোটে অলিম্পিকের লড়াই। জয়পুর শহর থেকে বেরিয়ে এসে আমের ফোর্ট পার হলেই জয়পুর গ্রামীণ লোকসভা কেন্দ্র শুরু। রাজস্থানে তো বটেই, দেশের একমাত্র এই কেন্দ্রেই দুই অলিম্পিয়ানের লড়াই।

প্রচারে রাজ্যবর্ধন রাঠৌর এবং কৃষ্ণা পুনিয়া (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

প্রচারে রাজ্যবর্ধন রাঠৌর এবং কৃষ্ণা পুনিয়া (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
জয়পুর শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ০১:৫৬
Share: Save:

আমের ফোর্টের ঠিক নীচে ছোট্ট বাজার ভরদুপুরে সুনসান। কাঠের বোর্ড আর ঘুঁটি সাজিয়ে দুই দোকানি দাবা খেলায় মেতেছেন। নাথুরাম মির্ধা উরুতে চাপড় মেরে ‘রাজা সামলাও’ বলতেই জয়রাজ সিংহ পাল্টা চাল দিয়ে বলেন, ‘‘কী যে বলো চাচা। এত সহজে অলিম্পিকের মেডেল জিতবে না কি!’’

দাবার ছকে নয়। আমেরের এই পাড়ায় এবার ভোটে অলিম্পিকের লড়াই। জয়পুর শহর থেকে বেরিয়ে এসে আমের ফোর্ট পার হলেই জয়পুর গ্রামীণ লোকসভা কেন্দ্র শুরু। রাজস্থানে তো বটেই, দেশের একমাত্র এই কেন্দ্রেই দুই অলিম্পিয়ানের লড়াই।

একদিকে বিজেপির রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর। অলিম্পিকে শুটিংয়ে রূপোজয়ী, প্রাক্তন কর্নেল। অন্যদিকে কংগ্রেসের কৃষ্ণা পুনিয়া— ডিসকাস থ্রোয়ার। রাজপুত ফৌজি বনাম জাঠ কিসান-কন্যা। কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতলেও, রাঠৌরের মতো অলিম্পিকে পদক জিততে পারেননি পুনিয়া। কিন্তু লোকসভা ভোটের ময়দানে পুনিয়া শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাঠৌরকে। জাঠ ভোট নিজের দিকে টেনে রাজপুত রাঠৌরকে বিপাকে ফেলতে পুনিয়া বদ্ধপরিকর।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

জয়পুর শহর শেষের পর গ্রামের রাস্তায় নামলেই জলের সঙ্কট। জলের অভাবে চাষবাস মার খাচ্ছে। গোটা রাজস্থানেই বিজেপির এবার প্রধান হাতিয়ার জাতীয়তাবাদ, মোদী জমানায় সেনার বীরত্ব। প্রাক্তন কর্নেল রাঠৌর তাই গ্রামীণ জয়পুরের জলসঙ্কটের সমাধানেও জাতীয় সমাধান খোঁজেন। আশ্বাস দেন, মোদী সরকার কাশ্মীর থেকে পাকিস্তানে চলে যাওয়া জল বাঁধ দিয়ে আটকে দেবে। সেই জল নিয়ে আসা হবে জয়পুরের শুখা জমিতে।

কম যান না পুনিয়াও। রাজনীতিতে আগেই হাতেখড়ি হয়েছে তাঁর। বিধানসভা ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছেন। গলা পর্যন্ত ঘোমটা টানা মহিলাদের জড়িয়ে ধরে পুনিয়া দেহাতি টানে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। জলের সমস্যা রাজ্যের কংগ্রেস সরকার দেখছে।

পাঁচ বছর আগে জয়পুর গ্রামীণ থেকে কংগ্রেসের পোড়খাওয়া নেতা সি পি জোশীকে হারিয়ে সাংসদ হওয়ার পর মন্ত্রী হয়েছেন রাঠৌর। কিন্তু এবার কংগ্রেস যে তাঁর বিরুদ্ধে আরেক অলিম্পিয়ান পুনিয়াকে প্রার্থী করবে, তা বোধহয় ভাবেননি রাঠৌর। ভোটের লড়াই অলিম্পিকের খেলা নয় বলে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেন তিনি। কিন্তু কর্নেলকে জাতপাতের অঙ্কও কষতে হয়।

দাবা খেলার ফাঁকে নাথুরাম মির্ধা বলেন, ‘‘অলিম্পিকের লড়াই নয়। এ আসলে জাঠ বনাম রাজপুতের লড়াই।’’ নাথুরাম নিজে জাঠ। তাঁর হিসেবে, জয়পুর গ্রামীণের প্রায় ১৯ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ৪ লক্ষের বেশি জাঠ। পুনিয়া জাঠ হিসেবে সেই জাঠ ভোট টানবেন। তার সঙ্গে যাদব, গুর্জর, দলিত ভোটও তাঁর ঝুলিতে পড়বে। রাঠৌর ব্রাহ্মণ, রাজপুত দিয়ে তা সামাল দিতে পারবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন।

তবে রাঠৌর জাতপাতের অঙ্ক মানতে চান না। তাঁর লক্ষ্য তরুণ প্রজন্মের ভোট। তাঁর আইপ্যাডে গোটা কেন্দ্রে কোথায় কী কাজ হয়েছে, তার তথ্য ভর্তি। মোদী সরকারের তথ্য-সম্প্রচার, ক্রীড়ামন্ত্রী রাঠৌরের দাবি, আসল প্রশ্ন হল ছেলেপিলেরা এখন সময় নষ্ট না করে খেলাধুলো করছে। আগে এই এলাকায় সেনার নিয়োগ র‌্যালি হত না। এখন হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী সরকার সন্ত্রাসের দমনে, দেশের নিরাপত্তায় কড়া অবস্থান নিয়েছেন। সেটাই আসল। আর পুনিয়া গ্রামবাসীদের বলেন, তিনি পরিবারেরই মেয়ে। ডাকলেই চলে আসবেন। বিজেপির জাতীয়তাবাদের ধুয়োর জবাবে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমরা কি জাতীয়তাবাদী নই? আমরা কি দেশকে ভালবাসি না? বিজেপি জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে মোদী সরকারের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে।’’

দুই অলিম্পিয়ানের সভাতে হাততালি পড়ে। ডাবল ট্র্যাপ শুটার দ্বিতীয়বার লক্ষ্যভেদের স্বপ্ন দেখেন। আর পুনিয়া ভাবেন, তাঁর ডিসকাস-ই সবার আগে গিয়ে পড়বে। (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE