সুমন স্বর্গিয়ারী। নিজস্ব চিত্র।
বাবা কথা দিয়েছিল ডিসেম্বরের জন্মদিনে বাড়ি আসবে। কেক কাটা হবে এক সঙ্গে। বদলে, শিশু দিবসের দিনে, বিশেষ বিমান থেকে নামল বাবার কফিনবন্দি দেহ। ছেলেটা তখনও বাবার কিনে দেওয়া গাড়ি নিয়ে ঘরের উঠোনে খেলতে ব্যস্ত।
শনিবার মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে কর্মরত, ৪৬ আসাম রাইফেলসের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল বিপ্লব ত্রিপাঠীর সঙ্গে ফরোয়ার্ড পোস্টে যাওয়া কুইক রেসপন্স টিমের সদস্য রাইফেলম্যান সুমন স্বর্গিয়ারী সকাল আটটা নাগাদ স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। কথা হয়েছিল মিনিট পাঁচেক। স্ত্রী জুরি জানান, শেষ বার ৮ জুলাই বাড়ি এসেছিলেন সুমন। চলে যান ১৫ জুলাই। তিনে পা দিতে চলা ছেলেটা বাবার জন্য ছটফট করে। সেই কথা শুনে ফোনে সুমন জানান, যে করে হোক ডিসেম্বরে ছেলের জন্মদিনে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবেনই। নেটওয়ার্ক খারাপ থাকায় ফোন কেটে যায়। সুমন জানিয়েছিলেন, “ডিউটি শেষ হলেই ফোন করব।’’ কিন্তু ডিউটি আর শেষ হল না। অন-ডিউটি অবস্থাতেই গুলি, স্প্লিন্টারে ঝাঁঝরা হয়ে যায় ৩৩ বছরের দেহটা। ফোন না পেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছটফট করছিলেন জুরি। ফোন শেষ পর্যন্ত এল। স্বামীর মৃত্যুসংবাদ দিতে।
বাক্সার থৈকারাকুচির কাঁহিবাড়ি গ্রামের বাড়িটায় যেন ১৪ বছর আগের ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। ২০০৭ সালে, এলাকায় উগ্রপন্থী উপদ্রবের বিরুদ্ধে তৈরি শান্তি দলের বাক্সা জেলার সভাপতি ছিলেন সুমনের বাবা কনক স্বর্গীয়ারী। জঙ্গি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করছিলেন তিনি। বাড়িতে ঢুকে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। সেটাও ছিল এক শনিবার। ছেলে ২০১১ সালে যোগ দেন আসাম রাইফেলসে। বিয়ে করেন পাঁচ বছর আগে। মা, স্ত্রী ও শিশুপুত্রের পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন তিনি। ঘটনার খবর পেয়ে শনিবার থেকেই ভিড় লেগে রয়েছে বাড়িতে।
মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে শনিবারের জঙ্গি হামলায় নিহত জওয়ানদের দেহ নিয়ে সেনার বিশেষ বিমান ইম্ফল থেকে গুয়াহাটি বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। কিন্তু বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় তা অসমের যোরহাট বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করল। বিমান ও দেহগুলি রাতে যোরহাটেই থাকবে। সোমবার দেহগুলি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাঠানো হবে। ফলে সুমনের দেহ আগামিকাল
কোকিলাবাড়ি পৌঁছবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy