—ফাইল চিত্র।
মাত্র দু’বছর আগে একটা নজিরবিহীন ঝড়ের সাক্ষী হয়েছিল বিজেপি— ‘আম আদমি ঝ়ড়’। দিল্লি বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭টি দখল করে চমকে দিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরীবালরা। কিন্তু দু’বছর কাটতে না কাটতেই সম্পূর্ণ উল্টো চমক দিল দিল্লি। টানা ১০ বছর দিল্লির তিন পুরবোর্ডে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি আরও বেশি গরিষ্ঠতা নিয়ে আম আদমি পার্টি (আপ) ও কংগ্রেসকে বহু পিছনে ফেলে টানা তৃতীয় বারের জন্য ধরে রাখল ক্ষমতা। দিল্লিতে বিজেপি-র এই জয় প্রত্যাশিতই ছিল, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আপের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং দলীয় কয়েক জন বিধায়কের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দলের ভাবমূর্তিকে ধসিয়ে দিয়েছে। বিকল্প হিসাবে কংগ্রেসও নিজেকে তুলে ধরতে পারেনি। স্বাভাবিক ভাবেই একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠেছে বিজেপি। সেই কারণেই এই বিপুল জয়। তবে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, দিল্লিতে একমাত্র পছন্দ হিসাবে বিজেপি যে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছে, তার সবচেয়ে বড় কারণ হল উন্নয়ন এবং বিভাজনের স্লোগানকে সফল ভাবে মিলিয়ে দিতে পারা।
আপ-এর মতো দলের উত্থান আসলে সিভিল সোসাইটি মুভমেন্ট থেকে। এই ধরনের দলগুলির তেমন কোনও রাজনৈতিক ভিত্তি থাকে না। মূলত ভাবমূর্তির উপর নির্ভর করেই এই দলগুলিকে চলতে হয়। কিন্তু, আপ সেই ভাবমূর্তি বজায় রাখতে পারেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অরবিন্দ কেজরীবাল যখন শুরু করেছিলেন, তখন এই দলের একটা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার একটা প্রত্যয় ছিল। কিন্তু, দিনে দিনে সেই ভাবমূর্তি ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকে। সরকারের টাকা নষ্ট করে কেজরীবাল যে ভাবে সরকারি কাজের প্রচার শুরু করেন, তাতে মানুষ অন্য রকম ভাবতে থাকে। আপ বিধায়কদের একাংশের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠত শুরু করে, তাতে সাধারণ মানুষ নিজেদের প্রতারিত মনে করতে থাকেন। ফলে এই নির্বাচনে গোটাটাই আপের বিরুদ্ধে গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন
দু’বছরেই উলটপুরাণ, বিজেপি ২৭ থেকে ১৮৩, আপ ২৩৯ থেকে ৪৪
উদয়নবাবুর সঙ্গে একমত রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিবাজীপ্রতিম বসুও। আপের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি তিনি এই হারের জন্য তাদের দলীয় কোন্দলের কথাও বলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শুরুর দিকে কেজরীবালের সঙ্গে বিদ্বজ্জনেদের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ছিলেন। কিন্তু, যত দিন গিয়েছে তাঁরা সকলেই কেজরীবালকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এক এক জন বিধায়কের বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। সাধারণ মানুষ এগুলো মানতে না পেরে বিজেপিতেই ঝুঁকেছেন।’’
বিজেপি-র ১০ বছরের শাসন এবং আপের দিক থেকে মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া— এই দুয়ের মাঝে যে ফাঁকটা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করতে পারত কংগ্রেস। কিন্তু, সেটা তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাহুল গাঁধী এবং আপ-এর যৌথ ব্যর্থতার জায়গাটা ভরাট করতে একমাত্র বিকল্প হিসাবে উঠে এসেছে বিজেপি। উদয়নবাবুর কথায়, ‘‘দিল্লির মানুষকে বিজেপি কিছু দিতে পারেনি, এমনটা নয়। গত ১০ বছরে তারা দিল্লিতে জলের সমস্যা-সহ অনেক কিছুই মিটিয়েছে। আর ক্ষমতাবিরোধিতা তখনই কাজ করবে, যখন বিকল্প শক্তি জোরদার হয়। আপ এবং কংগ্রেস সেই জায়গায় আসতে পারছে না। কাজেই এই ফল। আর নেগেটিভ ভোট বলে কিছু হয় না।’’
একটা সময় বিজেপি, মূলত লালকৃষ্ণ আডবাণীরা আগ্রাসী হিন্দুত্বের কথা বলতেন। মেরুকরণের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন তাঁরা। পরে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে, শুধুমাত্র উন্নয়নের কথা বলত বিজেপি। বিশ্লেষকদের মতে, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের জমানায় এই দু’টি বিষয়কে সুনিপুণ ভাবে মেলানোর চেষ্টা হচ্ছে। শিবাজীবাবুর কথায়, ‘‘বিজেপি এখন আগ্রাসী হিন্দুত্ব এবং উন্নয়নকে মেলানোর চেষ্টা করছে। মোদী-শাহ জুটি এখন মধ্য গগনে। বিভাজন এবং বিকাশের রাজনীতিকে তাঁরা সুন্দর ভাবে মিলিয়ে দেওয়ার ফলে বিকল্প রাজনৈতিক অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ল। আর তাতেই দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁদেরই জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy