দিল্লিজুড়ে গেরুয়া ঝড়।
আভাস পাওয়া যাচ্ছিল ভোটের মাসখানেক আগে থেকেই। সেই আভাসকে আরও শক্তপোক্ত ভিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল বুথফেরত সমীক্ষা। রবিবার হওয়া দিল্লি পুরসভা ভোটের পর প্রায় সব সমীক্ষকই বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে রেখেছিল বিজেপি-কে। বুধবার ফল প্রকাশ হওয়া শুরু হতেই মিলতে থাকে বুথফেরত সমীক্ষা। তিন পুরসভা মিলিয়ে মোট ২৭২ আসনের মধ্যে ১৮৩টিতে জিতেছে বিজেপি। কয়েক যোজন দূরে থেকে মাত্র ৪৪টি আসনে জিতেছে শাসকদল আপ। দু’বছর আগের বিধানসভা ভোটে রাজধানীর বুক থেকে কার্যত মুছে যাওয়া বিজেপি এ বার প্রায় একই ভাবে উড়িয়ে দিল আম আদমি পার্টিকে।
উত্তর দিল্লি পুরসভার ১০৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ভোট হয় ১০৩টিতে। বিজেপি পেয়েছে ৬৪টি। আপ ২০টি। কংগ্রেস ১৬টি। দক্ষিণ দিল্লির ১০৪টির মধ্যে বিজেপি দখল করেছে ৭০টি। আপ ১৫টি। কংগ্রেস ১৩টি। পূর্ব দিল্লির ৬৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬৩টিতে ভোট হয়। বিজেপি জিতেছে ৪৯ ওয়ার্ডে। আপ ৯টি এবং কংগ্রেস ৩টি ওয়ার্ডে জিতেছে।
গত বিধানসভা ভোটে দিল্লির তিন পুরসভার মোট ২৭২ ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি-র লিড ছিল মাত্র ২৭টায়। এ বার তা ১৫৬টা বেড়ে হল ১৮৩। আপ গত বিধানসভা ভোটের ফলে ২৩৯ ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল। এ বার ১৯৫টা কমেছে। কংগ্রেসের লিড ছিল মাত্র দুটোয়। এ বার বেড়ে হল ৩২।
কী ভাবে এই ‘ম্যাজিক’ করল বিজেপি? দেশজোড়া বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে হওয়া দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ৭০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩টি জিতে কোনও মতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে বিজেপি। ৬৭টি আসনে জেতে আপ। এবং দিল্লি বিধানসভা থেকে একেবারে মুছে যায় কংগ্রেস। ভয়ঙ্কর ফলাফলের পর থেকেই দু’বছর পরের দিল্লি পুরভোট নিয়ে স্ট্র্যাটেজি তৈরির কাজ শুরু করে বিজেপি। তৃতীয় বারের জন্য দিল্লি পুরসভা নিজেদের দখলে রাখতে বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। এর মধ্যে অন্যতম, গত বারের জয়ী কাউন্সিলরদের কাউকেই এ বারে প্রার্থী না করা। ২০১২ সালের নির্বাচনে ১৩৮ আসন পেয়েছিল বিজেপি। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে সেই জয়ী প্রার্থীদের কাউকেই টিকিট না দিয়ে আক্ষরিক অর্থেই সবাইকে চমকে দেন দিল্লির বিজেপি সভাপতি মনোজ তিওয়ারি। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই আক্রমণ শানায় আপ এবং কংগ্রেস। দাবি করা হয়, দিল্লি পুরসভায় এতটাই দুর্নীতি করেছে বিজেপি যে, কাউকেই প্রার্থী করতে পারছে না। বাস্তবে কিন্তু দেখা গেল, এই সিদ্ধান্তই ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে গিয়ে পড়ল আপ, কংগ্রেসের উপর।
বিজেপিকে সাহসী হতে আরও ইন্ধন যোগায় পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফল। সপা-কংগ্রেস জোটকে ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি। সরকার গড়ে উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং মণিপুরেও। এর পরেই দিল্লিতে আরও বেশি করে ব্র্যান্ড মোদীকে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয় দল। মোদী প্রচারে না এলেও তাঁর মুখোশ এবং ছবিতে ছেয়ে ফেলা হয় গোটা রাজধানী। স্মৃতি ইরানি থেকে রাজনাথ সিংহ— নিজেদের বক্তৃতায় ব্র্যান্ড মোদীকে তুলে আনেন সবাই। অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে, প্রচারে গিয়ে কেজরীবালকে বলতে হয়, “নরেন্দ্র মোদী কিন্তু দিল্লিতে এসে পুরসভা চালাবেন না।”
বিজেপি বনাম আপের এই ধুন্ধুমার লড়াইয়ে অবশ্য সান্ত্বনা পুরস্কার পেয়েছে কংগ্রেস। বিধানসভা ভোটে মুছে যাওয়া কংগ্রেস কিছুটা জমি ফিরে পেয়েছে। তবে তা গত পুরভোটের তুলনায় বেশ কম। গত পুরভোটে ৬৭টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। বিধানসভায় লিড করেছিল মাত্র ২টি ওয়ার্ডে। এ বারে জিতেছে ৩০টি ওয়ার্ডে।
আসন সংখ্যায় বিশাল পার্থক্য থাকলেও শতাংশের হিসাবে কিন্তু কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে আপ। ১৮৪ আসনে জিতে বিজেপির ভোট যেখানে ৩৮ শতাংশ, সেখানে ৪৫ আসনে জয়ী আপ পেয়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা কংগ্রেস পেয়েছে ১৮ শতাংশ ভোট।
আরও পড়ুন: কেজরীর গড়েও গেরুয়া গর্জন, দিল্লি পুরভোটে বিজেপির জয়জয়কার
মোদী হাওয়া, অমিতের ম্যানেজমেন্ট, ১০০% নতুন প্রার্থীতেই বাজিমাত্
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy