Advertisement
১৬ মে ২০২৪
সংসদের যুদ্ধ এ বার ময়দানেও

চলতি মাসের শেষেই বিশেষ অধিবেশনের ভাবনা মোদীর

বাদল অধিবেশন মুলতুবি হল আজ। কিন্তু অনির্দিষ্ট কালের জন্য। খাতায়-কলমে সক্রিয় রইল সংসদ। সরকারি সূত্রের মতে, অধিবেশন এ ভাবে জিইয়ে রাখার পিছনে অন্য ছক রয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। তা হল, আগামী ৩১ অগস্ট থেকে পাঁচ দিনের একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকার।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে  বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি এবং বেঙ্কাইয়া নায়ডু। বৃহস্পতিবার পিটিআইয়ের ছবি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি এবং বেঙ্কাইয়া নায়ডু। বৃহস্পতিবার পিটিআইয়ের ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৩
Share: Save:

বাদল অধিবেশন মুলতুবি হল আজ। কিন্তু অনির্দিষ্ট কালের জন্য। খাতায়-কলমে সক্রিয় রইল সংসদ। সরকারি সূত্রের মতে, অধিবেশন এ ভাবে জিইয়ে রাখার পিছনে অন্য ছক রয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। তা হল, আগামী ৩১ অগস্ট থেকে পাঁচ দিনের একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকার। কংগ্রেস ও বামেদের ‘একঘরে’ করে ওই বিশেষ অধিবেশনে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) বিল পাশ করাতে কেন্দ্র উদ্যোগী হতে পরে বলে সূত্রের দাবি।

আজ বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে সংসদ বসার আগেই এনডিএ-র শরিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক বসেন মোদী। মন্ত্রিসভার সংসদ বিষয়ক কমিটির বৈঠকও হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, অধিবেশন মুলতুবি হয়ে গেলেও আপাতত সংসদ জিইয়ে রাখা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে অরুণ জেটলি অবশ্য বিষয়টি খোলসা করতে চাননি। তবে বলেছেন, জিএসটি বিল শীতকালীন অধিবেশন পর্যন্ত পিছিয়ে গেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এটিকে চালু করা যাবে না। তাই সরকার এই বিল পাশ করাতে বদ্ধপরিকর।

কিন্তু সমস্যা হল, সেই অধিবেশন ডাকা হলেও কংগ্রেস যদি একই ভাবে সংসদ ভন্ডুল করে দেয়, তখন কী হবে? সরকার কি মার্শাল ডেকে কংগ্রেস সাংসদদের বের করে দেবে? মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের সময় ঠিক যা করেছিল কংগ্রেস সরকার?

এ নিয়ে মুখ খোলেননি বিজেপি নেতৃত্ব। তবে এটুকু বুঝিয়েছেন, রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসকে একঘরে করতে তৈরি হচ্ছেন তাঁরা। মোদী আজ দলের বৈঠকে বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস জরুরি অবস্থার মানসিকতা নিয়ে চলছে। রাজনীতিকে একেবারে নিচু তলায় নামিয়ে ফেলেছে। লোকসভায় হার হজম হচ্ছে না। ওদের মুখোশ খুলে দিতে হবে।’’ এর পরেই স্থির হয়, কংগ্রেসের ৪৪ জন ও বামেদের ৯ জন সাংসদের (অর্থাৎ জিএসটি নিয়ে যাঁদের প্রধান আপত্তি) কেন্দ্রে যাবেন মোদী সরকারের মন্ত্রী ও শীর্ষ নেতারা। গিয়ে প্রচার করবেন, কংগ্রেস কেন গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পক্ষে ‘ক্ষতিকর’। বস্তুত, আগামিকালই বিজেপি দেশজুড়ে এ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করবে। কলকাতায় আসছেন দলীয় সাংসদ এম জে আকবর। আর বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে সাংবাদিক বৈঠক করবেন সংশ্লিষ্ট মুখ্যমন্ত্রীরাই।

এ দিকে, দিল্লিতে আজ মোদী বাদে বিজেপি-সহ এনডিএ-র সব শীর্ষ নেতারা বিজয় চক থেকে সংসদের গাঁধীমূর্তি পর্যন্ত ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ শীর্ষক এক মিছিল করেন। মিছিলে ছিলেন সুষমা স্বরাজ। প্ল্যাকার্ড হাতে ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীও। পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘কংগ্রেস দেখাল, একটি পরিবারের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে তারা দেশের স্বার্থ ও নীতিকে জলাঞ্জলি দিতে পারে। এই প্রথম সনিয়া গাঁধীর মতো মূলস্রোতের দলের প্রধান ওয়েলে নেমে এলেন। রাহুল গাঁধী যত বড় হচ্ছেন, তত অপরিক্কতা দেখাচ্ছেন। শুধু আগ্রাসন দেখালেই হয় না, বক্তব্যে ওজন থাকা দরকার।’’

তবে কংগ্রেসের তরফে সুর নরমের কোনও ইঙ্গিত নেই। আজও রাহুল গাঁধী দিনভর মোদী ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ললিত মোদী কাণ্ড থেকে ব্যপম নিয়ে সরব হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছেন। আবার বিজেপি যে কংগ্রেসের গায়ে ‘উন্নয়ন ও সংস্কার-বিরোধী’ তকমা সেঁটে দিতে চাইছে, তার জবাব দিতে বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করানো হয় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে দিয়ে।

চিদম্বরম বলেন, ‘‘পণ্য ও পরিষেবা কর এনেছিল কংগ্রেসই। কিন্তু সে সময় বিজেপি বাধা দিয়েছিল। আজ যে শিল্পপতিরা সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করছেন, তাঁরাই সেই সময়ে বিজেপির সমালোচনা করতেন।’’ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী জানান, জিএসটি নিয়ে কংগ্রেস মূলত ছ’টি আপত্তি তুলেছে। বহু রাজনৈতিক দল, শিল্পমহলের একাংশও এ ব্যাপারে তাদের সমর্থন করেছে। ছ’টির মধ্যে তিনটি প্রস্তাবও সরকার যদি মেনে নেয়, তা হলে এখনও কংগ্রেস জিএসটি বিল পাশ করাতে রাজি। জেটলি অবশ্য আজ বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁরা জিএসটি নিয়ে কংগ্রেসের বিরোধিতার তোয়াক্কা করছেন না। আজ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এখন রাজ্যসভাতেও প্রয়োজনীয় সংখ্যা আছে।’’

অনেকে জেটলির এই মন্তব্যের পিছনে তৃণমূল বা এডিএমকে-র সঙ্গে সমঝোতার ছায়া দেখছেন। তাঁদের মতে, ঘর গুছিয়েই বিশেষ অধিবেশনের কথা ভাবছে কেন্দ্র। বাকিটা নির্ভর করছে আগামী ১৫-২০ দিনের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির উপর। কংগ্রেস এখন সংসদে পাওয়া গতিকে সড়কে নিয়ে যেতে চাইছে। দেখতে চাইছে, বিজেপি এখন কী মনোভাব নেয়। আবার জল মাপতে চাইছে বিজেপিও। তারা জানে, সংসদ থেকে লড়াইটা আপাতত নেমে এল মাঠে-ময়দানে। বিশেষ অধিবেশনের পথ তো খোলা রইলই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE