আবার মনের জোর ফিরে পাচ্ছেন কৌতুকশিল্পী মুনাওয়ার ফারুকি।
ভালবাসার কাছে হার মানছে ‘নফরত’!
হাল না ছেড়ে আবার কণ্ঠ ছাড়ার কথা ভাবছেন মুনাওয়ার ফারুকি। উপচে পড়া ভালবাসা, সান্ত্বনা, শুভেচ্ছা আর ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’-র বার্তা পেয়ে কৌতুকশিল্পী মুনাওয়ার আবার মনের জোর ফিরে পাচ্ছেন। ‘স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান’ হিসাবে আবার মঞ্চে ফেরার সম্ভাবনা একেবারে নাকচ করে দিচ্ছেন না।
উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের হুমকিতে বেঙ্গালুরুতে তাঁর অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় চার দিন আগেই মুনাওয়ার বলেছিলেন, আর নয়। ‘নফরত জিত হ্যায়। আর্টিস্ট হার গয়া।’ কিন্তু গত কয়েক দিনে তাঁকে মুম্বইয়ের শিল্পী জগতের বহু মানুষ বলেছেন, থামলে চলবে না। তাঁর হাত ধরে চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে বলেছেন, ‘লাগে রহো মুনাওয়ারভাই’। আর তাঁকে সাহস জোগাতে অগুণতি ‘জাদু কি ঝাপ্পি’ ভেসে এসেছে।
মুম্বইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিশিষ্টজনের আলাপচারিতার অনুষ্ঠানে মুনাওয়ারও ছিলেন। আর কি সত্যিই মঞ্চে ফিরবেন না—প্রশ্ন করায় মুনাওয়ার করুণ মুখে হাসলেন। তার পর ‘নিশ্চয় পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না’ বলায় হতাশা বেরিয়ে এল। বললেন, “এত সব পুলিশে অভিযোগ, আইন-আদালত সামলাতে আর ভাল লাগছে না। দেখা যাক, এই সব আইনি জটিলতা কী ভাবে কাটানো যায়।’’ এখনও তাঁর বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশে মামলা ঝুলছে। অভিযোগ, তিনি মুসলিম হয়ে হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে রসিকতা করেছেন। মুম্বইয়ের অন্যান্য শিল্পীরা মিলে তাঁকে বলেছেন, মুনাওয়ার আইনি লড়াইয়ে একা একা যুঝতে পারবেন না। সবাই মিলে তাঁকে সাহায্য করবেন। মুনাওয়ার বলছেন, “দেখি পরিস্থিতি কোন দিকে এগোয়। আপনাদের কলকাতাতেই তো ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠান করে এসেছিলাম। তখনও ভাবিনি, এত সমস্যা তৈরি হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের এক উচ্চপদস্থ আমলা মুনাওয়ারকে এসে বলেছেন, তাঁর কন্যা মুনাওয়ারের বিরাট ভক্ত। মেয়েকে দেখানোর জন্য মুনাওয়ারের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন।
এত ভালবাসার পরেও ক্ষতচিহ্ন থেকে যায়। এ বছরের গোড়ায় জানুয়ারি মাসে নিজের জন্মদিন মুনাওয়ারকে ইনদওর সেন্ট্রাল জেলে কাটাতে হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে রসিকতা করার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। ইনদওরের অনুষ্ঠানের আগে হামলা হয়। মুনাওয়ার কৌতুক অনুষ্ঠান শুরুর করার আগেই। সেখানকার বিজেপি বিধায়ক মালিনী গউরের ছেলে একলব্যর দাবি ছিল, তিনি মুনাওয়ারের মহড়া শুনে ফেলেছিলেন। সেখানে তিনি রাম, শিবকে নিয়ে কৌতুক করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় এক মাস পরে জামিন মিলেছিল। ধাক্কা কাটিয়ে আবার শুরু করেন। মহারাষ্ট্র সরকারের স্টেজ পারফর্ম্যান্স স্ক্রুটিনি বোর্ডের সেন্সর সার্টিফিকেট নিয়েই নতুন অনুষ্ঠান সাজিয়েছিলেন---‘ডোংরি টু নোহোয়ার’।
মুম্বইয়ের ডোংরি বললে শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয়, পেন্টাগনেও একটা নাম উঠে আসে। দাউদ ইব্রাহিম ও তার ডি-কোম্পানি। সেই ডোংরি থেকেই স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান হিসাবে উঠে আসা ২৮ বছরের মুনাওয়ারের। মঞ্চে মজা করে বলতেন, ‘শুধু দাউদ! হাজি মস্তান, টাইগার মেমন, উফ্, কী কী সব গ্যাংস্টার দিয়েছি আমরা’।
মুনাওয়ারের জন্ম অবশ্য গুজরাতের জুনাগড়ে। ছোটবেলায় ২০০২-এর গুজরাত হিংসার প্রত্যক্ষদর্শী। কৌতুকের অনুষ্ঠানেই বহু বার বলেছেন, কার্ফু জারি হওয়ায় স্কুলে যেতে হবে না বলে খুব আনন্দ হয়েছিল। মহল্লার ‘হিন্দু আন্টি’ রাতে তাঁর মায়ের কাছে চলে আসতেন। আর সকালে এক ঘণ্টার জন্য কার্ফু শিথিল হত, দুধ-পাউরুটি কিনে আনার জন্য। মুনাওয়ার মজা করে বলতেন, ‘দুধ আনতে গিয়ে কেউ আর না ফিরলে চিন্তা ছিল, দুধ ছাড়া চা খেতে হবে!’
তাঁর পরিবার প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে পারেনি। তাই পাঁচ বছর পরে ভাগ্যের সন্ধানে মুনাওয়ারের পরিবারকে মুম্বই চলে আসতে হয়। কৌতুকের অনুষ্ঠানে ‘মেরা পিয়া ঘর আয়া ও রামজি’ গান নিয়ে মজা করায় তাঁর বিরুদ্ধে রামকে অপমান করার অভিযোগ। কিন্তু নিজের অনুষ্ঠানে মুনাওয়ার মুসলিমদের সন্তানসংখ্যা নিয়েও রসিকতা করেন। আবার জওহরলাল নেহরুকেও কটাক্ষ করেন। আর সর্দার বল্লভভাই পটেল প্রসঙ্গে তীক্ষ্ণ কৌতুকে বলেন, ‘উনি আজ বেঁচে থাকলে সত্যিই ইউনিটি থাকত, শুধু স্ট্যাচু থাকত না!’
‘ইউনিটি’ কি শুধু ‘স্ট্যাচু’ হয়েই রয়েছে? মুনাওয়ারকে এখনও ফেসবুক-টুইটারে আক্রমণ করা চলছে। আর মুনাওয়ার নিজের মোবাইল নম্বর দিয়েও বলছেন, ‘‘প্লিজ়, আর কাউকে নম্বরটা দেবেন না। বুঝতেই পারছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy