—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হচ্ছে উত্তরাখণ্ডে। রাজ্য বিধানসভায় বুধবার এই সংক্রান্ত বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতির কাছে বিলটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। উত্তরাখণ্ডের পুষ্কর সিংহ ধামী সরকার দেশে প্রথম অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করতে চলেছে।
উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় চার দিনের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সেই অধিবেশন শুরু হয়েছিল। বুধবার ছিল তার শেষ দিন। উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার এই অধিবেশনেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল পাশ করাবে বলে শোনা গিয়েছিল। বুধবার সেটাই হয়েছে বিধানসভায়।
বিধানসভায় এই বিল পাশের পর সংবাদমাধ্যমকে মুখ্যমন্ত্রী ধামী বলেন, ‘‘এই আইন সমানাধিকারের কথা বলে। এটি কারও বিরুদ্ধে নয়। এই আইন মহিলাদের জন্য, যাঁরা সমাজে পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হন। এটি তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। বিলটি পাশ হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠাব।’’
উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা ভোটে বিজেপি জিতলেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ধামী। গত বছর ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফেরার পরেই সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তৎপর হন তিনি। উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার আইনি প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনাপ্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে কমিটি গড়ে সে রাজ্যের সরকার। গত শুক্রবার সেই কমিটি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খসড়া রিপোর্ট তুলে দেয়। তার পর এই বিল পাশ হওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা।
সব ধর্মের মানুষের জন্য বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, জমি-সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত এক এবং অভিন্ন আইন প্রচলনের কথা বলা হয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে। সূত্রের খবর, সুপারিশের খসড়ায় ধর্ম নির্বিশেষে পুরুষদের বহুবিবাহ বন্ধ এবং একত্রবাস নথিভুক্ত করার আইনের কথা বলা হয়েছে।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি অনুযায়ী, যদি কোনও যুগল ‘একত্রবাস’ বা ‘লিভ-ইন’ করতে চান, তবে অবশ্যই পুলিশ বা জেলা আধিকারিকদের অনুমতি নিতে হবে। আর যদি তাঁদের বয়স ২১ বছরের নীচে হয়, তবে বাবা-মায়ের সম্মতির প্রয়োজন। ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘রেজিস্ট্রি বিবাহ’ বাধ্যতামূলকের কথা বলা হয়েছে এই বিধিতে। কোনও যুগল ‘লিভ-ইন’ করতে চাইলে প্রথমেই তাঁদের নাম পুলিশের কাছে নথিভুক্ত করতে হবে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কের ‘ঘোষণাপত্র’ সঙ্গে রাখতে হবে যুগলকে। সময় মতো প্রয়োজনে তা দেখাতে ব্যর্থ হলে যুগলের ২৫ হাজার টাকার জরিমানা এবং তিন মাসের জেল হতে পারে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কে থাকা যুগলের যদি সন্তান হয়, তবে শিশুরা আইনি স্বীকৃতি পাবে।
বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও রাজ্যের সকলের জন্য একই নিয়ম বলবৎ করার কথা আছে এই বিলে। দম্পতিকে নির্দিষ্ট সময় ‘কুলিং অফ’ পিরিয়ডে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে এই বিলে সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়ম আরও সহজ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও সম্পত্তির ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়েদের সমান অধিকার থাকবে। জন্ম দেওয়া সন্তান এবং দত্তক নেওয়া সন্তান— দু’জনেই সম্পত্তির ক্ষেত্রে সমানাধিকারী হবে। একাধিক বিজেপিশাসিত রাজ্য উত্তরাখণ্ডের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy