বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে নটবর সিংহ। শুক্রবার শহরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
সদ্যপ্রকাশিত আত্মজীবনী তাঁর এক সময়ের দলনেত্রীর প্রতি যথেষ্ট নির্মম। স্তাবক পরিবৃত হয়ে পড়া, শোনা কথায় বিশ্বাস করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা, মগজে মারপ্যাঁচ, মেকিয়াভেলির মতো ধূর্ততা এমনই নানা বৈশিষ্ট্য তিনি খুঁজে পেয়েছেন এ দেশের অন্যতম ক্ষমতাময়ী রাজনৈতিক নেত্রীর সঙ্গে পরিচয়ের গভীরে। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে চাকরিও খুইয়েছেন। এমন বই-বিস্ফোরণের আঁচ পেয়ে তাঁর বাড়িতে পর্যন্ত ছুটে এসেছিলেন ১০, জনপথ-বাসিনী! কংগ্রেসের নজিরবিহীন দুর্দিনে সেই সনিয়া গাঁধীরই বিকল্প দেখছেন না সেই লেখক!
লেখকের নাম কুঁওয়ার নটবর সিংহ! বইয়ে বিস্তর তোপ দেগেও যিনি আবিষ্কার করছেন, সনিয়া এই মুহূর্তে দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে কংগ্রেসের কয়েক টুকরো হয়ে পড়তে ২৪ ঘণ্টাও লাগবে না!
ইরাকে তেলের বদলে খাদ্য প্রকল্পের বরাত থেকে লাভের গুড় উঠিয়েছিলেন ইউপিএ-১ সরকারের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী নটবর এবং তাঁর ছেলে, এমন অভিযোগ আসার পরে পদত্যাগ করতে হয়েছিল এই প্রাক্তন আমলাকে। সনিয়া সম্পর্কে তখন থেকেই বীতরাগ তিনি। বিপুল ক্ষমতার অধিকারিনী কংগ্রেস সভানেত্রীর বাহ্যিক গাম্ভীর্যের মোড়ক ছাড়িয়ে তাঁর নানা দুর্বলতা কঠোর ভাষায় নটবর চিহ্নিত করেছেন তাঁর আত্মজীবনীতে। তাঁর সেই ‘ওয়ান লাইফ ইজ নট এনাফ’-এর প্রচারে কলকাতায় এসে শুক্রবার সেই নটবরই অকপটে কবুল করে নিয়েছেন কংগ্রেসে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর বিকল্পহীনতা!
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে ঘরে-বাইরে এখন আক্রমণের মুখে সনিয়া-রাহুল জুটি। প্রবীণদের বিদ্রোহ অঙ্কুরে বিনাশ করতে এআইসিসি-র তরুণ সম্পাদকেরা সম্প্রতি পাল্টা আক্রমণের কৌশল নিয়েছেন। এমন ডামাডোলের আবহেই ১০, জনপথকে নিঃসন্দেহে স্বস্তি দেবে নটবরের মন্তব্য! যিনি বলেছেন, “কংগ্রেস ২০৬ থেকে ৪৪ হয়েছে লোকসভায়। সনিয়া আর রাহুল গাঁধী নিজেদের সরিয়ে নিলে ওটা ৪৪ থেকে চারে নেমে আসবে!”
কেন তাঁর হঠাৎ এমন বোধোদয়? নটবর বোঝাচ্ছেন, কংগ্রেস সভানেত্রীর কাজকর্মের সমালোচনা আর দলে তাঁর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা, দু’টো এক জিনিস নয়। নটবরের কথায়, “আমি এখন কংগ্রেসের কেউ নই। তবে আগে অনেক দিন দলটা করেছি। সনিয়া হাল ছেড়ে দিলে পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে কোনও ঐকমত্য কংগ্রেসে হবে? সবাই মানবেন, এমন কাউকে পাওয়া যাবে? বরং, সনিয়াকে বাদ দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসটা কয়েক টুকরো হয়ে যেতে পারে!” কংগ্রেস সভানেত্রীর আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেওয়ার আগে এবং পরে সনিয়া এই দেশকে দু’জন প্রধানমন্ত্রী ও এক জন রাষ্ট্রপতি বেছে দিয়েছেন এমন নজির এ দেশে বিশেষ কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নেই বলেও মন্তব্য করেছেন নটবর। তবে এটা সনিয়ার ছড়ি ঘোরানোর রাজনীতির প্রতি কটাক্ষ না নিছকই তথ্যগত বিবৃতি, ভাঙতে চাননি ৮৩ বছরের প্রবীণ।
সাউথ সিটি মলের এক পুস্তক-বিপণিতে এ দিন সন্ধ্যায় নটবরের সঙ্গে মুখোমুখি আসরের সঞ্চালক রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায় জানতে চান, তাঁর বই বেরোনোর আগে বাড়িতে হাজির হয়ে গিয়ে সনিয়া ঠিক কী লিখতে বারণ করেছিলেন? জওহললাল নেহরুর অকৃত্রিম ভক্ত এবং ইন্দিরা-জমানা থেকে গাঁধী পরিবারের সহচর নটবর কিন্তু রহস্য উন্মোচন করেননি! তিনি জানান, একটি ইংরেজি কাগজে ওই বই সম্পর্কে প্রতিবেদন বেরোনোর পরে প্রিয়ঙ্কা বঢরা তাঁকে ফোন করে দেখা করতে আসতে চেয়েছিলেন। তার পরে হঠাৎই মেয়ের পিছু পিছু চলে আসেন সনিয়া। মুখে হাসি, কথায় গভীর দুঃখপ্রকাশ। নটবরের সঙ্গে অতীতের আচরণের জন্য। সনিয়া সচরাচর কারও বাড়ি যান না। তাঁর ওই আগমনে কিছু বার্তা ছিল, এটুকুই নাকি নটবর বুঝেছিলেন। তিনি বলছেন, “সরাসরি কিছু বলেননি ওঁরা। তার পরে আমি বইয়ে কিছু বদলাইনি। তবে কিছু জিনিস লিখিনি!”
এক হাতে যদি সনিয়ার অনিবার্যতা মেনে নিয়ে থাকেন, অন্য হাতে নরেন্দ্র মোদীকেও এ দিন সার্টিফিকেট দিয়ে গিয়েছেন নটবর। নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ১০০ দিন দেখেই মন্তব্য করা যায় না বললেও উল্লেখ করেছেন, মোদীর ব্রাজিল, তার আগে নেপাল-ভূটান বা হালে জাপান সফর বিদেশনীতির দিক থেকে ভালই হয়েছে। আর যোজনা কমিশন তুলে দেওয়া? নেহরুকে দেশের সর্বকালের সেরা প্রধানমন্ত্রী মনে-করা প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রীর মতে, “আমার অনেক দিন ধরেই মনে হতো, যোজনা কমিশনের আর দরকার নেই। ওটা উঠে গিয়েছে, ভালই হয়েছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy