সুস্মিতা দেব। ছবি: স্বপন রায়।
বিজিতের কাছে বিজয়ীর (আসলে বিজয়িনী) আবেদন, “আপনাকে পাশে চাই।” কন্যা-সম বিজয়িনীকে বিজিতের আশীর্বাদ ও পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস। নির্বাচনী প্রচারের আকচা-আকচির পর সে সব পাশে সরিয়ে রেখে বিজিতের পা-ছুঁয়ে আশীর্বাদ চাওয়ার এই সৌজন্যের ছবিটি অসমের বরাক উপত্যকার শিলচরের। বিজয়িনী কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব। আর বিজিত বিজেপি-র কবীন্দ্র পুরকায়স্থ।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতার দাবি, “আমি ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাসী।” আর সে কারণেই ফল ঘোষণার পর দিন সকালেই তিনি সোজা চলে যান কবীন্দ্রবাবুর বাড়িতে। তাঁকে প্রণাম করে আশীর্বাদ চান। আবদার করেন, ‘‘কেন্দ্রে আপনাদের দল! ফলে বরাক উপত্যকার জন্য বহু কিছু করার সুযোগ রয়েছে।’’ অশীতিপর কবীন্দ্রবাবু তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন।
পুরসভার সাধারণ কাউন্সিলর থেকে পুরপ্রধান। একই সঙ্গে শিলচরের বিধায়ক। এ বার সাংসদ পদে উত্তীর্ণা সুস্মিতা। ১৯৮০ থেকে কংগ্রেস পাঁচ বার শিলচর আসনে জেতে। সন্তোষবাবুই সংসদে এই অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করতেন। বার্ধক্যের দরুন এখন প্রায় বাড়ি-বন্দি তিনি। গত নির্বাচনে টুসকিকে (মা-বাবা এই নামেই সুস্মিতাকে ডাকেন) তাঁর মুখ্য নির্বাচন এজেন্ট করেছিলেন সন্তোষবাবু। নিজে হেরে গেলেও সে দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মেয়ে আজ বিজয়ী, এ তাঁর কাছে বিরাট আনন্দের। তাই ফল প্রকাশের দিন কন্যাকে বুকে জড়িয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সন্তোষবাবু। তখনই সদ্য সাংসদ হওয়া কন্যার আদরের ধমক, ‘‘আজ একদম কান্নাকাটি নয়।’’
সাংসদ সুস্মিতার অগ্রাধিকার কী? সুস্মিতার উত্তর জিভের ডগায়, “মোদীর নামে দেশ জুড়ে পরিবর্তনের ঢেউ। তবে তাতে অসমের বাঙালিদের ভাগ্য যেন বিরূপ না-হয়, সে দিকে সতর্ক থাকব।” সুস্মিতার কথায়, “লখিমপুর আসনে বিজেপি-র প্রদেশ সভাপতি সর্বানন্দ সোনোয়ালের জিতে যাওয়াটা বড় আশঙ্কার জায়গা তৈরি করে দিয়েছে। সর্বানন্দের ধারণা, অসমে যাঁরা বাঙালি, তাঁরা সবাই বোধহয় বাংলাদেশি। মোদীজিরও বোধহয় অনেকটা এমনই ধারণা। তাই বরাকের বাঙালি সুরক্ষাই এই সময়ে আমার সব থেকে বড় কাজ।”
সুস্মিতা জোর দেন, ‘ডি-ভোটার’ বা ‘ডাউটফুল ভোটার’-এর বিষয়েও। অসমের বাঙালি ছাড়া দেশের কোথাও কোনও জনগোষ্ঠীকে এই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে না। পুলিশ যাঁকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করছে, নির্বাচন কমিশন তাকেই ‘ডি-ভোটার’ বলে চিহ্নিত করছে। এতে তাঁর ভোটাধিকার স্থগিত তো হচ্ছেই, ঠাঁই হচ্ছে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’-এ। নামেই ক্যাম্প, আসলে পোরা হচ্ছে জেলে। বরাকে প্রচারে এসে এই নিয়ে স্বয়ং মোদী বিস্ময় প্রকাশ করেন। আইনজীবী সুস্মিতা বিষয়টি নিয়ে এ বার প্রধানমন্ত্রী থেকে বিদেশমন্ত্রী, সকলের সঙ্গেই কথা বলবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy